মাঝে মাঝে মনে হয় যেন ভেঙ্গে যাচ্ছি,একটু ..একটু করে।একটা সময় ছিল যখন না পাওয়াগুলোকে অনেক বেশি কাছের মনে হতো।এখন বুঝি সবটাই ফাঁকি। এইযে এতবেশি ব্যস্ত হয়ে পড়া, এত বেশি মিশে থাকা সমস্তটাই একটা খেলা, বেঁচে থাকার খেলা।আজকাল আর লিখতে ইচ্ছে হয়না। বুকের ভেতর না বলা অনেক কথা,অনেক কষ্ট পৃথিবীর মুখ দেখবার জন্য অস্হির করে তোলে। সে সময়টা আমার নিজেকে খুব অসহায় লাগে। জীবনের তেত্রিশ বছর পার হয়ে এসে একটা বোধ সারাটাক্ষণ সবকিছুকে এলোমেলো করে দেয়। মানুষের কোন মূল্য নেই। মূল্য তার পদবীতে, তার কিছু করতে পারার ক্ষমতায়।আমি একটা মানুষ, যার কথা কেউ না জানলেও কোন ক্ষতি নেই। পৃথিবীতে এমন শতশত মানুষের বাস। তারপরও জানিনা কেন আজ লিখতে ভীষণ মন চাইছে .........
দৃশ্যপট এক -
টিকিট কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন । প্রায় আধা ঘন্টা দাঁড়িয়ে আছি। ঘড়ির কাঁটা তিনটে ছুঁই ছুঁই। কোনরকম ভিড়টা ঠেলে হাতটা সামনে বাড়ালাম। কাউন্টারের পিসিটা হঠাৎ ক্র্যাশ করলো। আমি অস্হির হয়ে উঠি। আজ যে করেই হোক পৌঁছতে হবে। লোহার শিক ঠেলে হাতটা আপ্রাণ বাড়ালাম। ওপাশ থেকে টিকিট দাতা আমার হাতটাকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। টিকিট হবে না, যান ..... এক মূর্হুতে পৃথিবীর সব আলো যেন নিভে গেল। আমি আমার সমস্ত ভুলে গেলাম। আমার শিক্ষা, আমার সম্মান .... হাতটা আবার বাড়ালাম। পর পর আরো দুটো ধাক্কা। ট্রেনটা ছুটছে ........... একটা মুখ চোখের সামনে কেবলই ভেসে উঠলো।আমি কাঁপছি,কেবলই কাঁদছি।
দৃশ্যপট দুই-
শিশুটি ঘুমিয়ে ছিল। ডাক্তার আসলো অনেক দেরীতে। ওরা ঘুমন্ত বাচ্চাটাকে নিয়ে গেল । বাচ্চাটা এক মুর্হূতের জন্য মায়ের মুখের দিকে তাকালো। শিশুটি জানে না তার সাথে কি হতে চলেছে। মা কেঁপে উঠলো।
অপারেশন থিয়েটারের ভেতর থেকে বাচ্চাটির চিৎকার ভেসে আসছে, আমি আম্মুর কাছে যাবো ........আমার মনে হচ্ছিল অপারেশন থিয়েটারের গ্লাসগুলো ভেঙ্গে চুরমার করে দেই। আমি কাঁদছি। নিজেকে এত বেশি অসহায় আমার আর কখনো মনে হয়নি।
দৃশ্যপট তিন-
চায়ের টেবিলে সন্ধ্যায় দুটো মানুষ পাশাপাশি বসে । সামান্য কথা কাটাকাটি। ভারী চেয়ারটা হঠাৎ শূণ্যে উঠে এলো মাথা বরাবর। অন্য মানুষটা তখন ভর্য়াত চোখে পাশের মানুষটার দিকে তাকালো। পাশের মানুষটার চোখ তখন আক্রোশে পরিপূর্ণ। মাথাটা বাঁচাতে যেয়ে চেয়ারটা বাম হাতে এসে লাগলো। পরদিন পরীক্ষা। একটা হাত তখন অসম্পূর্ণ। মাথাটা কাজ করছে না। পরীক্ষা শেষ হবার পাঁচ মিনিট আগে ধরা পড়লো একটার পর একটা পৃষ্ঠা ফাঁকা রেখে লেখা। প্রতিটা প্রশ্নেই একই পূনরাবৃত্তি। মেনে নিলাম।
মাঝে মাঝে ভীষণ পালাতে ইচ্ছে, ভীষণ .........
দৃশ্যপট চার -
ঘুমন্ত শিশুটি বাবার গায়ে পা তুলে দিল। সদ্য ব্যাচেলর লাইফ থেকে উঠে আসা মানুষটা বিরক্ত হয়ে বাচ্চাটার পা টাকে প্রবল আক্রোশে চেপে ধরলো। মায়ের বুকে তখন ঘৃণার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। প্রতিবাদ করতেই ............সেদিন সত্যি সত্যিই পালাতে চেয়েছিলাম। সবকিছু ছেড়ে, এমনকি পৃথিবী থেকেও । প্রিয় বন্ধুটিকে লেখা বার্তায় সমস্তই ছিল। ছিলনা শুধু ঘটনার নেপথ্য।
দৃশ্যপট পাঁচ-
মধ্যরাত আর হাজার বছর ধরে ...............প্রচন্ড শব্দে ছিটকে পড়লাম।মাথার একপাশ আর কনুইটা আবারো রক্তার্ত হলো।
দৃশ্যপট ছয়-
রাত জেগে প্রচ্ছদ ডিজাইন করছি। হঠাৎ সেভ করতে যেয়ে পিএসডি ফরম্যাট জেপিজি হয়ে গেল। অডিটর সাহেব ভাবলেন কাট-কপি-পেস্ট। প্রযুক্তি কথনের সেই ছবিটা পৃথিবীর মুখ দেখলো না। মেনে নিলাম ..........
দৃশ্যপট সাত-
হার্ড ডিস্কটা ক্র্যাশ করলো। এমনকি মোবাইলটাও চোরের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেলনা। ছবি, প্রিয় গান, সমস্তই ওলটপালট। অর্ন্তজালের নিক, পাসওয়ার্ড সমস্তই মন থেকে মুছে গেল। কিছু্তেই তাকে আর মনে করতে পারিনা। ভাবলাম এটাই স্রষ্টার ইচ্ছে যেন কিছুতেই ফিরতে না পারি ...