Small journey

ছোট ছোট ঢেউ জুড়েই সুনামীর সৃষ্টি হয়

Showing posts with label My writings. Show all posts
Showing posts with label My writings. Show all posts

আমার কথার প্যাঁচাপেঁচি

(শরীরটা ইদানীং ভাল যাচ্ছে না। প্রায়শ:ই অসুস্থতা আমার দেহের খাঁচায় ভর করে। সময় তার মত করেই বয়ে যায়, আর আমি আমার মতই থাকি । সেই একঘেঁয়ে ক্লান্তিকর জীবন। মাঝে মাঝে মাথার ভেতর কথারা বেড়াতে আসে। আমি তাদের কাগজে বসতে দিয়ে আপ্যায়ন করি। মনের মাধুরী মিশাই। তারা আস্তানা গাঁড়ে। কখনো কখনো তাদের আকাশের ঠিকানায় প্রমোদ ভ্রমণে পাঠাই । আজো একদলকে পাঠাচ্ছি । একটু বাতাস খেয়ে আসুক ।)



-জরি , ঐ জরি, ঘুমাইছস?
-ক্যাডা? ভেতর থেকে ফিসফিস করে কেউ বলে ওঠে। বাইরে আরেকটা ফিসফিসানির শব্দ ।
-আমি রফিক, বাইরে আয়, কতা আছে।
-কি কতা রফিক ভাই?
- বাইরে না আইলে কেমতে কই?
ফকফকে জ্যোৎস্নায় একটা ছায়ার্মূতি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে।বাঁশের ঝোপে খসখস শব্দ হয় । কাঁটাঝোপের আড়ালে পাতারা কানাকানি করে। কঞ্চি লতারা জরির আঁচল চেপে ধরে। আবছা আলোয় কচি বাঁশের শাখাগুলো আকুল আবেদন জানায়। যেন চুপিচুপি বলে ওঠে যাসনে।


-জলদি কও রফিক ভাই, মায়ে টের পাইলে সর্বনাশ হইয়া যাইবো।
-খ্যাতা পোড়াই তোর সর্বনাশের । চল নদীর ঘাটে যাই।
-না রফিক ভাই, আইজ ছাড়ান দেও। কাইল আমাক দেখবার আইসবো।
-দেখবার আইসবো মাইনে ? কারা দেখবার আইসবো, ক্যান দেখবার আইসবো ? রফিক খেঁকিয়ে ওঠে।
-বুড়িমারী থাইক্যা কারা জানি , মায়ের দূরসর্ম্পকের ভাইস্তা।
-আহুক গিয়া, দেহি কুন শালার কত মুরোদ, আমাক ছাড়ি তুই কই যাবি ? জরি, চল আমরা পলাই যাই। দেহিস, আমি তোর কোন অযত্ন করুম না। তুই সুখেই থাকবি। রফিক জরির হাতটা চেপে ধরে।
-এইডা কি কও রফিক ভাই, আমি যদি তোমার লগে যাই তয় মাইনষে আমার বাপ-মায়রে দুষবো না? কইবো , কেমন মাইয়া প্যাডে ধরছিলা, মুখে চুনকালি মাখাইয়া পলাইছে। আতুর ঘরে গলা টিইপ্যা মাইরা ফ্যালাইতে পারো নাই মিয়া? তহন আমার মা-বাপ গ্যারামে মুখ দেখাইবো ক্যামতে? তুমি যাও রফিক ভাই। সবের কপালে সবতে হয় না। তুমি আমারে দুর থাইক্যাই ভালবাইসো। ঘর সংসার কইরা সুখি হইবার চেষ্টা কইরো। তাইলেই আমি সুখি হমু।
- তুই এইডা কইবার পারলি জরি? আমি তরে ছাইড়া আরেকজনের লগে বিয়া করুম? তুই আমাক এইডা কইবার পারলি?
-ক্যান পারুম না কও। তোমারেও তো তোমার বাপ-মা কষ্ট কইরা মানুষ করছে। তাগোরে তুমি কষ্ট দিবার চাও? তাছাড়া তুমি তো এহন আর মানুষ নাই , মদ, জুয়া ,মাইয়া মানুষ .......... জরি কথা শেষ করে না ।
-এইডা আমার ব্যাপার, তুই যাবি কিনা ক? নাইলে কিন্তু........
-নাইলে কি রফিক ভাই?
-সেইডা সময়ে ট্যার পাবি ।
-রফিক ভাই তুমি এমুন বেবুঝ হইয়ো না। আমি তোমার লগে যাইবার পারুম না। মনে লও এইতেও তোমার আমার ভালা।
-তুই যাবিনা?
-না রফিক ভাই, আমারে তুমি ক্ষমা করো।
-আইচ্ছা, দেইখ্যা নিমু। ধুপধাপ শব্দ তুলে রফিক চলে যায়। ওর যাবার পথে জরি অপলক চেয়ে থাকে। এই মানুষটাকে ও কি ভালই না বেসেছে। ইস্ রফিক ভাই যদি একটা কাম জুটাইতো, নেশাটেশা না করতো, তাইলে বাপ-মা নিশ্চয় অমত করতো না। মেম্বারের ছাওয়াল, চেষ্টা করলে একটা কিছু নিশ্চয় জুটতো। কত শান্ত ছিল রফিক । পান সিগারেটের ধারে কাছে যেতো না । হঠাৎ কি হলো নেশা ধরলো, সাথে মেয়ে মানুষ। জরি কতবার বোঝাতে চেয়েছে এসব ভাল নয়। রফিক বুঝতে চায়নি। উল্টো ওকে ফুসলিয়েছে পালিয়ে যাবার জন্য । দীর্ঘশ্বাসকে বাতাসে উড়িয়ে জরি ঘুমাতে যায়। সে অন্যের ঘরের ঘরণী হবে হয়তো এটাই স্রষ্টার নিয়তি।

কাক ডাকা ভোরে জরির ঘুম ভেঙ্গে যায়। তবুও বিছানা ছেড়ে উঠতে মন চায় না। থাক না, আজ না হয় একটু দেরী করেই উঠলো, বাপের বাড়িতে আজই তার শেষ শয়ন, কাল যে জরী এখানে আসবে সে হবে অন্য কেউ।
-জরি, উঠ মা, এত বেইল কইরা ঘুমাইতে নাই, শ্বশুর বাড়ির লোকে মন্দ কইবো। মাইয়া মানুষ যত সহাল সহাল উঠবো ততই ভালা। মায়ের ডাক শুনে জরি নড়েচড়ে বসে। এখনো যাদের সে দেখেনি, জানেনি, সেইসব মানুষকে খুশি করার ট্রেনিং সে ঠিকানায় পৌছাঁবার আগেই শুরু হয়ে গেছে। জরির বুকটা ধড়াস করে ওঠে। সত্যিই কি ওখানে সবাই গালমন্দ করবে। পায়ে আলতা চড়িয়ে, মেহেদীর রঙয়ে হাতদুটো রাঙিয়ে একহাত লম্বা ঘোমটা টেনে জরি শ্বশুর বাড়ি চলে গেল। তালগাছের নিচে দাঁড়িয়ে ঝাপসা ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে রফিক তার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থাকে ।


চারপাশে ছোট-বড় অনেকে ভিড় করেছে নতুন বউ দেখবে বলে। দুটো শিশু ঠেলাঠেলি করছে
-সর , সর । আমার নতুন মামী। পাশের শিশুটি তখন মুখ ভেংচে জানান দিচ্ছে নববধুটি তারও আত্নীয়া।
-তর মামী আমার কি লয়? আমার চাচী । আমারডা বেশি আপনার। কি আশ্চর্য পৃথিবীর নিয়ম । কয়েক মুহূর্ত আগেও জরি ছিল শুধু একটি মেয়ে। তিনবার কবুলের সাথে সাথে কত আত্নীয়ের বাঁধনে বাধাঁ পড়ে গেছে । কত দায়িত্ব এখন তার। ভাবলেই মাথাটা ঘুরে আসে। একদিন এই শিশুদের মত জরিও অপেক্ষায় থেকেছে নতুন বউয়ের আগমনের। গ্রামে কারো বিয়ে হলেই জরির চোখে ঘুম থাকতো না। কারনে অকারনে বিয়ে বাড়িতে ঘুরঘুর করতো। ঔৎসুক চোখে অপেক্ষায় থাকতো কখন আসবে নতুন বউ। শাড়ি গহনার আড়ালে ক্লান্ত-ঘর্মাক্ত মুখটাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হতো। বুকে খেলা করতো চাপা উত্তেজনা। আর ছোট ছোট দীর্ঘশ্বাসকে বাতাসে ভাসিয়ে সেও স্বপ্ন দেখতো এমন একটা দিনের। জানতে ইচ্ছে করতো আগাগোড়া সাজানো গোছানো মানুষটার বুকের ভেতরে কেমন লাগছে । অথচ জানতো না জীবনের মঞ্চে এ এক আরেক গল্প পাঠের অভিষেক। আজ কাঁচের এধারে দাঁড়িয়ে অনুভূতির কোন রংই সে দেখতে পায়না। সবকিছুকে কেমন ক্লান্ত , বিষন্ন লাগে। কেউ একজন এগিয়ে এসে কোলে তুলে নেয়।
-আরে নয়া ভাবী যে দেহি এহেবারেই শুটকি । তালোই সাব মনে লয় ঠিকমত খাইবার দেয় নাই। আশেপাশের লোকজন হেসে ওঠে। জরির বুকটা বির্বণ হয়ে যায়। এ কেমনতর অপবাদ।
বৃদ্ধামত এক নারী এগিয়ে আসে। পাশ থেকে কেউ একজন বলে ওঠে, তোমার শাশুড়ি। কদমবুসি করো। জরি মাথা নামিয়ে কদমবুসি করে। বৃদ্ধা মিষ্টি মুখ করায়।
-আরে আরে টেকা কই , টেকা। শাশুড়িরে কদমবুসি করার টেকা দিবা না ? খালি হাতে কি কদমবুসি হয়। না বউয়ের বাপ-মা দেহি কিছুই শেখায় নাই। কোন এক আত্নীয়া বলে ওঠে।
-থাক, থাক অহন ঐসব বাদ দেও। জলিলের মা তুমি বউরে কোলের উপর বসাও। সহানুভূতির সুরে কে যেন বলে ওঠে। জরি তাকাতে সাহস পায়না। পাছে কোন ভুল হয়ে যায়। অথচ মুখটাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হয়। একটা মাদুরের উপর বসে জরির শাশুড়ি জরিকে হাঁটুর উপর বসায়। তারপর একটা পানের ভেতর একটা মিষ্টি পুরে জরিকে খেতে বলে। জরি বুঝতে পারে না কি করবে। কথামত পানটাকে মুখের ভেতর পুরে চিবানোর চেষ্টা করে। বিকৃত এক স্বাদ জরির গলা বেয়ে বুকের কাছে হঠাৎ আটকে যায়। জরি উগড়ে দেয় সবকিছু। আর তখনই আশেপাশ থেকে গুন্জন আসে , বউয়ের ধৈর্য্য দেহি এহেবারেই নাই। ও জলিলের মা কি মাইয়া ঘরে আনলা। আমগো জলিলের তো এহেবারে সাড়ে সর্বনাশ। জরির কানদুটো ঝাঁ ঝাঁ করে ওঠে।

বিয়েবাড়ির সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে জরিকে ঘুমাতে দেয়া হয় এক বিশাল ঘরে। যত রাজ্যের জ্ঞাতি দাদী নানী চাচী মুরুব্বী মহিলাদের বিশ্রামস্থল। ক্রমাগত পান চিবানোর শব্দ, বাতের ব্যথায় গোঙরানি, নাক ডাকার ফোঁসফোঁস শব্দ জরির রাতের ঘুম কেড়ে নেয়। সেই মানুষটাকে কোথাও দেখতে পায় না যার সাথে তার সারাটা জীবন তিন কবুলের বন্ধনে বাধাঁ পড়ে গেছে। নির্ঘুম চোখে জরি এপাশ ওপাশ করে। অথচ এই রাতটাকে নিয়ে সে কত স্বপ্নই না দেখেছিল। মঞ্চের উপরের দৃশ্যটাই সে সবসময় দেখেছে। পর্দার আড়ালের পৃথিবী তার অচেনা।

বৌভাত শেষে পড়ন্ত বিকেলে গরুর গাড়িতে দুলতে দুলতে জরি বাপের বাড়ির পথে রওয়ানা দেয়। সামনে দিকে মুখ করে তার স্বামী বসা। এপাশে ঘোমটার আড়ালে জরি মেঠো পথ ধরে চেনা গাছগুলোকে খুঁজতে থাকে। কাল রাতের আঁধারে কিছুই দেখতে পায় নি। বিকেলের শেষ আলোয় দূরের ধানক্ষেতটাকে মনে হয় বিশাল এক সবুজ শাড়ি। তারই পাশঘেঁষে সাদা আলের রেখাকে মনে হয় চওড়া পাড়। ইচ্ছে করে সেই বিশাল শাড়িটায় শরীরটাকে জড়িয়ে দিগন্তের শেষে হারিয়ে যায়।
-আরে ঐযে অরা সব আইয়া পরছে। মায়ের গলার স্বর শুনে জরি সম্বিৎ ফিরে পায়। দৌড়ে মায়ের কাছে যায়।
-মাগো।
- ধুর পাগলি। এইতো আমি। মা বুকে জড়িয়ে নেয়। মাত্র একরাত, একদিন । তাতেই মনে হচ্ছে কত যুগ পরে জরি ফিরে এসেছে।

বাতাসে ভ্যাপসা গরম। টিনের চালে ঘাম বাষ্প হযে উড়ে গিয়ে শুকিয়ে যায়। সে বাষ্পে মেঘ তৈরী হয় না। শুধু ঘরের ভেতর জেগে থাকা দুটি শরীরে বৃষ্টি বৃষ্টি খেলা করে । ঢেউ তোলে, ভেঙ্গে যায়, গুঁড়িয়ে দেয়। আজ জরির বাসর রাত। বিবাহিত জীবনের বহু কাঙ্খিত রাত। ঢেউ তুলে বাঁধ ভেঙ্গে একসময় সব খেলা শেষ হয়। পাশের মানুষটি ক্লান্ত হয়ে ঘুমের রাজ্যে পা বাড়ায়। অন্ধকারে আরেকটা বুকে তখন লাল-নীল-ছাই তুষের আগুন জ্বলে। মনে হয় অন্ধকারের ভেতর থেকে লাল-নীল হাসির প্রতিধ্বনি তার ঘরের চালে টুংটাং করে বাজছে। দাঁতে দাঁত চেপে রফিক বিছানায় ছটফট করতে থাকে। টিনের চালে হাসির প্রতিধ্বনি প্রবল থেকে আরো প্রবল হয়। লাল শাড়ীর আচঁল, পদ্ম ডাটার মত নরম শরীর হাতছানি দেয়। রফিক ছুটে বাইরে বেরিয়ে আসে।

মুয়াজ্জিনের ঘুম ভাঙ্গতে এখনো বাকি । জরি বিছানা ছেড়ে নেমে যায়। মনে হয় শরীরের ভাঁজে ভাঁজে কে যেন ভালবাসার করাত চালিয়েছে। নিজের শরীরটাকে অচেনা মনে হয়। ক্লান্ত লাগে। ইচ্ছে করে পদ্মপাতার মত পুকুরে একটু ভেসে থাকতে। একটু একটু দুলতে দুলতে জরি পুকুর ঘাঁটে যায়। ভালবাসার আদরগুলোর সুগন্ধ পুকুরের পানিতে আলতো আলতো করে ছড়াতে থাকে। পদ্মডাটাগুলোর দিকে তাকিয়ে নিজের মনেই হেসে ওঠে । একটু আঙ্গুল ছুঁয়ে দেয়। আনমনে বলে ওঠে , অমন বেহায়ার মত চাইয়া থাহিস না, আমার শরম করে না বুঝি ? পদ্মডাটারা দুলে উঠে নিজেদের বেহায়ত্ব প্রমাণ করে । কিংবা কে জানে তারাও জরির গায়ে ভালবাসার পরশ দিতে না পেরে ঈর্ষান্বিত হয়।

-জরি । এই জরি । গলার আওয়াজ শুনে জরি চমকে ওঠে। বুকের ভেতর টা কেঁপে ওঠে। দেহের সবটুকু শক্তি দিয়ে পদ্মডাটাগুলোকে চেপে ধরে। কে ডাকে তাকে ?কিছু বুঝে ওঠার আগেই শক্ত দুটো হাত জরিকে পুকুরের নিচের তলার দিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। জরি পদ্মডাটাগুলোকে আরো প্রবল ভাবে চেপে ধরে ওপরে ওঠার চেষ্টা করে। পারে না কিছুতেই। পদ্মডাটাগুলো আরো জড়িয়ে যায়। পুকুরের পানিতে ঝপঝপ শব্দ হয়। মায়ের ঘুম ভেঙ্গে যায় । কোন এক মিষ্টি রাতের কথা মনে করে মা আবার ঘুমিয়ে পড়ে ।

দিনের আলো ছুঁয়েছে ভোরের আকাশ। সকালের প্রথম সূর্য সহানুভূতির চাদর বিছিয়ে একে একে ছুঁয়ে যায় ঘাস, মাছ, পুকুরঘাট । শীতল পানি একটু একটু করে উষ্ণ হতে থাকে। ঠান্ডা পানিতে ভেসে থাকা উষ্ণ দেহটা আস্তে আস্তে শীতল হতে থাকে। সেই সাথে শীতলতা ভর করে ভালবাসার ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে । রফিক সম্বিৎ ফিরে পায়। জরির দেহটার দিকে অপলক চেয়ে থাকে। কি করেছে সে । ভালভাবে বোঝার চেষ্টা করে । বুঝতে পারে না কিছুই । শুধু পদ্মপাতারা জরির স্থবির শরীরটাকে নিবিড়, আরো নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে .....................


২২মে , ২০০৯

মাছের মাথা

অনেকদিন পর বড় দুলাভাই বেড়াতে আসলেন, হাতে প্যাকেট প্যাকেট রসগোল্লা। আমি অবশ্য প্যাকেটের ভেতর না দেখেই বুঝতে পারি ভেতরে কি আছে। কারণ দুলাভাই যতবারই আসেন, ততবারই রসগোল্লা ছাড়া আর কোন মিষ্টি আনেননা। আমি অনেক ভেবে দেখলাম, দুলাভাই সবথেকে রসগোল্লা পছন্দ করেন, আর যাতে শ্বশুর বাড়ি পারপাজে ব্যয়িত অর্থ পুরোটাই উসুল করা যায় তার জন্য যেকোন উপায় অবলম্বন করতে তিনি এতটুকুও কার্পণ্য করেন না। অবশ্য মিষ্টি+ যাতায়াত ভাড়া বাবদ যা খরচ হয় তার তিনচারগুণ বেশি ভেসে যায় আমার বাবার পকেট থেকে।সাথে শাশুড়ি নামের ফ্রী বার্বুচীর ভালবাসা মেশানো রান্না, শ্যালক-শ্যালিকা নামের পরিচারক-পরিচারিকা আর শ্বশুর নামের ম্যানেজার তো আছেই। যাইহোক, দুলাভাইয়ের চেহারার দিকে তাকিয়ে মনে হলো কে যেন তার শরীর থেকে সমস্ত রসটাই লেবুর মত নিংড়ে বের করে নিয়েছে। হাসতে হাসতে বললাম, দুলাভাই, সব রস কি মিষ্টির হাঁড়িতে করে নিয়ে এসেছেন? অমনি এক তাড়া, যা ভাগ। আপাতত: ভাগলাম রান্না ঘরের দিকে। শাশুড়ি আম্মা মনযোগ সহকারে রুই মাছের মুড়িঘন্ট করছেন। খুনতির হাতা ধীরে ধীরে দোলাচ্ছেন যেন মাছের মাথা আহত না হয়। জামাই খাবে। টিভিতে তখন একটা নাটক দেখছিলাম । দুলাভাই সহ পরিবারের প্রায় সব সদস্যই ছিল। মাঝে আম্মাজানও আসলেন। হঠাৎ নাটকের একটা দৃশ্যে সবার মনযোগ চলে গেল। সকাল বেলা বাড়ির গৃহকর্তা খুব শখ করে একটা বড় রুই মাছ আনলেন। মধ্যবিত্তের সংসার। তারউপর এমন খামখেয়ালীর জন্য গিন্নীর ধমক, বৌমার ঠোঁট বাঁকানো সবই কপালে জুটল। তাতে কি । মাছের মাথা খাবার সময় এই সব ছোট ছোট দু:খ কষ্ট থাকবে না।গিন্নীকে বললেন, মাথাটা আলাদা করে রাধঁবে। অনেকদিন মাছের মাথা খাইনা। যাই হোক, মাথা রান্না হচ্ছে। ইতিমধ্যে কোথায় থেকে জামাই বাবাজীর আগমন। খাবার সময় গিন্নী ভেবে পাচ্ছেন না মাথাটা কার পাতে দেবেন। মেয়ে ভাবছে জামাইয়ের পাতে দিলে সম্মানটা বাড়ে। বৌমা ভাবছে আমার স্বামীর টাকায় সংসার চলে, সুতরাং মাথাটা আমার সাহেবের প্রাপ্য। ওদিকে শ্বশুর বেচারার হার্টবিট কমতে শুরু করেছে। অবশেষে সবাইকে বোল্ড আউট করে জামাই বললো, আম্মা , মাথাটা আমাকেই দেন। আমার আবার রুই মাছের মাথা খুবই পছন্দ।অগত্যা আচঁলে মুখ লুকিয়ে গিন্নী মাথাটা জামাইয়ের পাতেই তুলে দিলেন। নাটক শেষ। এবার আমাদেরও খাবার পালা। কিন্তু মাথাটা কে খাবে এই নিলে বাধঁলো মহা সমস্যা। কারণ সবার মাথায়ই তখন নাটকের কাহিনী ঘুরছে। আব্বা বললেন, সবুজ কে দাও ( আমার দুলাভাইয়ের নাম)। দুলাভাই তো কিছুতেই নেবেন না। আম্মা একবার মাছের মাথা সহ চামচ দুলাভাইয়ের পাতের দিকে নিচ্ছেন আবার আব্বার দিকে নিচ্ছেন। আমরা বাকি সদস্যরা গম্ভীর মুখে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি ফলাফল দেখার জন্য। অবশেষে নাটকেরই জয় হলো। মাছের মাথাটা দুলাভাইয়ের পাতেই পড়লো। জামাই বইলে কতা...........................

জীবনের অনেক ঘটনা গল্পকেও হার মানায় । তেমনি মনে রাখার মত একটি হাস্যকর স্মৃতি ।



লিংক : http://prothom-aloblog.com/users/base/adhar/7

http://forum.amaderprojukti.com/viewtopic.php?f=21&t=3042

Me

Me

About this blog

Hello

This is Fahmida. You may imagine me as a five feet white ball. Completed MBA in Management . ভাললাগে গ্রাফিক্সের টুকিটাকি। শখ ছিল ফটোগ্রাফার হবো কিংবা সাংবাদিক। হইনি কিছুই। পেশায় ব্যাংকার। জন্ম উত্তর বঙ্গে। বসবাস দক্ষিণে। মাঝে মাঝে এক আধটু প্যাঁচাই। যদিও আমার লেখালেখির হাতেখড়ি আপ্র (http://forum.amaderprojukti.com/memberlist.php?mode=viewprofile&u=1094) থেকে তারপরও মাঝে মাঝে প্রথম আলো ব্লগেও মাঝেমাঝে ঢুঁ মারি। নিক আঁধার http://prothom-aloblog.com/users/base/adhar/p1 । আজকাল সচলদের অতিথি হতে ভাল লাগে। নিক অমাবস্যা। ইদানীং টিউরোটিয়াল বিডি'তে লেখার চেষ্টা করছি। গান শোনা, কবিতা পড়তে ভালবাসি। ভালবাসি ব্লাক কফি আর সিলেটের চা-পাতা । এক কথায় Im busy for nothing :)


লাইসেন্স:Licence
by-nc-nd (Creative Commons)

My Blog List