সময়টা জুলাইয়ের মাঝামাঝি। ইলেকট্রিসির অফলাইন ম্যাসেজ কতক্ষণ ধরে বেজেছে জানি না, টানা দীর্ঘ ভিড় শেষে একটু হাল্কা , ফাঁকা চেয়ারগুলোর একটাতে একটা মানুষ এসে বসলেন। ভারী চেহারা, বয়সটা অনেক, কিন্তু ঠিক কত ঠাহর করা যায় না। আমার সামনে একটুকরো কাগজ রেখে বললেন, দ্যাখেন তো আমার টাকা টা এসেছে কিনা। আমি বোঝার চেষ্টা করলাম ঠিক কি হবে। বাঁকাচোরা লেখা.......জানতে চাইলাম, আপনার এস.এম.এস আমাকে দেখাতে পারেন ? মানুষটা বিরক্ত হলো। ম্যাসেজ সো করতে হবে কেন ? এমনিতে বয়স্ক মানুষ তার উপর রাগী। নিজেকে সামলে নিয়ে আবারো বোঝার চেষ্টা করলাম একচেন্জ হাউজটা কি হতে পারে। নামটা দেখে সন্দেহ হলো ঠিক একই পরিমাণ টাকা একই নামের ব্যক্তি কয়েক দিন আগে নিয়ে গেছে। ভেতরটা কেঁপে উঠলো, ভুল লোককে পেমেন্ট দেইনি তো? সন্দেহ জনক চোখে ঘাঁটাঘাটি শুরু করলাম।একসময় বলেও ফেললাম কিছুদিন আগে এই নামে একজন এসেছিল। উত্তরে লোকটা বললো, এই নামে বাংলাদেশে একজনই আছে। আমি চোখতুলে তাকালাম। ভাবলাম , যত বড় ব্যক্তিই হোক না কেন একই নামে আরেকজন তো থাকতেই পারে।। যাবার সময় লোকটা আমার হাতে একটা কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বললো, আশা করি সামনের দিন আমার পরিচয় আর দেয়া লাগবে না। স্কুলে পড়া সেই গল্পটার কথা মনে পড়ে গেল। তিনটি প্রশ্নের উত্তর আর ফেরেশতা মিকাইলের কাহিনী। নামটা মনে করতে পারছি না। হেড অফিসে ফোন করলাম। কেউ একজন ধরলো । আমি আশন্কিত গলায় জানতে চাইলাম, Pls first confirm me whether it has been paid or not ? হেডঅফিস থেকে আশ্বস্ত করলো এখনো পেমেন্ট হয়নি। ফান্ড শর্টেজের কারণে আগামী কাল পেমেন্ট হবে। বুক ভরে শ্বাস নিলাম। ফোন করলাম। টাকা তোলার জন্য যা যা প্রয়োজন তাকে বলা হলো। উত্তরে যা শুনলাম তাতে ক্ষত বাড়া বৈ কমলো না। মুক্তিযুদ্ধের বিশাল একটা দায়িত্ব যার কাঁধে ছিল তার বাংলাদেশের কোন ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট নেই। ভোটার আইডি আছে কিনা জানলে চাইলে বললেন, আমার আইডি আপনাদের এমডি দেবেন। আমি রাষ্ট্রপতি কে হাজির করতে পারি । মনটা খারাপ হলো। যদি বড় বড় লোকদের জন্য আইডি দরকার না হয় তবে কেন আনুষ্ঠানিক ভাবে রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান আইডি করলেন। কেন বাংলাদেশ ব্যাংক আইডি ছাড়া এ্যাকাউন্ট খুলতে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে ? কেন পেমেন্ট নিতে আইডির ফটোকপি লাগে ? রাজনৈতিক জটিলতা এড়াতে তাকে আইডি ছাড়াই পেমেন্ট দেয়া হয়। কিন্তু আমি ছোট্ট একটা মানুষ , ছোট্ট এই মনে সেই প্রশ্নটার উত্তর কেবলই খুঁজে ফিরি সেই লুঙ্গি পরা লোকটার কি দোষ ছিল যে ভোটার আইডি আনতে না পারায় সূদুর গ্রাম থেকে শহরে এসে আবার বাড়ি ফিরে যায় ? নাকি রাষ্ট্রপতিকে এনে হাজির করাবার ক্ষমতা তার নেই ?
বছর দুয়েক আগে খুব প্রিয় একটা মানুষ আমার লেখা কয়েকটা লাইন পড়ে ভেবেছিল, খারাপ ব্যবহার করলেই বুঝি আমি দুরে সরে যাবো। কিন্তু বাস্তবতা এই , যাদের খারাপ ব্যবহারে মনে হয় দু'পায়ে মাড়িয়ে যাই শেষমেষ তাদের কাছেই পদানত হতে হয়। শুধু মনে মনে বলি, তোমাদের জন্য স্রষ্টাই যথেষ্ট, যেখানে কোন পরিচয়ই কোন কাজে আসবে না । ভাল মানুষ না হলে।
Colou illusion
-
আমাদের চারপাশের সবকিছুই রঙিন, কিন্তু কখনো কখনো আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গির কারণে
একই দৃশ্য কারো কাছে মনে হয় রঙিন, কারো কাছে ধূসর আবার কারো কারো কাছে সেই
একই...
15 years ago
2 comments:
অনেক সুন্দর লিখেেছন।
Onek sundor laglo ei blog ti , thanks api for write this post.
Post a Comment