Small journey

ছোট ছোট ঢেউ জুড়েই সুনামীর সৃষ্টি হয়

শেষ চিঠি




যা কিছু দিয়েছি তারে থাক পড়ে থাকনা
ভালবাসা কারে কয় ভুলেছি সে ভাবনা,
ছোট ছোট চাওয়াগুলো দুলে দুলে পড়ে যায়
আঁধারের হাত ধরে আঁধারের বাড়ি যায়,
মেঘে মেঘে খেলা করে সকালের রৌদ্র
হাতপাশ চারপাশ তুষারের শুভ্র,
মেঘে মেঘে বেলা হয় আকাশের ভাবনায়
যূথীবন খোলে মন পিয়ালের পাখনায়,
হেলেদুলে উড়ে চলে শালিকের কষ্ট
বুক ভাঙ্গা নদীগুলো হয় পথভ্রষ্ট।।

গল্প





পর্দাগুলো তুলে দাও, দাও না তুলে, একটুখানি.....আমি আকাশ টাকে দেখি
দাওনা খুলে শুধু একটি বার
আমি সেই মেঠো পথ দু’চোখ ভরে দেখতে চাই
যে পথে আঁকা আছে আমার মায়ের আঁচল ছেঁড়ার ছবিটা,
যে পথের প্রতিটি ঘাস, প্রতিটি ধূলি কণা আমাকে বলবে ইতিহাসের সেই না বলা কথাগুলো,
যে পথের আকাশ এখনো কাঁদে আমার মায়ের লজ্জা হারানোর বেদনায়,
ধূসর মাটি যেখানে রেঙেছে আমার মায়ের রঙে,
লাল লাল, লাল লাল,লাল লাল.............
দাওনা তুলে র্পদাটা আমি আমার জন্মের ইতিহাস জানি।।

দেবে কি তুলে সেই জানালাটার পর্দাটা?
যে জানালার ফাঁক দিয়ে কোন এক কিশোরী ঘুমহীন চোখে
উদাস দুপুরে আকাশের বুকে স্বপ্ন এঁকে যেতো,
তারপর কোন এক ব্যস্ত দুপুরে , মধ্য পুকুরে সম্ভ্রমহীনতার কালো রঙয়ে
এঁদো ডোবাগুলো হয়েছে মলিন,
কিশোরীর ঘুমহীন চোখ হয়েছে নির্ঘুম,
স্বপ্নগুলো হয়েছে দু:স্বপ্নের বিভীষিকা,
কালো কালো ,কালো কালো, কালো কালো.........
দাওনা খুলে, একটি বার........আমি সেই না বলা কথাগুলো জানি
জানালার ফাঁক দিয়ে দেখি সেই বিভৎস, বির্বণ স্মৃতি।।

পর্দাগুলো দাওনা তুলে, আমার বুক ফেটে যায়
দেয়ালের পৃথিবীতে বসে আমি শুনতে চাই সেই সব কাঁচির খসখস শব্দ,
ঝুপঝুপ টুপটুপ করে শিউলির মত ঝরে পড়ে আমার মায়ের দীঘল চুল,
শাড়ির আঁচল হারিয়ে যায় শরীরের বিছানা থেকে,
আঙুলের ফাঁক দিয়ে ভয়ার্ত চোখে মা মণি আমার দিনের আলোয় রাতের আঁধার দ্যাখে,
ঝুপঝুপ টুপটুপ চুপচুপ...............
দাওনা তুলে পর্দাগুলো, শুধু একটি বার,একবার দেখি আমি,
আমার কুমারী মায়ের ছোট্টশুভ্র বুকে কে এঁকে দিল লাল সবুজের পতাকা।।

ডিসেম্বর আঠারো,২০০৮

( কবিতাটা যখন প্রথম লিখি কি যেন একটা নাম দিয়েছিলাম মনে পড়ছে না। তারপর দিলাম হৃদয়ে বীরাঙ্গনা। মনোপূত হলো না। প্রথম আলো ব্লগে লিখলাম নষ্ট ভ্রুণের আর্ত্নচিৎকার। তাতেএ স্বস্তি পাইনা। যে নামই দিই মনে হয় ঠিক হলো হলো না। )

হাইপো

আমার ছোট বেলার বন্ধু সজল। কলেজেও আমরা এক সাথে দিন কাটিয়েছি। সেদিন হঠাৎ সজল এসে উপস্থিত। মুখের আকাশে রাজ্যের মেঘ। ব্যাপার কি ঠিক বুঝতে পারলাম না। পিঠে ধাক্কা দিয়ে বললাম কিরে কি হয়েছে? সজল ভেজা চোখে বললো,” সে আর নেই।“ সে আর নেই, মানে টা কি? শিমুল আর নেই।আতঁকে উঠি,শিমুল আর নেই। শিমুল আমাদের বন্ধু।কাঁপা কাঁপা গলায় বলি কি হয়েছিল? কিভাবে মারা গেল? কখন মারা গেল? বল না। সজল বললো স্কুলের জন্য নতুন বিল্ডিং তোলা হচ্ছে। জায়গার প্রয়োজন। তাই তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি যেন আকাশ থেকে পড়ি। চল যাই। রেডিও সেন্টারের সামনে আমাদের অতিপ্রিয় স্কুলটা একসময় দিগন্ত অবারিত মাঠে ভরা ছিল। তিন পাশে খোলা মাঠ। সামনে রেডিও সেন্টার, ন্যাশনাল লাইব্রেরী, আরো পেছনে তাকালে দেখা যাবে আবহাওয়া অফিসের সেই বিখ্যাত ডিম টা। একটু দূরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সংসদ ভবন, প্যারড স্কয়ার,বয়েজ স্কুল, অন্য দিকে পঙ্গু হাসপাতাল,শিশুমেলা।আর মাঝখানে আমাদের অতিপ্রিয় স্কুলের লাল বিল্ডিংটা। দুই বন্ধু হাত ধরে স্কুলের ভেতর গেলাম। সেই মাঠ আর নেই। স্কুলের খোলা বারান্দায় সারি সারি করে পরানো হয়েছে রডের গয়না। মনে হচ্ছে বিশাল বড় একটা জেলখানা।ইট,রড,কংক্রীটের পর্বত পেরিয়ে সেই জায়গাটায় পৌছাঁবার চেষ্টা করলাম, যেখানে শিমুল দাঁড়িয়ে ছিল। ঠিক জায়গাটা খুঁজে বের করতে পারলাম না। ঝাপসা চোখে তাকালাম। বন্ধু , কই তুমি? হঠাৎ সজল কাঁপতে শুরু করলো।উদ্ভ্রান্তের মত আমার দিকে চেয়ে শার্টখুলে ছুঁড়ে ফেলে দিল।সজল, সজল.....আমি ধাক্কা দেই। সজল যেন আমার কথা শুনতে পায়না। লোকজন ছুটে আসে। ধরাধরি করে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়। কয়েকদিন হাসপাতালে থাকার পর ডাক্তার ঘোষণা করলেন, সজলের ডায়াবেটিস হয়েছে যাকে ডাক্তারী ভাষায় বলা হয় ডায়াবেটিস মিলিটাস। ভাবছেন বাড়িয়ে বলছি না? এ আবার কেমন ডায়াবেটিস? ডায়াবেটিস হলে তো ঘন ঘন ছোট ঘরে ছোট কাজে উঁকি দিতে হয়। ক্ষুধায়-তৃষ্ণায় পেট বেচারা আরো চ্যাঁচাতে থাকে “ খেতে দাও, খেতে দাও”। রাশি রাশি খাবার পেটের গুদামে চালান করার পরেও দেখা যায় চামড়া হাড়ের সাথে এঁটে যাচ্ছে। আর সজলের তো মৃগী রোগের লক্ষণ। হ্যাঁ, প্রথমে সজলকে দেখে আমিও ভেবে ছিলাম ওর মৃগী রোগ আছে। একবার মুখের উপর চামড়ার স্যান্ডেল ঘোরাতেও চেয়েছিলাম। কিন্তু চামড়ার স্যান্ডেলের যে দাম, আমার মত বেকার মানুষের পক্ষে তা পদতলের আয়ত্বে আনা সম্ভব না। তাই রেগজিন/রেক্সিন যাই বলেন সে আবরণই আমার পদতলের শোভা বর্ধন করে। তাছাড়া সজলকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি। প্রায় ১০ বছর। ওর বাড়িতেও আমার যাওয়া আসা আছে। কখনো তো কাউকে বলতে শুনিনি ওর মৃগী রোগ আছে।কলেজ থেকে ফেরার সময় পথে রোড এ্যাকসিডেন্টে ছোট্টশিশুর গুঁড়ো হয়ে যাওয়া মাথা দেখেও সজলকে মূর্চ্ছা যেতে দেখিনি। তাহলে আজ হঠাৎ এমন হলো কেন? উত্তর টা আমি হাসপাতাল থেকেই পেয়ে গেলাম। আসলে যারা ডায়াবেটিসের রোগী তাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন তৈরী হয় না। ফলে রক্তে ধীরে ধীরে সুগারের পরিমাণ বাড়তে থাকে।পরিণতিতে ইউরিনকে ঘনঘন ছোট ঘরে রেখে আসতে হয়। তাতে শরীরের ওজন দ্রুত কমে যায়। ডায়াবেটিস রোগীর শক্তি দিন দিন কমে যেতে থাকে এবং খাবার নিয়ন্ত্রণে কোন কাজ হয় না।শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে এবং পরর্বতী সময়ে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। যদি এমতাবস্থায় রোগীর চিকিৎসা না করা হয় তবে রোগী মারা যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল ব্যাপারটা হলো সামঞ্জস্যতা। অর্থ্যাৎ আপনাকে সুগার বা শর্করা জাতীয় খাদ্য এমন পরিমাণে খেতে হবে যেনো পুরোটা ইনসুলিনের সহায়তায় শক্তিতে পরিণত হতে পারে। রক্তে যেন সুগার অবশিষ্ট না থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন যদি শরীরে না নেওয়া হয় তবে রক্তে প্রচুর সুগার দেখা দেয়। ফলে রোগী পিপাসা ও ক্লান্তি বোধ করে। একে "হাইপার গ্লাইসেমিয়া" বা হাইপার বলে। আবার শরীরে যদি অতিরিক্ত ইনসুলিন নেওয়া হয়ে যায় এবং সে অনুযায়ী সুগার বা শর্করা জাতীয় খাদ্য খাওয়া না হয় তবে মস্তিস্কে ব্যবহৃত মূল সুগারকে ইনসুলিন টেনে নেয়। ফলে শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে। একে "হাইপোগ্লাইসেমিয়া" বা সংক্ষেপে হাইপো বলে। তবে এই হাইপো অবস্থা যদি বেশিক্ষণ চলতে থাকে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। যেটা সজলের ক্ষেত্রে হয়েছিল।এ অবস্থাতে সবচেয়ে করণীয় হলো সাথে সাথে মিষ্টি জাতীয় কোন খাবার খেয়ে নিতে হবে। এটা চিনি মিশ্রিত দুধ বা চা হতে পারে, অথবা শরবত। কোন কোন ক্ষেত্রে রোগীর পায়ের গিঁট ফুলে যেতে পারে। প্রথম প্রথম মনে হতে পারে হজমের সমস্যা হয়েছে। সজলকে প্রায়ই দেখতাম মুখ হাঁড়ির মত করে বসে থাকতো। শাক খাবেনা, মাংস খাবেনা , পেটের সমস্যা। ডিম খেলে বাড়তি আপদ, আরো হাজারো খুঁটিনাটি। তাই ওর জন্য আমাদের খুব হিসেব করেই বাজার করতে হতো। কখনো কখনো লক্ষ্য করতাম ওর পায়ের গিঁট ফোলা। ভাবতাম সারাক্ষণ চেয়ারের উপর বসে থাকে বলেই হয়তো পা ফুলে গেছে। পা দুটো আকাশের দিকে তুলে দেবার পরার্মশও দিয়েছি অনেক সময়। প্রায়ই দেখা যেতো সজল বাদুরের মত ঠ্যাং ঝুলিয়ে পড়ে আছে। যাই হোক, অবশেষে একমাসের দীর্ঘ পথ পরিক্রমা অতিক্রম করিয়া হাসপাতালের অন্ন ধ্বংস করিয়া সজলবাবু মেসে পদার্পণ করিলেন। আমরা জয়ধ্বনি দিলাম। ছোট-খাট একটা ভোজেরও আয়োজন করলাম।তারপর পেটগোডাউন পূর্ণ করে দুই বন্ধু খোলা আকাশের নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম। সজলকে চুপি চুপি বললাম, হাঁদারাম, একটা ছবি না তুলতে পারিস, এক টুকরো কাঠতো আনতে পারতি, না হয় একটা শুকনো পাতা। সজল বিরস মুখে উত্তর দিল, সে সুযোগ আর পেলাম কই? পেলে কি চুপ করে বসে থাকতাম। খবর পাবার আগেই সব শেষ। ভাবছেন কে সেই তিলোত্তমা যার জন্য আমাদের সুখের বসন্তে আগুন লেগেছে? সে আর কেউ নয়, স্কুলের একপ্রান্তে পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের দুই বন্ধুর অতি প্রিয় গাছ যার নিচে বসে আমরা অনেকটা টিফিন পিরিয়ড কাটিয়েছি, হেলায় হারিয়েছি অনেকগুলো অবসর । পেয়ারা পাতার মোড়কে সাজিয়েছি বুনো ঘাসফুল।কোন পাতা ছিল না বলে ফুলের গয়না কখনো পড়তে দেখিনি তাকে। মাঝে মাঝে শুধু একটা শকুন কে গাছের মগডালে বসে থাকতে দেখতাম। সে বোধহয় এদিনের অপেক্ষাতেই ছিল।

বি:দ্র: আমরা দুই বন্ধু এখন সবসময়ই ফ্লাক্সে ঘন দুধ চা নিয়ে ঘুরি। শিমুল চলে যাবার পর তার আসন অলন্কৃত করেছে হাইপো ।আর হ্যাঁ, আমার প্রযুক্তিবিদ বন্ধুরা, কখনোই রোগ লুকাবেন না। তাতে ঝামেলা বাড়বে বই কমবে না।

একনজরে হাইপোর লক্ষণ সমূহ:
১. ঘন ঘন ইউরিন বর্জন।
২. অতিরিক্ত পিপাসা।
৩. বেশি ক্ষুধা।
৪. ওজন হ্রাস।
৫. ক্লান্তি।
৬. মনোযোগ ও উৎসাহ উদ্দীপনার অভাব।
৭. ঝাপসা দৃষ্টি।
৮. বমি ও পেটে ব্যথা (অনেক সময় ফ্লু বলে ভ্রম হয়।)
৯. পায়ের গিঁট ফুলে যাওয়া।
১০. দূর্বলতা।

যদিও সজল নামে আমার কোন বন্ধু নেই, কিন্তু শিমুল গাছ টা সত্যিই ছিল আর সজলের মত একটা সহপাঠীর সাথে আমিও অনেকটা দুপুর কাটিয়েছি পেয়ারা পাতার মোড়কে বুনো ফুলের ডালা সাজিয়ে। কয়েকদিন আগে হঠাৎ আমার সেই সহপাঠী জানালো গাছটা'কে কেটে ফেলা হয়েছে। আমার মনে হলো কে যেন আমার হৃদপিন্ডটাকে কেটে ফেলেছে।


লিংক : http://forum.amaderprojukti.com/viewtopic.php?f=25&t=2689

Me

Me

About this blog

Hello

This is Fahmida. You may imagine me as a five feet white ball. Completed MBA in Management . ভাললাগে গ্রাফিক্সের টুকিটাকি। শখ ছিল ফটোগ্রাফার হবো কিংবা সাংবাদিক। হইনি কিছুই। পেশায় ব্যাংকার। জন্ম উত্তর বঙ্গে। বসবাস দক্ষিণে। মাঝে মাঝে এক আধটু প্যাঁচাই। যদিও আমার লেখালেখির হাতেখড়ি আপ্র (http://forum.amaderprojukti.com/memberlist.php?mode=viewprofile&u=1094) থেকে তারপরও মাঝে মাঝে প্রথম আলো ব্লগেও মাঝেমাঝে ঢুঁ মারি। নিক আঁধার http://prothom-aloblog.com/users/base/adhar/p1 । আজকাল সচলদের অতিথি হতে ভাল লাগে। নিক অমাবস্যা। ইদানীং টিউরোটিয়াল বিডি'তে লেখার চেষ্টা করছি। গান শোনা, কবিতা পড়তে ভালবাসি। ভালবাসি ব্লাক কফি আর সিলেটের চা-পাতা । এক কথায় Im busy for nothing :)


লাইসেন্স:Licence
by-nc-nd (Creative Commons)

My Blog List