Small journey

ছোট ছোট ঢেউ জুড়েই সুনামীর সৃষ্টি হয়

তুমি ডাক দিলে

একবার ডাক দিয়ে দেখো আমি কতোটা কাঙাল,
কতো হুলুস্থূল অনটন আজম্ন ভেতরে আমার।

তুমি ডাক দিলে
নষ্ঠ কষ্ঠ সব নিমিষেই ঝেড়ে মুছে
শব্দের অধিক দ্রুত গতিতে পৌছুবো
পরিণত প্রণয়ের উৎসমূল ছোঁব
পথে এতোটুকু দেরিও করবো না।
তুমি ডাক দিলে
সীমাহীন খাঁ খাঁ নিয়ে মরোদ্যান হবো,
তুমি রাজি হলে
যুগল আহলাদে এক মনোরম আশ্রম বানাবো।

একবার আমন্রণ পেলে
সব কিছু ফেলে
তোমার উদ্দেশে দেবো উজাড় উড়াল,
অভয়ারণ্য হবে কথা দিলে
লোকালয়ে থাকবো না আর
আমরণ পাখি হয়ে যাবো, -খাবো মৌনতা তোমার



হেলাল হাফিজ

..............

৩৬৫ দিন দুদিন আগেই ফুরিয়ে গেছে।আজ ৩৬৭। ৩৬৫টি সূর্য ডোবার আগের রাতটাও কেটেছিল দু'চোখের পাতার বিরহে, ছোট্ট একটা সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে। ৩৬৫ টি সূর্য ডুবে গিয়েও নির্ঘুম কাটল আরেকটা রাত ঠিক আগের মত করে। যা কিছু সহজ তার সবকিছুই সহজ নয়। যা কিছু কঠিন তার সবকিছুই কঠিন নয়। কিছু কষ্ট আছে নিজের বুকে আঘাত করলে যতটা বাজে তার চেয়ে বেশি বাজে প্রিয়জনের বুকে আঘাত করলে। যদি সব ভুলে যাওয়া যেত পৃথিবীটা হয়তো অন্যরকম হত। আজ ফেসবুকে বন্ধু আরাফাত দুটো কবিতা শেয়ার করলো । তুলে রাখলাম আকাশের ডায়রীতে। But hope someday over the rainbow the dreams that I dreamed of will come true ...................

১.

অমলকান্তি’
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

অমলকান্তি আমার বন্ধু,
ইস্কুলে আমরা একসঙ্গে পড়তাম।
রোজ দেরি করে ক্লাসে আসত, পড়া পারত না,
শব্দরূপ জিজ্ঞেস করলে
এমন অবাক হয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকতো যে,
দেখে ভারী কষ্ট হত আমাদের।
আমরা কেউ মাষ্টার হতে চেয়েছিলাম, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।
অমলকান্তি সে সব কিছু হতে চায়নি।
সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল !
ক্ষান্তবর্ষণ কাক-ডাকা বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর,
জাম আর জামরূলের পাতায়
যা নাকি অল্প-একটু হাসির মতন লেগে থাকে।

আমরা কেউ মাষ্টার হয়েছি, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি।
সে এখন অন্ধকার একটা ছাপাখানায় কাজ করে।
মাঝে মধ্যে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে,
চা খায়, এটা ওটা গল্প করে, তারপর বলে, উঠি তা হলে'।
আমি ওকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।
আমাদের মধ্যে যে এখন মাষ্টারি করে,
অনায়াসে সে ডাক্তার হতে পারত,
যে ডাক্তার হতে চেয়েছিল,
উকিল হলে তার এমন কিছু ক্ষতি হত না।
অথচ, সকলেরই ইচ্ছাপূরণ হল, এক অমলকান্তি ছাড়া।
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি।
সেই অমলকান্তি - রোদ্দুরের কথা ভাবতে-ভাবতে
ভাবতে-ভাবতে
যে একদিন রোদ্দুর হতে চেয়েছিল।।

২.
'নিঃসঙ্গতা'
আবুল হাসান



অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত শোভা, অত স্বাধীনতা!
চেয়েছিল আরো কিছু কম,

আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিল
মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!

অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত হৈ রৈ লোক, অত ভীড়, অত সমাগম!
চেয়েছিল আরো কিছু কম!

একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল

একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী!


Into my own

One of my wishes is that those dark trees,
So old and firm they scarcely show the breeze,
Were not, as 'twere, the merest mask of gloom,
But stretched away unto the edge of doom.

I should not be withheld but that some day
Into their vastness I should steal away,
Fearless of ever finding open land,
Or highway where the slow wheel pours the sand.

I do not see why I should e'er turn back,
Or those should not set forth upon my track
To overtake me, who should miss me here
And long to know if still I held them dear.

They would not find me changed from him they knew--
Only more sure of all I thought was true.
From "A Boy's Will", 1913
Robert Frost

উপেক্ষা

অনন্ত বিরহ চাই, ভালোবেসে কার্পণ্য শিখিনি৷
তোমার উপেক্ষা পেলে অনায়াসে ভুলে যেতে পারি
সমস্ত বোধের উত্স গ্রাস করা প্রেম; যদি চাও
ভুলে যাবো, তুমি শুধু কাছে এসে উপেক্ষা দেখাও৷

নির্মলেন্দু গুণ
দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী; ১৯৭৪

এবারই প্রথম তুমি



ভুলে যাও তুমি পূর্বেও ছিলে
মনে করো এই বিশ্ব নিখিলে
এবারই প্রথম তুমি৷

এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না
ছিলে না আকাশে, নদী জলে ঘাসে
ছিলে না পাথরে ঝর্ণার পাশে৷
এবারই প্রথম তুমি৷

এর আগে তুমি কিছুতে ছিলে না৷
ফুলেও ছিলে না, ফলেও ছিলে না
নাকে মুখে চোখে চুলেও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷

এর আগে তুমি এখানে ছিলে না
এর আগে তুমি সেখানে ছিলে না
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷

রাতের পুণ্য লগনে ছিলে না
নীল নবঘন গগনে ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷

এর আগে তুমি তুমিও ছিলে না৷
এবারই প্রথম তুমি৷


নির্মলেন্দু গুণ
অচল পদাবলী, ১৯৮২

.....................

কবিতা নাকি মনের কথা বলে, কবিতা নাকি জীবনের কথা বলে। আজ সকালে একটা ম্যাসেজ আসলো যার শুরুটা এমন " Love is a temporary madness "

আর সাঁঝের শেষ প্রহরে আসলো আরেকটা ................


Why can't I stop
Stop thinking of you
I try to fill my day
With lots of things to do

But I continue to drift
Wondering where you are
Do you have any idea
That on my heart you've left a scar

You have priorities
Places you have to be
I'm just so very sad
There's no place for me

I fell in love with you
The keeper of my heart
It's just very hard for me
Since we've been apart

I think you're amazing
A very wonderful man
You pulled me in your web
I became your greatest fan

Just thinking of you
Makes my heart race
There's no one like you
Who brings a glow to my face

Did you ever stop to see
That each time we were together
I would melt within your eyes
A feeling I'll always treasure

When I stop to think
All that we've been through
I can't help but realize
I'm addicted to you.
--------------------




..................

What a house that I build in the void ?????????

Good-night

Good-night? ah! no; the hour is ill
Which severs those it should unite;
Let us remain together still,
Then it will be good night.

How can I call the lone night good,
Though thy sweet wishes wing its flight?
Be it not said, thought, understood --
Then it will be -- good night.

To hearts which near each other move
From evening close to morning light,
The night is good; because, my love,
They never say good-night.

Shelly

I arise from dreams of thee

রাত্রিটা বিষন্ন। বিষন্ন প্রকৃতি আর মগজের কোষগুলো ...............


I arise from dreams of thee
In the first sweet sleep of night,
When the winds are breathing low,
And the stars are shining bright
I arise from dreams of thee,
And a spirit in my feet
Has led me -- who knows how? --
To thy chamber-window, sweet!

The wandering airs they faint
On the dark, the silent stream, --
The champak odors fall
Like sweet thoughts in a dream,
The nightingale's complaint,
It dies upon her heart,
As I must die on thine,
O, beloved as thou art!

O, lift me from the grass!
I die, I faint, I fall!
Let thy love in kisses rain
On my lips and eyelids pale,
My cheek is cold and white, alas!
My Heart beats loud and fast
Oh! press it close to thine again,
Where it will break at last!


Shelly

তুমি যেখানেই যাও

তোমাকে যখন দেখি তার চেয়ে বেশি দেখি
যখন দেখিনা
শুকনো ফুলের মালা যেরকম বলে দেয়
সে এসেছে
চড়ুই পাখিরা জানে
আমি কার প্রতীক্ষায় বসে আছি
এলাচের দানা জানে
কার ঠোঁট গন্ধময় হবে-
তুমি ব্যস্ত, তুমি একা , তুমি অন্তরাল ভালবাসো
সন্ন্যাসীর মত করে হাহাকার করে উঠি
দেখা দাও, দেখা দাও,
পরমুর্হুতেই ফের চোখ মুছি
হেসে বলি
তুমি যেখানেই যাও সঙ্গে আছি !

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "তুমি যেখানেই যাও " কবিতার শেষ কিছু লাইন।

............

নিদ্রার তরঙ্গের মধ্যে
আমি তোমার কাছে এলাম
তোমার কটিদেশ পর্যন্ত
বরফে নিমজ্জিত।
তুমি তোমার বাহু দুটি বাড়িয়ে দিলে
স্বপ্নের বিচূর্ণতায় আমি পানি হয়ে
তোমার কাছে এলাম ।


লাইনগুলো কার ঠিক মনে নেই। তবে হাইস্কুলে পড়ার সময়ে পড়া এটুকু মনে আছে। পুরনো সেই ডায়রীটা নাড়তে নাড়তে হঠাৎ মনে হলো একেও ভাসানোর সময় এসেছে। মষ্তিস্কের কোষগুলো গরম হয়ে উঠছে আর সে আগুনে পুড়ছে শিরা-কোষ-উপশিরা ..........

নিমন্ত্রণ

ছোটবেলায় একটা অভ্যাস ছিল বড় আপুদের বাংলা বইয়ের যত গল্প কবিতা পড়া। পাঠ্যপুস্তক আর কোরআন হাদীসের বাইরে আর কোন বই পড়ার সুযোগ পাইনি কোনদিন। বইকেনা-বইপড়াকে মনে করা হতো চরম বিলাসিতা। লুকিয়ে বন্ধুদের কাছ থেকে বই আনতাম। প্রাইমারী পর্যন্ত এ সুযোগটা ছিলনা।বড় বোনদের পাঠ্য বই-ই ছিল সম্বল। যখন রংপুর থেকে ঢাকায় শিফট করলাম। স্কুলে বই পাবার সুযোগ পাওয়া গেল। লাইব্রেরী-বন্ধুরা। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল পড়ার সুযোগ বের করা। আমার একটা বদঅভ্যাস হলো যতক্ষণ শেষ না হয় ততক্ষণ মনটা আনচান করে কখন শেষ করবো। ফলে ঘনঘন বকা-ঝাড়ি সবই চলতে থাকতো । তবুও কেউ থামাতে পারেনি। সেই ছোটবেলা থেকে আজ অব্দি যখন যেখানে গেছি চোখ থাকতো শুধু একটি দিকে তাদের বাড়িতে কি কি বই আছে । অবশ্য আরেকটা জিনিসের প্রতি লোভ ছিল মজার মজার খাবার :C


এই কবিতাটা স্কুলে থাকার সময়ে পড়তাম, আজো পড়ি কোন কোন অবসরে ................

তুমি যাবে ভাই - যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,
গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;
মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি
মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,
মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়,
তুমি যাবে ভাই - যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,

ছোট গাঁওখানি- ছোট নদী চলে, তারি একপাশ দিয়া,
কালো জল তার মাজিয়াছে কেবা কাকের চক্ষু নিয়া;
ঘাটের কিনারে আছে বাঁধা তরী
পারের খবর টানাটানি করি;
বিনাসুতি মালা গাথিছে নিতুই এপার ওপার দিয়া;
বাঁকা ফাঁদ পেতে টানিয়া আনিছে দুইটি তটের হিয়া।

তুমি যাবে ভাই- যাবে মোর সাথে, ছোট সে কাজল গাঁয়,
গলাগলি ধরি কলা বন; যেন ঘিরিয়া রয়েছে তায়।
সরু পথ খানি সুতায় বাঁধিয়া
দূর পথিকেরে আনিছে টানিয়া,
বনের হাওয়ায়, গাছের ছায়ায়, ধরিয়া রাখিবে তায়,
বুকখানি তার ভরে দেবে বুঝি, মায়া আর মমতায়!

তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে - নরম ঘাসের পাতে
চম্বন রাখি অধরখানিতে মেজে লয়ো নিরালাতে।
তেলাকুচা - লতা গলায় পরিয়া
মেঠো ফুলে নিও আঁচল ভরিয়া,
হেথায় সেথায় ভাব করো তুমি বুনো পাখিদের সাথে,
তোমার গায়ের রংখানি তুমি দেখিবে তাদের পাতে।

তুমি যদি যাও আমাদের গাঁয়ে, তোমারে সঙ্গে করি
নদীর ওপারে চলে যাই তবে লইয়া ঘাটের তরী।
মাঠের যত না রাখাল ডাকিয়া
তোর সনে দেই মিতালী করিয়া
ঢেলা কুড়িইয়া গড়ি ইমারত সারা দিনমান ধরি,
সত্যিকারের নগর ভুলিয়া নকল নগর গড়ি।

তুমি যদি যাও - দেখিবে সেখানে মটর লতার সনে,
সীম আর সীম - হাত বাড়াইলে মুঠি ভরে সেই খানে।
তুমি যদি যাও সে - সব কুড়ায়ে
নাড়ার আগুনে পোড়ায়ে পোড়ায়ে,
খাব আর যত গেঁঢো - চাষীদের ডাকিয়া নিমন্ত্রণে,
হাসিয়া হাসিয়া মুঠি মুঠি তাহা বিলাইব দুইজনে।

তুমি যদি যাও - শালুক কুড়ায়ে, খুব - খুব বড় করে,
এমন একটি গাঁথিব মালা যা দেখনি কাহারো করে,
কারেও দেব না, তুমি যদি চাও
আচ্ছা না হয় দিয়ে দেব তাও,
মালাটিরে তুমি রাখিও কিন্তু শক্ত করিয়া ধরে,
ও পাড়াব সব দুষ্ট ছেলেরা নিতে পারে জোর করে;

সন্ধ্যা হইলে ঘরে ফিরে যাব, মা যদি বকিতে চায়,
মতলব কিছু আঁটিব যাহাতে খুশী তারে করা যায়!
লাল আলোয়ানে ঘুঁটে কুড়াইয়া
বেঁধে নিয়ে যাব মাথায় করিয়া
এত ঘুষ পেয়ে যদি বা তাহার মন না উঠিতে চায়,
বলিব - কালিকে মটরের শাক এনে দেব বহু তায়।

খুব ভোর ক’রে উঠিতে হইবে, সূয্যি উঠারও আগে,
কারেও ক’বি না, দেখিস্ পায়ের শব্দে কেহ না জাগে
রেল সড়কের ছোট খাদ ভরে
ডানকিনে মাছ কিলবিল করে;
কাদার বাঁধন গাঁথি মাঝামাঝি জল সেঁচে আগে ভাগে
সব মাছগুলো কুড়ায়ে আনিব কাহারো জানার আগে।

ভর দুপুরেতে এক রাশ কাঁদা আর এক রাশ মাছ,
কাপড়ে জড়ায়ে ফিরিয়া আসিব আপন বাড়ির কাছ।
ওরে মুখ - পোড়া ওরে রে বাঁদর।
গালি - ভরা মার অমনি আদর,
কতদিন আমি শুনি নারে ভাই আমার মায়ের পাছ;
যাবি তুই ভাই, আমাদের গাঁয়ে যেথা ঘন কালো গাছ।

যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়।
ঘন কালো বন - মায়া মমতায় বেঁধেছে বনের বায়।
গাছের ছায়ায় বনের লতায়
মোর শিশুকাল লুকায়েছে হায়!
আজি সে - সব সরায়ে সরায়ে খুজিয়া লইব তায়,
যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গায়।

তোরে নিয়ে যাব আমাদের গাঁয়ে ঘন-পল্লব তলে
লুকায়ে থাকিস্, খুজে যেন কেহ পায় না কোনই বলে।
মেঠো কোন ফুল কুড়াইতে যেয়ে,
হারাইয়া যাস্ পথ নাহি পেয়ে;
অলস দেহটি মাটিতে বিছায়ে ঘুমাস সন্ধ্যা হলে,
সারা গাঁও আমি খুজিয়া ফিরিব তোরি নাম বলে বলে।

কবর

এস.এস.সি'র পাঠ্য বইয়ে ছিল। প্রথম লাইনদুটো খুব মনে পড়ে


এই খানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,
পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।
এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,
সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা!
সোনালি ঊষার সোনামুখ তার আমার নয়নে ভরি
লাঙল লইয়া খেতে ছুটিলাম গাঁয়ের ও-পথ ধরি।
যাইবার কালে ফিরে ফিরে তারে দেখে লইতাম কত
এ কথা লইয়া ভাবি-সাব মোরে তামাশা করিত শত।
এমনি করিয়া জানি না কখন জীবনের সাথে মিশে
ছোট-খাট তার হাসি ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।

বাপের বাড়িতে যাইবার কাল কহিত ধরিয়া পা
আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু উজান-তলীর গাঁ।
শাপলার হাটে তরমুজ বেচি পয়সা করি দেড়ী,
পুঁতির মালার একছড়া নিতে কখনও হত না দেরি।
দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া গাঁটে,
সন্ধাবেলায় ছুটে যাইতাম শ্বশুরবাড়ির বাটে!
হেস না­ হেস না­ শোন দাদু, সেই তামাক মাজন পেয়ে,
দাদি যে তোমার কত খুশি হত দেখিতিস যদি চেয়ে!
নথ নেড়ে নেড়ে কহিত হাসিয়া, এতদিন পরে এলে,
পথ পানে চেয়ে আমি যে হেথায় কেঁদে মরি আঁখিজলে।
আমারে ছাড়িয়া এত ব্যথা যার কেমন করিয়া হায়,
কবর দেশেতে ঘুমায়ে রয়েছে নিঝঝুম নিরালায়!
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, আয় খোদা! দয়াময়,
আমার দাদীর তরেতে যেন গো ভেস্ত নসিব হয়।

তারপর এই শূন্য জীবনে যত কাটিয়াছি পাড়ি
যেখানে যাহারে জড়ায়ে ধরেছি সেই চলে গেছে ছাড়ি।
শত কাফনের, শত কবরের অঙ্ক হৃদয়ে আঁকি,
গণিয়া গণিয়া ভুল করে গণি সারা দিনরাত জাগি।
এই মোর হাতে কোদাল ধরিয়া কঠিন মাটির তলে,
গাড়িয়া দিয়াছি কত সোনামুখ নাওয়ায়ে চোখের জলে।
মাটিরে আমি যে বড় ভালবাসি, মাটিতে মিশায়ে বুক,
আয়-আয় দাদু, গলাগলি ধরি কেঁদে যদি হয় সুখ।

এইখানে তোর বাপজি ঘুমায়, এইখানে তোর মা,
কাঁদছিস তুই? কী করিব দাদু! পরাণ যে মানে না।
সেই ফালগুনে বাপ তোর এসে কহিল আমারে ডাকি,
বা-জান, আমার শরীর আজিকে কী যে করে থাকি থাকি।
ঘরের মেঝেতে সপটি বিছায়ে কহিলাম বাছা শোও,
সেই শোওয়া তার শেষ শোওয়া হবে তাহা কী জানিত কেউ?
গোরের কাফনে সাজায়ে তাহারে চলিলাম যবে বয়ে,
তুমি যে কহিলা বা-জানরে মোর কোথা যাও দাদু লয়ে?
তোমার কথার উত্তর দিতে কথা থেমে গেল মুখে,
সারা দুনিয়ার যত ভাষা আছে কেঁদে ফিরে গেল দুখে!

তোমার বাপের লাঙল-জোয়াল দুহাতে জঢ়ায়ে ধরি,
তোমার মায়ে যে কতই কাঁদিতে সারা দিনমান ভরি।
গাছের পাতার সেই বেদনায় বুনো পথে যেতো ঝরে,
ফালগুনী হাওয়া কাঁদিয়া উঠিত শুনো-মাঠখানি ভরে।
পথ দিয়া যেতে গেঁয়ো পথিকেরা মুছিয়া যাইত চোখ,
চরণে তাদের কাঁদিয়া উঠিত গাছের পাতার শোক।
আথালে দুইটি জোয়ান বলদ সারা মাঠ পানে চাহি,
হাম্বা রবেতে বুক ফাটাইত নয়নের জলে নাহি।
গলাটি তাদের জড়ায়ে ধরিয়া কাঁদিত তোমার মা,
চোখের জলের গহীন সায়রে ডুবায়ে সকল গাঁ।

ঊদাসিনী সেই পল্লী-বালার নয়নের জল বুঝি,
কবর দেশের আন্ধারে ঘরে পথ পেয়েছিল খুজি।
তাই জীবনের প্রথম বেলায় ডাকিয়া আনিল সাঁঝ,
হায় অভাগিনী আপনি পরিল মরণ-বিষের তাজ।
মরিবার কালে তোরে কাছে ডেকে কহিল, বাছারে যাই,
বড় ব্যথা র’ল, দুনিয়াতে তোর মা বলিতে কেহ নাই;
দুলাল আমার, যাদুরে আমার, লক্ষী আমার ওরে,
কত ব্যথা মোর আমি জানি বাছা ছাড়িয়া যাইতে তোরে।
ফোঁটায় ফোঁটায় দুইটি গন্ড ভিজায়ে নয়ন­জলে,
কী জানি আশিস করে গেল তোরে মরণ­ব্যথার ছলে।

ক্ষণপরে মোরে ডাকিয়া কহিল­ আমার কবর গায়
স্বামীর মাথার মাথালখানিরে ঝুলাইয়া দিও বায়।
সেই যে মাথাল পচিয়া গলিয়া মিশেছে মাটির সনে,
পরাণের ব্যথা মরে নাকো সে যে কেঁদে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে।
জোড়মানিকেরা ঘুমায়ে রয়েছে এইখানে তরু­ছায়,
গাছের শাখারা স্নেহের মায়ায় লুটায়ে পড়েছে গায়।
জোনকি­মেয়েরা সারারাত জাগি জ্বালাইয়া দেয় আলো,
ঝিঁঝিরা বাজায় ঘুমের নূপুর কত যেন বেসে ভালো।
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, রহমান খোদা! আয়;
ভেস্ত নসিব করিও আজিকে আমার বাপ ও মায়!

এখানে তোর বুজির কবর, পরীর মতন মেয়ে,
বিয়ে দিয়েছিনু কাজিদের বাড়ি বনিয়াদি ঘর পেয়ে।
এত আদরের বুজিরে তাহারা ভালবাসিত না মোটে,
হাতেতে যদিও না মারিত তারে শত যে মারিত ঠোঁটে।
খবরের পর খবর পাঠাত, দাদু যেন কাল এসে
দুদিনের তরে নিয়ে যায় মোরে বাপের বাড়ির দেশে।
শ্বশুর তাহার কশাই চামার, চাহে কি ছাড়িয়া দিতে
অনেক কহিয়া সেবার তাহারে আনিলাম এক শীতে।
সেই সোনামুখ মলিন হয়েছে ফোটে না সেথায় হাসি,
কালো দুটি চোখে রহিয়া রহিয়া অশ্রু উঠিছে ভাসি।
বাপের মায়ের কবরে বসিয়া কাঁদিয়া কাটাত দিন,
কে জানিত হায়, তাহারও পরাণে বাজিবে মরণ­বীণ!
কী জানি পচানো জ্বরেতে ধরিল আর উঠিল না ফিরে,
এইখানে তারে কবর দিয়েছি দেখে যাও দাদু! ধীরে।

ব্যথাতুরা সেই হতভাগিনীরে বাসে নাই কেহ ভালো,
কবরে তাহার জড়ায়ে রয়েছে বুনো ঘাসগুলি কালো।
বনের ঘুঘুরা উহু উহু করি কেঁদে মরে রাতদিন,
পাতায় পাতায় কেঁপে উঠে যেন তারি বেদনার বীণ।
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, আয় খোদা! দয়াময়।
আমার বু­জীর তরেতে যেন গো বেস্ত নসিব হয়।

হেথায় ঘুমায় তোর ছোট ফুপু, সাত বছরের মেয়ে,
রামধনু বুঝি নেমে এসেছিল ভেস্তের দ্বার বেয়ে।
ছোট বয়সেই মায়েরে হারায়ে কী জানি ভাবিত সদা,
অতটুকু বুকে লুকাইয়াছিল কে জানিত কত ব্যথা!
ফুলের মতন মুখখানি তার দেখিতাম যবে চেয়ে,
তোমার দাদির ছবিখানি মোর হদয়ে উঠিত ছেয়ে।
বুকেতে তাহারে জড়ায়ে ধরিয়া কেঁদে হইতাম সারা,
রঙিন সাঁঝেরে ধুয়ে মুছে দিত মোদের চোখের ধারা।

একদিন গেনু গজনার হাটে তাহারে রাখিয়া ঘরে,
ফিরে এসে দেখি সোনার প্রতিমা লুটায় পথের পরে।
সেই সোনামুখ গোলগাল হাত সকলি তেমন আছে।
কী জানি সাপের দংশন পেয়ে মা আমার চলে গেছে।
আপন হস্তে সোনার প্রতিমা কবরে দিলাম গাড়ি,
দাদু! ধর­ধর­ বুক ফেটে যায়, আর বুঝি নাহি পারি।
এইখানে এই কবরের পাশে আরও কাছে আয় দাদু,
কথা কস নাকো, জাগিয়া উটিবে ঘুম­ভোলা মোর যাদু।
আস্তে আস্তে খুঁড়ে দেখ দেখি কঠিন মাটির তলে,

ওই দূর বনে সন্ধ্যা নামিয়ে ঘন আবিরের রাগে,
অমনি করিয়া লুটায়ে পড়িতে বড় সাধ আজ জাগে।
মজিদ হইতে আযান হাঁকিছে বড় সুকরুণ সুরে,
মোর জীবনের রোজকেয়ামত ভাবিতেছি কত দূরে।
জোড়হাত দাদু মোনাজাত কর, আয় খোদা! রহমান।
ভেস্ত নসিব করিও সকল মৃত্যু­ব্যথিত প্রাণ।

যাবার দিন



যাবার দিনে এই কথাটি বলে যেন যাই -
যা দেখেছি, যা পেয়েছি, তুলনা তার নাই।
এই জ্যোতিসমুদ্র মাঝে যে শতদল পদ্ম রাজে
তারি মধু পান করেছি, ধন্য আমি তাই।
যাবার দিনে এই কথাটি জানিয়ে যেন যাই।।

বিশ্বরূপের খেলাঘরে কতই গেলেম খেলে,
অপরূপকে দেখে গেলেম দুটি নয়ন মেলে।
পরশ যাঁরে যায় না করা সকল দেহে দিলেন ধরা,
এইখানে শেষ করেন যদি শেষ করে দিন তাই -
যাবার বেলা এই কথাটি জানিয়ে যেন যাই।।

সঞ্চয়িতা থেকে প্রিয় একটি কবিতা তুলে দিলাম । আমার বইটার ছবি
:C


ফটোশপ টিউটোরিয়াল : ওয়াটার রিফ্লেকশন

সজল'কে প্রথম দেখি বিজ্ঞানমেলায়। স্টলের এককোণায় বসা, হৃদয়ের সবটুকু মনযোগ ঢেলে দিয়েছে স্ক্রীনের উপর। আমার উপর চোখ পড়তেই আলতো করে মুখ সরিয়ে নিল। দ্বিতীয় দিন ক্যাফেটেরিয়ায়। উদাস উদাস চোখদুটো কফির কালো মগে নিবদ্ধ। কোন দিকে কোন খেয়াল নেই। তারপর থেকে যখনই সজলকে দেখেছি সবসময়ই একা। যেন চারপাশের সবকিছু থেকে পালাতে চায়। মনটা যেন কেমন করে উঠলো। একদিন নিজে থেকেই পরিচিত হলাম। কদিন থেকে সজলের দেখা নেই।সে নাকি খুব ব্যস্ত। আমি ভেবে পাইনা এত কি ব্যস্ততা সজলের। নাকি আমাকে এড়াতে চায়। একদিন ওর একরুমমেটের কাছে জানতে চাই সজলের কথা । শুনে ওর রুমমেটতো হেসেই কুটিকুটি। ও সজল :C , বলেই গড়াগড়ি। তারপর একসময় হাসি থামিয়ে বলে, চশমিস্ট কিছুই করেনা । ঘন্টার পর ঘন্টা পিসির সামনে বসে থাকে। ছবি দ্যাখে , সিনেমনা না কিন্তু (সিনেমা) :ttt: । মানে ? আমি অবাক হয়ে জানতে চাই । কিন্তু সে আর কিছুই বলতে নারাজ। একমগ কফির বিনিময়ে এর বেশি নাকি কিছু বলা যাবে না। টপ সিক্রেট। বেশি আগ্রহ হলে আমি যেন গিয়ে দেখে আসি। কি আর করা গেলাম সজলদের মেসে। রুমে ঢোকার আগে কি মনে করে দরজার ফাঁক দিয়ে চেয়ে দেখি সজল মুখ ভার করে পিসির সামনে বসে আছে। সামনে গাঁদাখানেক মেয়ের ছবি। আমার বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। ছি: সজল এমন, নিজেকে ধিক্কার দেই। কেন যে এসেছিলাম। পরক্ষণেই সামলে নেই নিজেকে। যাইহোক এসে যখন পড়েছি তখন দেখি না পানি কতদূর গড়ায়। অনিচ্ছাসত্বেও সজলের নাম ধরে ডাকি। দু'তিনবার ডাকার পরও সজলের সাড়া মেলেনা। আমার বেশ খারাপ লাগে। কেমন অনাকাঙ্খিত মনে হয় নিজেকে । চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে। আস্তে সরে পড়ার চেষ্টা করি। ফিরে আসবো, মনে হলো কে যেন পেছন থেকে আমার ব্যাগটা টেনে ধরেছে। ফিরে যাচ্ছো যে ? বুঝেছি, এসো আমার সাথে ।কাজের সময় চশমিস্ট কানে কিছুই শোনেনা " বলে একরকম জোর করেই আমাকে রুমের ভেতর নিয়ে যায়। আমি অবাক হয়ে দেখি সজলের পিসির স্ক্রীন জুড়ে যে ছবিগুলো আছে তাতে আমারও ছবি আছে। কি করছো তুমি আমার ছবি দিয়ে ? :e :m( আমি চিৎকার করে উঠি । আমার চোখের দিকে না তাকিয়ে অপরাধীর মত সজল বলে ওঠে , তুমি সেদিন বলছিলে তুমি পানিতে নামতে ভয় পাও । তাই ভাবলাম তোমার ছবিটা একটু রিটাচ ............ :sssss:



আজকের টিউটোরিয়াল :

এখন আমরা শিখবো কিভাবে ফটোশপে ওয়াটার রিফ্লেকশন দিতে হয় ।


প্রথমে একটি ইমেজ নিন। এবার ইমেজটির একটি কপি করুন। এজন্য আপনি Layer- Duplicate layer কমান্ডটি ব্যবহার করতে পারেন অথবা Ctrl + J চাপুন।

ছবি

এবার ক্যানভাসে আরো স্পেস বাড়ানোর জন্য Image- Canvas size এ ক্লিক করুন। এবং নিচের কমান্ডটি দিন। এতে আপনার ইমেজের সমপরিমাণ স্পেস যোগ হবে।

ছবি

এবার কপি করা লেয়ারটিকে Vertically flip করতে হবে। এজন্য লেয়ারটি সিলেক্ট থাকা অবস্থায় কমান্ড দিন Edit- Transform - Flip Vertical ।
ছবি

এবার Move (M) টুল সিলেক্ট করে ইমেজটি নিচের দিকে ড্রাগ করে নামিয়ে আনুন। আপনি যদি Shift চেপে ড্রাগ করেন তাহলে স্ট্রেট হবে।

ছবি

নতুন আরেকটি লেয়ার নিন। Fill color (G) সিলেক্ট করে #ffffff কালার দ্বারা ফিল করুন। অর্থ্যাৎ লেয়ারটিকে সাদা রং করুন।
ছবি

এবার Filter-Sketch-Halftone Pattern কমান্ড দিন এবং নিচের সেটিংস ফলো করুন।

ইমেজটি দেখতে এমন হবে।
ছবি

এবার Filter-Blur-Gaussian Blur রেডিয়াস ৪.০ সেট করুন। মনে রাখবেন আপনার ইমেজের রেজুল্যুশন যত বেশি হবে রেডিয়াস তত বাড়াতে হবে।
ছবি
নতুন আরেকটি ডকুমেন্ট তৈরী করুন এবং এই লাইন লেয়ারটিকে সেভ করুন। এবার আগের ডকুমেন্ট থেকে লাইন লেয়ার ডিলিট করে দিন।

এবার Layer 1 এবং Background layer কে কপি করে মার্জ করুন। শর্ট কার্ট কমান্ড হলো Shift+Ctrl+Alt+E । অথবা প্রথমে Ctrl+J চেপে কপি করে নেবেন। তারপর Ctrl+E চেপে মার্জ করে নেবেন । মার্জ করার জন্য অবশ্যই সবসময় উপরের লেয়ারটি সিলেক্ট করতে হবে।

ছবি


এবার লেয়ারটি সিলেক্ট থাকা অবস্থায় নিচের সেটিংস দিন Filter-Distort-Displace কমান্ড দিন।

ছবি

ছবি

Layer 1 কে hide করুন।
ছবি
এবার Layer 2 কে Mask যোগ করুন ।
ছবি

ছবি

এবার Filter-blur-Gaussian Blur কমান্ড দিন। Layer-New adjustment layer এ ক্লিক করুন এবং Hue/Saturation এ নিচের সেটিংস দিন।

ছবি

ছবি

এবার Hue/Saturation layer এর অপাসিটি কমিয়ে দিন। এখন ইমেজটি দেখতে এমন হবে
ছবি

আপনি চাইলে এতে Motion blur এ্যাড করতে পারেন। নিচের সেটিংসগুলো দিন
ছবি


ব্যাস হয়ে গেল ।
ছবি


আজকের টিপস :

দ্রুত সিলেকশনের জন্য : Deselect = Ctrl + D
Reselect = Ctrl +Shift + D
Inverse = Ctrl + I
দুটো লাইনের মধ্যে সংযোগের জন্য Shift+ Alt+ Drag
সিলেকশন থেকে বাদ দেয়ার জন্য Shift+ Drag

আমাদের প্রযুক্তিতে প্রকাশিত। লিংকটা এখানে http://forum.amaderprojukti.com/viewtopic.php?f=57&t=3732&st=0&sk=t&sd=a

.................

নেপোটিজম আজকাল সবখানে। যেদিকেই তাকাই ক্ষমতার ছড়াছড়ি। ছোট্ট যে শিশু যার মুখের গহবরে সদ্য জন্ম নিচ্ছে কচি কচি দুধদাঁত সেও প্রবল আক্রোশে চেপে বসে চামড়ার নরম বিছানায়। অনেক , অনেক দিন আগে একটা মানুষ যার প্রতিটি কথা আমার কাছে আদেশের মত, এমনকি দীর্ঘশ্বাসটুকু, বলেছিল,

"do u write blog?could u please give me the link?I like blogging....." তারিখটা ২৩/৭/২০০৮।

মানুষের স্বভাবের একটা দিক আছে। কবি আহসান হাবীবের কথায় বলতে হয় " তার স্বভাব কাঙাল, ফেরাতে পারে না কথা"। আমিও ফেরাতে পারিনা কথা। নেটের অনেক ঠিকানায় ঘুরলাম,জানলাম। কিছু করার চেষ্টাও করলাম। দেখলাম নেপোটিজম এখানেও। আবার এমনও আছে কিছু লোক কোন কারণ ছাড়াই দোষ খুঁজতে থাকে। মানুষ তার নিজের সম্পত্তিতে যা খুশি করতেই পারে। আমি সাধারন মানুষ। ফোরাম, ব্লগের কোন এডমিনও নই, সমন্বয়ক, উপদেষ্টা .......ইত্যাদী কিছুই নই। একটা মানুষ যে হাজারটা সূর্যডোবা শেষে ফিরে না আসলেও কেউ খুঁজবে না কোথাও সে হারালো। কখনো কেউ জানবেও না কেন সে হারালো, কিসের নেশায়। তবে সত্যিই আশ্চর্য্য লাগে যখন দেখি এসব ফোরাম বা ব্লগের প্রশাসন পর্যায়ে যারা আছেন তারা যদি নিজেদের সর্দি হলেও নতুন টপিক পোস্ট করেন তবে ফোরাম ভারী হয়না। তাদের জিভ দেখানো ইমোটিকনও দারুন প্রয়োজনীয় , মূল্যবান । অথচ আমরা যারা সাধারণ তাদের ... ওদের দোষ দিয়ে আর কি লাভ। সবখানেই কিছু ঘোলা জল থাকে। অন্যের দোষ না খোঁজাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। যদিও আমি বোকা, তথাপি ক্ষান্ত দিলাম।

ভাল থেকো ফেসবুক, ভাল থেকো ফোরাম, ভাল থেকো ব্লগ,ভাল থেকো সচলেরা।

জীবনানন্দের "
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ " কবিতাটা আজ খুব, খুব মনে পড়ছে ..........


অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশী আজ চোখে দেখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই, প্রীতি নেই, করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজও মানুষের প্রতি,
এখনও যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাহাদের হৃদয়।

সোনালী কাবিন

আজ আমি সত্যিই ক্লান্ত .........:(



আর আসবো না বলে দুধের ওপরে ভাসা সর
চামোচে নিংড়ে নিয়ে চেয়ে আছি। বাইরে বৃষ্টির ধোঁয়া
যেন সাদা স্বপ্নের চাদর
বিছিয়েছে পৃথিবীতে।

কেন এতো বুক দোলে? আমি আর আসবো না বলে?
যদিও কাঁপছে হাত তবু ঠিক অভ্যেসের বশে
লিখছি অসংখ্য নাম চেনাজানা
সমস্ত কিছুর।

প্রতিটি নামের শেষে, আসবো না।
পাখি, আমি আসবো না।
নদী আমি আসবো না।
নারী, আর আসবো না, বোন।

আর আসবো না বলে মিছিলের প্রথম পতাকা
তুলে নিই হাতে।
আর আসবো না বলে
সংগঠিত করে তুলি মানুষের ভিতরে মানুষ।
কথার ভেতরে কথা গেঁথে দেওয়া, কেন?
আসবো না বলেই।
বুকের মধ্যে বুক ধরে রাখা, কেন?
আর আসবো না বলেই।

আজ অতৃপ্তির পাশে বিদায়ের বিষণ্ণ রুমালে
কে তুলে অক্ষর কালো, ‘আসবো না’
সুখ, আমি আসবো না।
দুঃখ, আমি আসবো না।
প্রেম, হে কাম, হে কবিতা আমার
তোমরা কি মাইল পোস্ট না ফেরার পথের ওপর?

———————————–


আল মাহমুদ

স্মৃতি বড় উচ্ছৃঙ্খল



পুরনো পকেট থেকে উঠে এল কবেকার শুকনো গোলাপ |
কবেকার ? কার দেওয়া ? কোন্ মাসে ? বসন্তে না শীতে ?
গোলাপের মৃতদেহে তার পাঠযোগ্য স্মৃতিচিহ্ন নেই |

স্মৃতি কি আমারও আছে ? স্মৃতি কি গুছিয়ে রাখা আছে
বইয়ের তাকের মত, লং প্লেইং রেকর্ড-ক্যাসেটে
যে-রকম সুসংবদ্ধ নথীভুক্ত থাকে গান, আলাপচারীতা ?

আমার স্মৃতিরা বড় উচ্ছৃঙ্খল, দমকা হাওয়া যেন
লুকোচুরি, ভাঙাভাঙি, ওলোটপালটে মহাখুশি
দুঃখেরও দুপুরে গায়, গাইতে পারে, আনন্দ-ভৈরবী |

আকাঙ্খার ডানাগুলি মিশে গেছে আকাশের অভ্রে ও আবীরে
আগুনের দিনগুলি মিশে গেছে সদ্যজাত ঘাসের সবুজে
প্রিয়তম মুখগুলি মিশে গেছে সমুদ্রের ভিতরের নীলে |

স্মৃতি বড় উচ্ছৃঙ্খল, দুহাজার বছরেও সব মনে রাখে
ব্যাধের মতন জানে অরণ্যের আদ্যোপান্ত মূর্তি ও মর্মর |
অথচ কাল বা পরশু কে ডেকে গোলাপ দিল কিছুতে বলবে না |

পুর্ণেন্দু পত্রী

কৃষ্ণকলি

রবীন্দ্রনাথ কেন যে মেঘরংয়া ছেলেদের ব্যাপারে কিছু লিখলো না :(


কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিলনা তার মোটে,
মুক্তবেণী পিঠের 'পরে লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে
ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে
কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।
আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু
শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

পূবে বাতাস এল হঠাত্‍‌ ধেয়ে,
ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ।
আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা,
মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ।
আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে,
আমি জানি আর জানে সেই মেয়ে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

এমনি করে কাজল কালো মেঘ
জ্যৈষ্ঠমাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি করে কালো কোমল ছায়া
আষাঢ়মাসে নামে তমাল-বনে।
এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে
হঠাত্‍‌ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
মাথার পরে দেয়নি তুলে বাস,
লজ্জা পাবার পায়নি অবকাশ।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে

আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো
ছোট ঘাসফুলের জন্যে
একটি টলোমলো শিশিরবিন্দুর জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো চৈত্রের বাতাসে
উড়ে যাওয়া একটি পাঁপড়ির জন্যে
একফোঁটা বৃষ্টির জন্যে

আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
দোয়েলের শিসের জন্যে
শিশুর গালের একটি টোলের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো কারো চোখের মণিতে
গেঁথে থাকা একবিন্দু অশ্রুর জন্যে
একফোঁটা রৌদ্রের জন্যে

আমি সম্ভবতখুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
এক কণা জ্যোৎস্নার জন্যে
এক টুকরো মেঘের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো টাওয়ারের একুশ তলায়
হারিয়ে যাওয়া একটি প্রজাপতির জন্যে
এক ফোঁটা সবুজের জন্যে

আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
খুব ছোট একটি স্বপ্নের জন্যে
খুব ছোট দুঃখের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো কারো ঘুমের ভেতরে
একটি ছোটো দীর্ঘশ্বাসের জন্যে
একফোঁটা সৌন্দর্যের জন্যে।


হুমায়ুন আজাদ




যে টেলিফোন আসার কথা

কবিতাটা পড়ে মনটাই খারাপ হয়ে গেলো :(

যে টেলিফোন আসার কথা সে টেলিফোন আসেনি।
প্রতীক্ষাতে প্রতীক্ষাতে
সূর্য ডোবে রক্তপাতে
সব নিভিয়ে একলা আকাশ নিজের শূন্য বিছানাতে।
একান্তে যার হাসির কথা হাসেনি।
যে টেলিফোন আসার কথা আসেনি।

অপেক্ষমান বুকের ভিতর কাঁসরঘন্টা শাখেঁর উলু
একশ বনের বাতাস এসে একটা গাছে হুলুস্থুলু
আজ বুঝি তার ইচ্ছে আছে
ডাকবে আলিঙ্গনের কাছে
দীঘির পাড়ে হারিয়ে যেতে সাঁতার জলের মত্ত নাচে।
এখনো কি ডাকার সাজে সাজেনি?
যে টেলিফোন বাজার কথা বাজেনি।

তৃষ্ণা যেন জলের ফোঁটা বাড়তে বাড়তে বৃষ্টি বাদল
তৃষ্ণা যেন ধূপের কাঠি গন্ধে আঁকে সুখের আদল
খাঁ খাঁ মনের সবটা খালি
মরা নদীর চড়ার বালি
অথচ ঘর দুয়ার জুড়ে তৃষ্ণা বাজায় করতালি
প্রতীক্ষা তাই প্রহরবিহীন
আজীবন ও সর্বজনীন
সরোবর তো সবার বুকেই, পদ্ম কেবল পর্দানশীন
স্বপ্নকে দেয় সর্বশরীর, সমক্ষে সে ভাসে না।
যে টেলিফোন আসার কথা সচরাচর আসে না।

পুর্ণেন্দু্ পত্রী

যাত্রাভঙ্গ

হাত বাড়িয়ে ছুইনা তোকে মন বাড়িয়ে ছুই
দুইকে আমি এক করিনা এক কে করি দুই
হেমের মাঝে শুইনা যবে প্রেমের মাঝে শুই
তুই কেমন করে যাবি?
পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া, আমাকে তুই পাবি
তবুও তুই বলিস যদি যাই
দেখবি তোর সম্মুখে পথ নাই
তখন আমি একটু ছোব
হাত বাড়িয়ে জড়াব তোর বিদায় দুটি পায়ে
তুই উঠবি আমার নায়ে? আমার বৈতরণির নায়ে
নায়ের মাঝে বসবো বটে নায়ের মাঝে শোব
হাত দিয়েতো ছোবনা মুখ, দুঃখ দিয়ে ছোব।

নির্মলেন্দু গুণ

Friend

Art thou abroad on this stormy night
on thy journey of love, my friend?
The sky groans like one in despair.

I have no sleep tonight.
Ever and again I open my door and look out on
the darkness, my friend!

I can see nothing before me.
I wonder where lies thy path!

By what dim shore of the ink-black river,
by what far edge of the frowning forest,
through what mazy depth of gloom art thou threading
thy course to come to me, my friend?

Rabindronath Tagore

Stoping by Woods on a Snowy Evening

দিনগুলো তার মত করেই যাচ্ছে আর আমি আমার মতই আছি। একটা কাজ শুরু করেছিলাম অনেকদিন আগে,শেষটা কিছুতেই নামাতে পারছিনা। অথচ মানুষ হিসেবে এখনো অনেক কিছু করার বাকি রয়ে গেছে। ফ্রস্টের শেষের লাইনগুলো পড়লে বুকের ভেতরটা হিম হয়ে আসে , miles to go before I sleep.........
Whose woods these are I think I know.
His house is in the village, though;
He will not see me stopping here
To watch his woods fill up with snow.
My little horse must think it queer
To stop without a farmhouse near
Between the woods and frozen lake
The darkest evening of the year.

He gives his harness bells a shake
To ask if there is some mistake.
The only other sound's the sweep
Of easy wind and downy flake.
The woods are lovely, dark and deep,
But I have promises to keep,
And miles to go before I sleep,
And miles to go before I sleep.

Robert Frost

গুচ্ছ কবিতা

মাঝে মাঝে ছেলেমানুষী কবিতা ভাললাগে। কদিন ধরে কার্নেগীর রচনাসমগ্র পড়তে পড়তে মন বিষন্ন হয়ে উঠেছে। আজ হঠাৎ রুদ্র'র কবিতা মনে পড়ছে -


১.

থাকুক তোমার একটু স্মৃতি থাকুক

একলা থাকার খুব দুপুরে

একটি ঘুঘু ডাকুক



২.

দিচ্ছো ভীষণ যন্ত্রণা

বুঝতে কেন পাচ্ছো না ছাই

মানুষ আমি, যন্ত্র না!



৩.

চোখ কেড়েছে চোখ

উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক।

রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্

কার প্রতীক্ষায় আছো


( প্রতিটি মানুষের জীবনেই বোধহয় এমন কিছু সময় আসে যখন অতিপ্রিয় জীবনটাও অর্থহীন মনে হয়।বি.বি.এ পড়ার সময়ে একদিন এক ইয়ারমেট প্রশ্ন করেছিল ," কেন দীপ জ্বেলে রাখি? কেন আশায় বুক বেঁধে রাখি ?" কোন সদুত্তর দিতে পারিনি। জীবনের অনেক অধ্যায় আছে যার পরিসমাপ্তি নেই। জীবনের অনেক চাওয়া আছে যার বাস্তবতা নেই। জীবনের অনেক গল্প আছে যার পরিণতি নেই। তবুও সময় তার মত করেই বয়ে যায় আর অনেকের মত আমিও কাল হবে এই প্রতীক্ষায় আরেকটা কালের অপেক্ষায় থাকি।৩৬৫ সূর্যডোবা মানে অনেকটা সময়। এক একটা সূর্যস্নানের সাথে স্রষ্টা চাইলে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু সব জীবনে গতি আসেনা। সব স্বপ্ন সূর্যওঠা দেখতে পায়না ।মাঝরাতে আচমকা জেগে উঠেই এলোমেলো লাগছে। কবির কথার রেশ ধরে নিজেকেই প্রশ্ন করি ,বলো, কার প্রতীক্ষায় আছো হে আমার দুঃখী শব্দাবলী, ঘুমহীন? )



বলো, কার প্রতীক্ষায় আছো হে আমার দুঃখী শব্দাবলী?

আমার ভেতরে নিশিদিন অগণিত শিশু

পাঠশালা যায় আসে বানায় রঙিন স্বপ্ন কবিতার বই

নিপুণ বাঁধাই জরিমোড়া।

নিশিদিন আমার ভেতরে শব্দ নিয়ে লুফোলুফি হয়

কৌতুক জলসায় মাতে গ্রাম্যবধুরা লোকালয়ে, স্বার্থপর

পারিনি তাদের আমি পরাতে এখনো কোনো

সুনিপুন পোশাক-আশাক, পারিনি দুলাতে আজো

কর্ণমূলে লোভনীয় কোনো মণিহার।



কার প্রতীক্ষায় কাটে বেলা? আমার আকাশে ওঠে

অগণিত জ্বলজ্বলে তারা, ওঠে চাঁদ মধ্য-রজনীতে

কোনোদিন ঢেলে দেয় জোৎস্না ঘরময়,

কুয়াশায় ভিজে বুক নাভিমূলে কোমল-কোমল পেলবতা

আড়ষ্ট কপোল-জোড় ভেজাই আদরে নির্দ্বিধায়,

বুলাতে পারিনি তবু পরিত্যক্ত শিয়রে তাদের

কোনোদিনও মোমের আঙুল।



বলো কার প্রতীক্ষায় হে আমার শব্দাবলী গনগনে

জাগ্রত শিশুর কান্না শুনে কাটাও রজনী অবিশ্রাম?

ভেতরে আমার নিশিদিন পদধ্বনি বেজে ওঠে কার,

কার নিত্য আগমন আমাকে ভুলিয়ে রেখে বেশ

নিয়মিত ঘর-গেরস্থালী সাজায় আদরে,বলো

কার প্রতীক্ষায় আছো হে আমার দুঃখী শব্দাবলী

ঘুমহীন?

বিমল গুহ

প্রতিদান

( সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ শরীরটা বিদ্রোহ করে উঠলো।কিছুতেই ঘুম আসছে না। ভাঙ্গাচোরা শরীরের ভারে ম্রিয়মান মগজের কোষ থেকে থেকে থেকে ভেসে আসছে কিছু চরণ । এস.এস.সি'র বাংলা বইয়ে ছিল। তারই পুরোটা তুলে দিলাম আকাশের ঠিকানায় )


আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর,
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।

যে মোরে করিল পথের বিবাগী;
পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি;

দীঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হরেছে মোর;
আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা, আমি বাঁধি তার ঘর।

আমার এ কুল ভাঙ্গিয়াছে যেবা আমি তার কুল বাঁধি,
যে গেছে বুকেতে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি;

যে মোরে দিয়েছে বিষে ভরা বাণ,
আমি দেই তারে বুক ভরা গান,

কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম ভর,
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।

মোর বুকে যেবা কবর বেঁধেছে আমি তার বুক ভরি,
রঙ্গীন ফুলের সোহাগ-জড়ানো ফুল-মালঞ্চ ধরি।

যে মুখে সে কহে নিঠুরিয়া বাণী,
আমি লয়ে সখী তার মুখখানি,

কত ঠাঁই হতে কত কি যে আনি সাজাই নিরন্তর,
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।

জসীমউদ্দীন

আমিও শোকার্ত

আমিও শোকার্ত । দ্যাখো কালো ফিতে এঁটেছি জামায়
সযত্নে। আমার কন্ঠ বার বার হাহাকার তোলে, আহা
মৃত্ব্যুর এমন
নগ্নরুপ জীবনে দেখিনি।
আমিও শোকার্ত। তাই পথ চলতে কখনো উদাস
দু'চোখ আকাশে রাখি,
অফিসে অথবা
ঘরের চায়ের ঠাটে
ক্লান্ত ঠোঁট অলস চুমুক কেঁপে ওঠে কখনো কখনো ।

আমিও শোকার্ত তাই আর্তের সেবায়
যখন যাদের দেখি অগ্রসর
অপার উৎসাহ দেই অনায়াসে
" এসো , খোদা হাফেজ : তোমরাই
তোমাদের আত্নদানে জানি
সারাদেশে জ্বেলে যাবে গৌরবের শিখা !
আমি এই শোকের মিছিলে সঙ্গী বটে, তবে
যখন অসহ্য হয়
শুধু শোক যখন আমার
অস্তিত্বকে ঢেকে দেয়
তখন কেবল
তখন কেবল এই কালো ফিতে বড় ..বড়, আরো বড় করে
একটি বড় কাফন বানাই
শোকের কাফন।
সারা শোক কাফনে আবৃত করি এবং ঘুমাই
শান্ত হয়ে। যেমন দেখেছি
মৃতের গলিত শব শ্বেত বস্ত্রে নিজেকে লুকিয়ে
লোকালয় আর সব কোলাহল থেকে
দূরে সরে নিশ্চিন্তে ঘুমায়।


আহসান হাবীব

প্রিয়তমাসু

খুব প্রিয় একটি কবিতা, আকাশের ঠিকানায় তুলে দিলাম যদি কারো ভাললেগে যায় ..........

তোমার দু'হাতে ফুল তুলে দেবো এই ছিল সাধ
হাতে নিয়ে হাত আংটি পরাবো এই ছিল সাধ
তুমি শুধু বলো , ফুল নয় , চাই ভাত , দাও ভাত।
আংটিও নয় ভাতে ভরে দাও আমার দু'হাত।

সাগরের তীরে বসবো দু'জন এই ছিল সাধ
মনে ছিল সাধ তোমাকে দেখাবো আকাশের চাঁদ
তুমি শুধু বলো সাগর চাইনা
আকাশের চাঁদ কি হবে আমার
একটি পাতার ঘর তুলে দাও রাতে ঘুমোবার।

মনে ছিল সাধ গজোমতি হার
পরিয়ে তোমায় ঘরে নিয়ে যাবো,
তুমি বলো , দাও ছেঁড়া কাঁথা ছুঁড়ে লজ্জা বাঁচাবো।
মনে সাধ ছিল ময়ুরপঙ্খী নায়ে তুলে নিয়ে
সাগরে ভাসবো, তুমি দুটি হাত সামনে এগিয়ে
বললে, আমার খেয়া পারাবার কড়ি হাতে নাই
সারাদিন এই পারাপার আছে কিছু কড়ি চাই।

তোমাকে আমার রানী করে নেবো এই সাধ ছিল
তোমাকে আমার ঘরণী বানাবো এই সাধ ছিল
মনে সাধ ছিলো সঙ্গিনী হবে সখের মেলায়
তুমি মেতে গেলে কালো অঞ্চলে ভাত
কুড়োবার মরণ খেলায়।


আহসান হাবীব

একবার বলেছি তোমাকে

কবিতাটার প্রথম চার লাইন খুবই প্রিয় । সত্যিই তো একবার যা বলেছি তা কি ফেরানো যায় ? নাকি ফেরানো উচিত ? আমি বলি, ভালবাসার অপর পিঠেও ভালবাসা আছে।



"একবার বলেছি তোমাকে আমি ভালোবাসি
একবার বলেছি তোমাকে আমি , তোমাকেই ভালবাসি।
বলো
এখন সে কথা আমি ফেরাবো কেমনে !
আমি একবার বলেছি তোমাকে ....
এখন তোমাকে আমি ঘৃণা করি।
এখন তোমার
দৃষ্টির কবলে এলে ক্ষতস্থান জ্বলে জ্বলে ওঠে।
তোমার সান্নিধ্যে এলে তুমি উষ্ণ নাভিমূল থেকে
বাতাসে ছড়াও তীব্র সাপিনীর তরল নিশ্বাস।
আমি যতবার ছুটতে যাই , তোমার দৃষ্টির বাইরে যেতে চাই, তুমি
দু'চোখে কী ইন্দ্রজাল মেলে রাখো ! আমি ছুটতেও পারি না
আমি ফেরাতে পারি না কথা
আমি একবার বলেছি, তোমাকে ....

সম্রাজ্ঞীর বেশে আছো । নতজানু আমি
দাসানুদাসের ভঙ্গী করপুটে, দেখি
তোমার মুখের রেখা অবিচল, স্হির জঙ্ঘা তোলে না টন্কার,
তুমি পবিত্রতা পবিত্রতা বলে
অস্পষ্ট চীৎকার করো , তুমি
কেবলি মালিন্য দেখো, অশ্লীলতা ক্রমান্বয়ে ঘৃণা
ক্রোধ বাড়ে, উত্তেজনা বাড়ে
নামে উষ্ণ জলস্রোত। তুমি
এইভাবে প্রবল ঘৃণায়
আমাকে ভাসিয়ে দিয়ে অহন্কার রাখতে চাও অটুট। তবুও
পৃথিবীতে আছে কিছু মানুষের অবস্থান, তারা
অপমানে ধন্য হয়
উপেক্ষায় ঋজু ;
তারা স্বভাব - কাঙাল ! যদি
একবার বলে তবে ফেরাতে পারে না। আমি
ফেরাতে পারি না । আমি
একবার বলেছি, তোমাকে আমি ভালোবাসি।


ভালোবাসা, ভালোবাসা, ভালোবাসা !
ভালোবাসা ! সে কেমন, কোন দ্রীপ স্বর্গীয় প্রতাপ
যার মৃত্ব্যু ন্ই
জন্মান্তর নেই ?


আহসান হাবীব

Fire and Ice


Some say the world will end in fire,
Some say in ice.
From what I've tasted of desire
I hold with those who favour fire.
But if it had to perish twice,
I think I know enough of hate
To say that for destruction ice
Is also great
And would suffice.

Robert Frost

The Road Not Taken

একটা কাজ কিছুতেই শেষ করতে পারছি না , কেন যে পারছি না .........কেবলই মনে হচ্ছে যদি মুঠোফোনটা বেজে উঠতো।ম্যাসেন্জারে কথা বলার সময় প্রিয় বন্ধুটিকে প্রায়ই জিজ্ঞেস করতাম কি করছো । উত্তরটা সবসময়ই একই আসতো Browse korsi.
অনেক দিন আগে সেই স্কুলে পড়ার সময় রর্বাট ফ্রস্ট এর একটি কবিতা কোন কারন ছাড়াই ভাললেগেছিল। আজ কেন জানিনা
সে কবিতাটাই বার বার মনে পড়ছে ..........
Two roads diverged in a yellow wood,
And sorry I could not travel both
And be one traveler, long I stood
And looked down one as far as I could
To where it bent in the undergrowth;
Then took the other, as just as fair,
And having perhaps the better claim,
Because it was grassy and wanted wear;
Though as for that the passing there
Had worn them really about the same,
And both that morning equally lay
In leaves no step had trodden black.
Oh, I kept the first for another day!
Yet knowing how way leads on to way,
I doubted if I should ever come back.
I shall be telling this with a sigh
Somewhere ages and ages hence:
Two roads diverged in a wood, and I-
I took the one less traveled by,
And that has made all the difference.

Robert Frost

নির্ভয়

আমরা দুজনা স্বর্গ-খেলনা গড়িব না ধরণীতে
মুগ্ধ ললিত অশ্রুগলিত গীতে।
পঞ্চশরের বেদনামাধুরী দিয়ে
বাসর রাত্রি রচিব না মোরা প্রিয়ে!
ভাগ্যের পায়ে দূর্বল প্রাণে ভিক্ষা যেন না যাচি ।
কিছু নাই ভয়, জানি নিশ্চয় - তুমি আছ, আমি আছি ।।

ঊড়াব উর্ধ্বে প্রেমের নিশান দূর্গম পথমাঝে
দুর্দম বেগে, দু:সহতম কাজে।
রুক্ষ দিনের দু:খ পাই তো পাব,
চাই না শান্তি, সান্ত্বনা নাহি চাব।
পাড়ি দিতে নদী হাল ভাঙে যদি, ছিন্ন পালের কাছি,
মৃত্যুর মুখে দাঁড়ায়ে জানিব - তুমি আছ, আমি আছি।।


দুজনের চোখে দেখেছি জগৎ, দোঁহারে দেখেছি দোঁহে -
মরুপথতাপ দুজনে নিয়েছি সহে।
ছুটি নি মোহন-মরীচিকা-পিছে-পিছে,
ভুলাই নি মন সত্যেরে করি মিছে -
এই গৌরবে চলিব এ ভবে যতদিন দোঁহে বাঁচি।
এ বাণী , প্রেয়সী , হোক মহীয়সী _ তুমি আছ, আমি আছি ।।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


ভালবাসার অনেক রকম হয়, অনেক ধরন হয়। কিছু সর্ম্পকের কোন নাম থাকেনা। কিছু ভালবাসার কোন ধরন থাকেনা । তারপরও দুটি মানুষ দুটি মানুষের জন্য কষ্ট পায় । আমার খুব প্রিয় একটা কবিতা । প্রথম প্যারার শেষের চরণ দুটো বুকে বড্ড বেশি বাজে ........

ভাগ্যের পায়ে দূর্বল প্রাণে ভিক্ষা যেন না যাচি ।
কিছু নাই ভয়, জানি নিশ্চয় - তুমি আছ, আমি আছি ।।

প্রেসক্রিপশন


মা গো শুনছো তুমি ? আমি তোমার খোকা।

ভাবছো বুঝি ভুল শুনেছো , এতই কি আর সোজা !

খোকা আমি , তোমার খোকা, আসছি তোমার কোলে

রাত ছাড়িয়ে দুই প্রহরে ভাসবো বুকের জলে।

কুয়োর পাড়ে যেওনা কো তুলতে স্নানের জল

পেটটাতে ঠিক চালান দিয়ো রঙিন যত ফল।

আরো খেয়ো শাক-সবজী, মাছ-মাংস, ডিম

মুখের হাসি চাই ই চাই, হয়না যেন মলিন।

নিয়মিত চেক আপ করো হয়না যেন ভুল,

টিকাগুলো না নাও যদি সব হবে ভন্ডুল।

ভারী জিনিস তুলবে না মা, থাকবে নাকো বসে,

ছোট ছোট ব্যস্ততায় সময় কাটাও শেষে।

নিয়ম মেনে ঠিক মত সব করো যদি কাজ.

তবেই আমি আসবো জেনো কাল অথবা আজ।

হাত-পা ছেড়ে খেলবো আমি তোমার আচঁল ছুয়েঁ

এই যা আসল কথাই বলতে গেছি ভুলে,

প্রশিক্ষিত দাই-মা আর রক্ত রেডি চাই,

লক্ষী ঘরটায় পয়সাগুলোয় একটু দিও ঠাঁই।

ওমা তুমি আস্তে চলো, নয়তো বিপদ হবে

কাদায়-জলে পড়লে মাগো তখন কি হবে?


( মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আমাদের মেয়েদের অবনতির জন্য , নির্যাতনের জন্য পুরুষের পাশাপাশি আমরাও সমান ভাবে দায়ী। কাল একটা ঘটনা শুনলাম। প্রসব ব্যাথা শুরু হয়েছে চারদিন আগে। হাসপাতালে তো নেয়নি উল্টো প্রসবের পর ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে। ফলস্রুতিতে জীবন থেকে অকালে ছুটি নিতে এতটুকুও দেরী হয়নি। পৃথিবীতে জন্ম হলো আরেকটা মাতৃহীন শিশুর। এ অপরাধের দায়ভার কে নেবে ?


কবি হবার জন্য কবিতা লেখা নয়, মাথার মধ্যে যে কথারা ঘোরাফেরা করে তারা ঠিকমত ঘুমাতে দেয়না বলেই ঝেড়ে ফেলা। এর বেশি কিছু নয়। অতএব কারো চোখে যদি আচমকা পড়েই যায় নাক সিঁটকাবেন না। এটা সম্পূর্ণই আমার ব্যক্তিগত ব্লগ)

দু:খকে স্বীকার করো না

দু:খকে স্বীকার করো না, সর্বনাশ হয়ে যাবে।
দু:খ করো না , বাঁচো, প্রাণ ভরে বাঁচো।
বাঁচার আনন্দে বাঁচো। বাঁচো , বাঁচো এবং বাঁচো।

জানি মাঝে মাঝেই তোমার দিকে হাত বাড়ায় দু:খ
তার কালো লোমশ হাত প্রায়শই তোমার বুক ভেদ করে
চলে যেতে চায়, তা যাক, তোমার বক্ষ যদি দু:খের
নখরাঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়, যদি গল গল করে রক্ত ঝরে
তবু সেই দু:খের হাতকে প্রশয় দিও না।
তার সাথে করমর্দন করোনা, তাকে প্রত্যাখান করো।

অনুশোচনা হচ্ছে পাপ দু:খের নিপূণ ছদ্মবেশ
তোমাকে বাঁচাতে পারে আনন্দ । তুমি তার হাত ধরো,
তার হাত ঘরে নাচো, গাও, বাঁচো, স্ফুর্তি করো।
দু:খকে স্বীকার করোনা, মরে যাবে।
যদি মরতেই হয় আনন্দের হাত ধরে মরো। সেই ভালো,
বলো দু:খ নয়, আনন্দের মধ্যে আমার জন্ম,
আনন্দের মধ্যেই আমার মৃত্ব্যু, আমার অবসান।


নির্মলেন্দু গুণ

তুমি যেখানেই যাও

তোমাকে যখন দেখি তার চেয়ে বেশি দেখি
যখন দেখিনা
শুকনো ফুলের মালা যে রকম বলে দেয়
সে এসেছে
চড়ুই পাখিরা জানে
আমি কার প্রতিক্ষায় বসে আছি
এলাচের দানা জানে
কার ঠোঁট গন্ধময় হবে
তুমি ব্যস্ত, তুমি একা, তুমি অন্তরাল ভালবাসো
সন্ন্যাসীর মত হাহাকার করে উঠি
দেখা দাও, দেখা দাও,
পরমুর্হুতেই ফের চোখ মুছি
হেসে বলি,
তুমি যেখানেই যাও সঙ্গে আছি !


সূনীল গঙ্গোপাধ্যায়

ক্ষরণ

তুমি কি শুনতে পাও হৃদয়ের ক্ষরণ আমার?
বুক পকেটে মিয়োনো কাগজের নোট,
কাপড়ের প্রাচীর, মাটিতে মোড়ানো
ঘামে ভেজা শরীরের চামড়া ভেদ করে
আর একটু এগিয়ে গেলে হৃদপিন্ডের দেশ থেকে
বৃষ্টির মত টুপটাপ ঝরে পড়ে তোমার প্রত্যাখান,
নিলয়ের আকাঁবাকাঁ পথ বেয়ে দু:স্বপ্নের মত উবে যায়
গাংচিল ভালবাসা,
কাকেদের ধূসর ঈষৎ খয়েরী ডানায় ,
ঘাসেদের নরম বুকে, ধানগাছের মত রুক্ষ অবয়বে
খসখস করে বেজে চলে রাগ-ক্ষোভ-ঘৃণা,
নোনা জল আরো নোনা হয়,
চোখের নদী সাতঁরে দীর্ঘশ্বাসেরা
আঙ্গুলে, কব্জিতে, শিরায় শিরায় যেন ফিসফিস করে বলে যায় -
ক্ষুর্ধাতের গ্রাসের মূল্য অপরিসীম,
তারচেয়েও দুষ্পাপ্য নির্ভেজাল ভালবাসা,
পৃথিবীর সমস্ত ব্যাংক এ্যাকাউন্ট মর্টগেজ রেখেও
নিবৃত্ত হয়না ভালবাসার ক্ষুধা ।



আজকাল কোথাও লিখতে ইচ্ছে হয়না। তাই ফেসবুকে তুলে দিলাম। নইলে কথারা মাথার মধ্যে ঘুরছিলো :(
লিংক :http://www.facebook.com/inbox/?drop&ref=mb#/note.php?note_id=166610420999

স্রোত


দাদা চলে গেল ভাবলাম এখনো ঢের পথ বাকি
বুড়ো মানুষ বেঁচে থেকেই বা কি হতো,
খামোখা পৃথিবীর জঞ্জাল বাড়ানো,
অপরের পিঠে বোঝা ।।

দাদী’কে চোখে দেখিনি, নানা নানী দুজনেই
পৃথিবীর বুকে আমার প্রথম আবির্ভাবের আগে হয়তো বা একআধবার
আকাশের ঠিকানায় কথা হয়েছে,
কি জানি মনে করতে পারিনা,
বড় হয়ে বুঝেছি তারা চলে যায়,
সময় হয়েছে যাবার।।

যেদিন বাবা চলে গেলেন, চোখ তুলে দেখলাম
মাথার উপর ছাদের মত মা আছে,
এখনো অনেক সময়,
তারপর সেও একদিন...............
কবরের উপর কান পেতে চুপিচুপি বলি,
মাগো, শুনতে কি পাও?
চারপাশে ফের দেখি কেউ যাবার অপেক্ষায় আছে কিনা।।

প্রিয় বন্ধু সজল, ভার্সিটির এক ইয়ার জুনিয়র সেই মেয়েটা
যার কালো চুলে আমার ভালবাসারা দোল খেতো বাতাসের মত,
দুজনে ছুটতে গিয়ে চাপা পড়লো ট্রাকের তলায়,
মনে মনে বললাম, অপরের ভালবাসা দু’পায়ে দললে এমনই হয়।।

মুদি দোকানের মালিকটা, পাশের বাড়ির ভদ্রলোক,
নতুন ভাড়াটের সদ্য জন্মানো শিশুটা সব একে একে
চলে গেলে ভাবলাম
জন্মিলেই মরিতে হইবে, অতি পুরাতন ফিলসফি,
যেদিন গিন্নীও যাই বলে আর ফিরলো না, বুঝলাম
এবার বুঝি সময় হলো,
যেদিন খোকা চলে গেল সেদিন বুঝলাম
অনেক আগেই যাওয়া উচিত ছিল, বড্ড দেরী করে ফেলেছি।।


(কিছুদিন আগে লাইনগুলো ঘুরে ফিরে মাথার মধ্যে আসছিল। ঝেড়ে ফেললাম )

অপরান্হে

তোমার মুখের পাশে কাঁটাঝোপ একটু সরে এসো
এ পাশে দেয়াল , এত মাকড়সার জাল!
অন্য দিকে নদী , নাকি ঈর্ষা ?
আসলে ব্যস্ততাময় অপরান্হে ছায়া ফেলে যায় বাল্যপ্রেম
মানুষের ভিড়ে কোন মানুষ থাকে না
অসম্ভব নির্জনতা, চৌরাস্তায় বিহবল কৈশোর
এলোমেলো পদক্ষেপ, এতদিন পর তুমি এলে ?
তোমার মুখের পাশে কাঁটাঝোপ, একটু সরে এসো!


সূনীল গঙ্গোপাধ্যায়

ভাবছি


কেমন কেটেছিল ১৪১৬'র প্রথম দিন?

অনুষ্ঠানসূচি:

হাফ বিরিয়ানী
হাফ ডিম
হাফ মাছ
হাফ ফুসকা
ফুল আইসক্রীম
এবং অত:পর ঘড়ঘড় গড়গড় মেজাজের তীর...............

বৌশাখ শেষ :(

কেমন কাটবে ১৪১৭ এর প্রথম দিন :(

..............

মাঝে মাঝে ঘুম থেকে উঠে সব ভুলে যাই । খানিকক্ষণ চোখ মেলে আশেপাশে তাকাই সিনেমার নায়িকার মত। আমি কে, কোথায় ছিলাম, এখানে কেন ইত্যাদী প্রশ্নগুলো একে একে বিনেসুতোর মালার মত মনে ঘুরপাক খেতে থাকে। তারপর অনেকটা সময় পার করে স্মৃতিরা বেড়ানো শেষ করে ক্লান্ত হয়ে মাথার বিছানায় শুয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে সব মনে পড়তে থাকে। কখনো কখনো ভুল বাংলা বলি। উদাহরণের ফুল ফোটালেই গণধোলাই খেতে হবে। তবুও চুপিচুপি একটু লিখে যাই " হালেদা-খাসিনা, মুড়-গুড়ি, আশাক,বাশিল " ইত্যাদী তদ্যাতী। বেশকিছুদিন আগে টিভিতে একটা এ্যাড দেখলাম। ফেয়ার এ্যান্ড লাভলীর এ্যাড, আমি বলি হাই । এ্যাড দেখেতো আমি হেসেই কুটি কুটি। হাই' এর ঠেলায় উপর তলার ভুঁড়ি ভূগর্ভে বিলীন হয়ে গেলো। আমি ভাবি শক্তিটা আসলে কোথায় সৌন্দর্য্যে নাকি সৌন্দর্য্যের অধিকারিনীর? সুন্দর হলেও মানুষ অনেক সময় ভালবাসে না। আবার খুব পচা দেখতে কেউ তাকেও ভালবাসে মনপ্রাণ উজাড় করে। তাহলে শক্তি টা কোথায় সৌন্দর্য্যে না ভালবাসায়? না মনের জোর যা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়? কি সে? এতসব ভাবনার গাড়ি ছুটিয়ে অবশেষে ক্লান্ত হয়ে যাই। ক্লান্তিতে ভর করে Take care...........


কিছুদিন আগে আমার Take care রোগে ধরলো। সারাক্ষন কানের কাছে কে যেন ফিসফিস করে বলে Take care, Take care। আমি দৌড়ে ছুটে যাই, লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়িদের বুক ভাঙ্গি। কানের কাছে ফিসফিস শব্দ হয় Take care, Take care, Take care। এ্যাডের গল্পটা মনে পড়ে যায়। হয়তো কখনো পড়তে ভুলে গেছি, কে যেন বলে , মেঘলা, তুমি আজ পড়তে বসোনি। পরক্ষণেই এক মগ কফি খেয়ে পড়তে বসে যাই। দাতঁ ব্রাশ করতে দেরী হয়ে গেছে। কানের কানে বেজে ওঠে Take care, Take care, Take care। ছুটে ব্রাশ করে আসি। চিরুনীর সাথে চুলেদের খুব একটা দেখা হয় না। ভেজা চুলে এলোমেলো, এলোমেলো আবার ভিজে ওঠা। শুকিয়ে যায়, রোদ ওঠে ,বর্ষা নামে, আবার রোদ। তবুও চিরুনীর না আসা । এমনি করেই কাটে। চুলের নদীতে ঢেউ তোলে Take care। আমি আয়নায় নিজেকে দেখি চিরুনীর সাথে সখ্যতায়.........



তিনদিন পর পরীক্ষা। কিছুতেই মন বসছে না। তপ্ত দুপুরেও ঘুমে জড়িয়ে আসে দু'চোখ। বইয়ের পাতারা ছুটির দরখাস্ত নিয়ে বসে থাকে। আমি মাথাটাকে বালিশে এলিয়ে সে দরখাস্তে দস্তখত দেই। ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যাই। ঘুম ভেঙ্গে মনে পড়ে না কিছুই। কানের কাছ থেকে প্রিয় শব্দটা দূরে, অনেক দূরে সরে যায়। কোথায় আছে Take care?

প্রিয় পংক্তিমালা

এখন দিন গিয়েছে। অন্ধকার হয়ে আসে। একদিন এই পথকে মনে হয়েছিল আমারই পথ, একান্তই আমার ; এখন দেখিছি , কেবল একটি বার মাত্র এই পথ দিয়ে চলার হুকুম নিয়ে এসেছি, আর নয়।
নেবুতলা উজিয়ে সেই পুকুরপাড়, দ্বাদশ দেউলের ঘাট, নদীর চর, গোয়ালবাড়ি, ধানের গোলা পেরিয়ে- সেই চেনা চাউনি, চেনা কথা, চেনা মুখের মহলে আর একটি বারও ফিরে গিয়ে বলা হবে না" এইযে ! এ পথ যে চলার পথ, ফেরার পথ নয়।"

আজ ধূসর সন্ধ্যায় একবার পিছন ফিরে তাকালুম ; দেখলুম, এই পথটি বহু বিস্মৃত পদচিন্হের পদাবলী, ভৈরবীর সুরে বাঁধা।
যতকাল যত পথিক চলে গেছে তাদের জীবনের সমস্ত কথাকেই এই পথ আপনার একটি মাত্র ধূলি রেখায় সংক্ষিপ্ত করে একেঁছে ; সে একটি রেখা চলেছে সূর্যোদয়ের দিক থেক সূর্যাস্তের দিকে এক সোনার সিংহদ্বার থেকে আর এক সোনার সিংহদ্বারে।

( লেখক লুৎফর রহমান না ফজলুল করিম ঠিক মনে নেই। তবে দুজনের একজন অবশ্যই।কথাগুলো আমার খুব প্রিয়। পড়তে পড়তে মন ভাল হয়ে যায়। আর একটা প্রশ্ন জাগে, জীবন-মৃত্ব্যুর মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে আমরা কে , কতটুকু এর সঠিক বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পেরেছি । ধ্বংসের জন্যেই কি সৃষ্টি ?)

প্রিয় পংক্তিমালা

তুমি প্রতিবার আমাকে দাও আগের বারের চেয়েও বেশী। যত বেদনা নিয়েই বিদায়ের সময়টা আসুক না কেন, পথে যেতে যেতে ভাবি তুমি যে আনন্দ দিয়েছ এর বেশী আসছে বার কি দেবে ? তবু তুমি দাও, প্রতিবারেই দাও, বেশী করে দাও, উজাড় করে দাও। কি দাও তুমি? আমি অনেক বার ভেবেছি। উত্তর পাইনি।

"কত না হস্ত চুমিলাম আমি অক্ষমালার মত,
কেউ খুলিল না কিস্মতে ছিল আমার গ্রন্থি যত ।"

(দস্ত-ই-হর্-কসরা ব্ সানে সবহৎ বুসীদম্ চি সূদ
হীচ্ কস্ ন্ কশওদ আখির অক্ দয়ে কারে মরা )

ইরানী শের ।

( হৃদয় আকুল করা এই কথার বৃষ্টি যার মনের আকাশ কাঁপিয়ে ঝরেছিল সে শবনম এর। জানি না সে কখনো বাস্তবে ছিল কি না কিন্তু কল্পনার জাল বুনে সৈয়দ মুজতবা আলী যা সৃষ্টি করেছিলেন তা সত্যিই অতুলনীয় )

জন্ম হয়না মৃত্ব্যু হয়না

আমার ভালবাসার কোন জন্ম হয়না
মৃত্ব্যু হয়না
কেননা আমি অন্যরকম ভালোবাসার হীরের গয়না
শরীরে নিয়ে জন্মেছিলাম ,
আমার কেউ নাম রাখেনি, তিনটে
চারটে ছদ্মনামে
আমার ভ্রমণ মর্ত্যধীমে
আগুন দেখে আলো ভেবেছি, আলোয় আমার
হাত পুড়ে যায়
অন্ধকারে মানুষ দেখা সহজ ভেবে ঘূর্ণিমায়ায়
অন্ধকারে মিশে থেকেছি
কেউ আমাকে শিরোপা দেয়, কেউ দু’চোখে হাজার ছি ছি
তবুও আমার জন্ম-কবচ ভালোবাসাকে ভালোবেসেছি
আমার কোন ভয় হয় না
আমার ভালোবাসার কোন জন্ম হয় না, মৃত্ব্যু হয় না।

সূনীল গঙ্গোপাধ্যায়

কাল হবে

দিন যায়, রাত যায়। রাত যায়, দিন যায়।
আবার নতুন করে দিন আসে, রাত আসে।
আমি সময়ের চরের উপরে পা রেখে দাঁড়াই ।
কাল হবে, এই স্বপ্নিল বিশ্বাস ছড়াই বীজের মতো,
শষ্যরিক্ত উষর মাটিতে নবায়ন করি ভালবাসা।
ঘুমোতে যাবার আগে জানালার পর্দা তুলে দিয়ে
আকাশের মুখখানি দেখি । বড় মায়া জাগে বুকে ।
কে কাকে সান্ত্বনা দেবে ? আকাশও কি সুখী ?
মধ্যাকর্ষণ ভেদ করে আমাদের ব্যথা ও বেদনা
মহাশূন্যে মেশে, যেন দুটি দু:তপ্ত ব্যথিত হৃদয়।
আজ তো কিছুই হলো না, কাল হবে এই ভেবে
আমি ও আকাশ জড়াজড়ি করে সুখে নিদ্রা যাই।

নির্মলেন্দু গুণ


অসমাপ্ত কবিতা


এমন একটা ভোরে কারো জন্য মন খারাপ ছিল, ঠিক একবছর আগে। ঠিক ৩৬৫টি সূর্য ডোবার আগে একটা SMS এসেছিল। সময় কত দ্রুত বয়ে যায়, কেড়ে নেয় কতকিছু.............

পুড়ে খাক হয় আকাশ, পুড়ে খাক হয় নদী
এভাবেই ছুটে চলে জীবন অদ্যাবধি। "

রোবোকপের লেখা সবথেকে প্রিয় লাইন । কোন এক রাতে কদিন থেকে মাথায় ঘুরতে থাকা লাইনগুলোকে ঝেড়ে ফেলে সে ঘুমুতে গিয়েছিল।কারণ অনেককিছুই অসমাপ্ত থাকবে।

হিজিবিজি

আজকাল কখন, কোথায় কি পেঁচাই তার লিংকগুলো তুলে রাখছি। Time pass আরকি :)

http://www.sachalayatan.com/nazrul_islam/26536#comment-238120


এইটা দিয়া শুরু। আগের গুলা গিইলা খাইছি :(

আবার যাত্রা শুরু হইলো
http://www.sachalayatan.com/tuli1/28884
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/28895
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/28983
http://www.sachalayatan.com/ishtiaqrouf/28968
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/28976
http://www.sachalayatan.com/comment/reply/29473
http://www.sachalayatan.com/arifjebtik/29559

মানুষ


আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম,
হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়,
মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়।

আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি,
গাছের মত দাঁড়িয়ে থাকি।
সাপে কাটলে টের পাই না, সিনেমা দেখে গান গাই না,
অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না।
কী করে তাও বেঁচে আছি আমার মতো। অবাক লাগে।

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষ হলে জুতো থাকতো।
বাড়ি থাকতো, ঘর থাকতো,
রাত্রিবেলায় ঘরের মধ্যে নারী থাকতো,
পেটের পটে আমার কালো শিশু আঁকতো।

আমি হয়ত মানুষ নই,
মানুষ হলে আকাশ দেখে হাসবো কেন?
মানুষগুলো অন্যরকম, হাত থাকবে,
নাক থাকবে, তোমার মতো চোখ থাকবে,
নিকেলমাখা কী সুন্দর চোখ থাকবে।

মানুষ হলে উরুর মধ্যে দাগ থাকতো,
চোখের মধ্যে অভিমানের রাগ থাকতো,
বাবা থাকতো, বোন থাকতো,
ভালবাসার লোক থাকতো,
হঠাৎ করে মরে যাবার ভয় থাকতো।

আমি হয়তো মানুষ নই,
মানুষ হলে তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখা
আর হতো না, তোমাকে ছাড়া সারাটা রাত
বেঁচে-থাকাটা আর হতো না।

মানুষগুলো সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়;
অথচ আমি সাপ দেখলে এগিয়ে যাই,
অবহেলায় মানুষ ভেবে জাপটে ধরি।


নির্মলেন্দু গুণ

I Have Dreamed of You so Much

I have dreamed of you so much that you are no longer real.
Is there still time for me to reach your breathing body, to kiss your mouth and make
your dear voice come alive again?

I have dreamed of you so much that my arms, grown used to being crossed on my
chest as I hugged your shadow, would perhaps not bend to the shape of your body.
For faced with the real form of what has haunted me and governed me for so many
days and years, I would surely become a shadow.

O scales of feeling.

I have dreamed of you so much that surely there is no more time for me to wake up.
I sleep on my feet prey to all the forms of life and love, and you, the only one who
counts for me today, I can no more touch your face and lips than touch the lips and
face of some passerby.

I have dreamed of you so much, have walked so much, talked so much, slept so much
with your phantom, that perhaps the only thing left for me is to become a phantom
among phantoms, a shadow a hundred times more shadow than the shadow the
moves and goes on moving, brightly, over the sundial of your life.

- Robert Desnos

ভাললাগে

The Rainbow

William Wordsworth



My heart leaps up when I behold
A Rainbow in the sky:

So was it when my life began;
So is it now I am a man;
So be it when I shall grow old,
Or let me die!

The Child is father of the man;
And I could wish my days to be

I wandered lonely as a cloud

I wandered lonely as a cloud
That floats on high o'er vales and hills,
When all at once I saw a crowd,
A host, of golden daffodils;
Beside the lake, beneath the trees,
Fluttering and dancing in the breeze.

Continuous as the stars that shine
And twinkle on the milky way,
They stretched in never-ending line
Along the margin of a bay:
Ten thousand saw I at a glance,
Tossing their heads in sprightly dance.

The waves beside them danced; but they
Out-did the sparkling waves in glee:
A poet could not but be gay,
In such a jocund company:
I gazed---and gazed---but little thought
What wealth the show to me had brought:

For oft, when on my couch I lie
In vacant or in pensive mood,
They flash upon that inward eye
Which is the bliss of solitude;
And then my heart with pleasure fills,
And dances with the daffodils.

William Wordsworth

প্রিয় পংক্তিমালা

Wo sunta to main kehta, mujhe kuch aur kehna tha,
wo pal bhar ko jo ruk jata, mujhe kuch aur kehna tha

kamaie zindagi bhar ki, usi k naam to kar di
mujhe kuch aur karna tha, mujhe kuch aur kehna tha

kahan us ne suni meri, suni b un-suni kar di
usay maloom tha itna, mujhe kuch aur kehna tha

rawan tha piyar meri ragoon main, bohat qurbat thi apis main
usay kuch aur sun-na tha, mujhe kuch aur kehna tha

ghalat fehmi ne baton ko barha dala younhi warna
kaha kuch tha, wo kuch samjha, mujhe kuch aur kehna tha



..................................




প্রিয় পংক্তিমালা



Dil ki koi baat to ho
Ek apni aisi raat to ho
Jab tum saamne bethe ho
Pal ki sahi maulaqaat to ho
Jab tum saamne bethe ho
Pal ki sahi maulaqaat to ho
Jab tum saamne bethe ho
Pal ki sahi maulaqaat to ho

........................

Thokar khate hain aur muskurate hain,
Is Dil ko sabr karna sikhate hain.
Hum to dard lekar bhi logon ko yaad karte hain,
Aur loog dard dekar bhi bhool jaate hain

.........................


Na tujhe chorr sakte hain tere ho bhi nahi sakte
Yeh kaisi bebasi hai aaj hum ro bhi nahi sakte

Yeh kaisa dard hai pal pal hamain tarpaye rakhta hai
Tumhari yaad aati hai to phir so bhi nahi sakte

Chhupa sakte hain aur na dikha sakte hain logon ko
Kuch aise daagh hain Dil per jo hum dho bhi nahi sakte

Kaha to tha chorr denge yeh nagar phir ruk gaye lekin
Tumhain paa to nahi sakte magar kho bhi nahi sakte

Hamara ek hona bhi nahi mumkin raha ab tooooo
Jeeyen kaise ke tum se door reh bhi nahi sakte.

................................

Abb kahan dost milein saath nibhaaney vaaley,

Sab nay seekhay hain abb adaab zamaaney vaaley,

Dil jalao ya diye aankhon kay darvaazey par,

Waqt say pehlay tou aatey nhi aaney vaaley,

Ashq bann kay main nigaahon mein teri aaoongaa,

Ai mujhay apni nigaahon say giraaney vaaley,

Waqt badla tou uthaatey hain abb ungli mujh par,

Kall talaq haq mein merey haath utthaaney vaaley,

Waqt har zakham ka marham tou nhi bann sakta,

Dard kuchh hotay hain ta-umar rulaaney vaaley,

........................

khuli jo ankh tou woh thaa na woh zamana thaa,
Dehkti aag thee tanhaayi thee fasana thaa,
Gamon ney baant liya mujhe yuun aapas mein,
Kay jaisay main koi loota hua khazana thaa,
Yeh kya chund hee qadmon par thak kay baith gaye,
Tumhein tou saath mera duur tak nibhana thaa,
Mujhe jo merey lahoo mein dubo kay guzra hai,
Woh koi gair nhin yaar ek poorana thaa,
Khud apney hee haath say uss ko kaat diya,
Kay jiss darakht kee tehni pay ashiyaana thaa,


....................
Kaun kehtaa hai tujhe mainay
bhulaa rakhaa hai.
Terii yaadon ko kaleje say
lagaa rakhaa hai
Lab pay aahein bhii nahiin
aankh mein aansuu bhii nahiin,
Dil nay har raaz mohabbat kaa
chhupaa rakhaa hai,
Tuuney jo dil kay andhere mein jalaayaa thaa kabhii,
Vo diyaa aaj bhii siinay mein jalaa rakhaa hai,

Dekh jaa aakay mehaktay huye zakhmon kii bahaar,
Mainay ab tak tere gulashan ko sajaa rakhaa hai,


........................

Na Neened Ati Hai Na Chain Ata Hai
Koyee To Bataye Aisa Kyu Hota Hai

Chalte Chalte Kadam Ruk Jate Hai
Jaise Koyee Awaaz De Raha Hota Hai
Chehra To Nazar Nahin Ata Hai
Lekin Kisi Ka Ehsas Wahan Hota Hai

Apnoo Ki Mehfil Me Begana sa Lagta Hun
Sub Ke Hote Hue Dil Na Jane
Kisi Ko Doondh Raha Hota Hai

Koyee To Bataye Aisa Kyun Hota Hai
Koi To Bataye Aisa Kyu Hota Hai

Kya Samjoon Is Dewane Pan Ko Main
Jo Her Lamha Mujhko Pagal Ker Raha Hota Hai
Koyee To Bataye Aisa Kyun Hota Hai
Koi To Bataye Aisa Kyun Hota Hai
Aisa Kyun Hota Hai

Na Neened Ati Hai Na Chain Ata Hai
Koyee To Bataye Aisa Kyun Hota Hai


..................

Thokar khate hain aur muskurate hain,
Is Dil ko sabr karna sikhate hain.
Hum to dard lekar bhi logon ko yaad karte hain,
Aur loog dard dekar bhi bhool jaate hain













sher

Ankhon se door hone ka koi gila nahi
Dil ke bouhat qarib ho kuch fasila nahi

Yaad rakho to dil ke paas hoon main
bhool jao to fasile hain bouhat

Mita do naam tak mera kitabe zindagi se tum
Magar pal pal roolayegi stayegi kami meriAgar maloom hota muhabbat ka anjam pahle se

...........................


Na dil diya hota na jaan diya hota


Kuch tuhi mere dard ka mafhoom samajh le


Hasta hua chehra zamane ke liye hai



Mana ki muhabbat ka izhar nahi karte


Tum ye na samajh lena ki ham peyar nahi karte
Dil me basai thi tasvir mita dena

.............................


Aankhon me basaya tha nazron me gira dena

Tum ko to wafa meri kuch raas na aai

Jati hoon tere dar se mujhko na sada dena

Jab tum se koi pooche baaten meri wafaon ki

Tum meri wafaon par ilzam laga dena

Fir oski tamanna keya jo gair ka ho jaye

Bas itni guzarish hai tum mujhko bhula dena

.........................


Mana ki muhabbat ka izhar nahi karte

Tum ye na samajh lena ki ham peyar nahi karte

Door bhaga na karo shoq gazalon ki tarah
Ham ne chaha hai tumhe chahne walon ki tarah

Shama ummid ki is dil me jlayen kaise
Apni muhbbat ka eqin dilayen kaise

জীবনানন্দ দাশ

আমি কবি– সেই কবি–

আমি কবি– সেই কবি–
আকাশে কাতর আঁখি তুলি হেরি ঝরা পালকের ছবি!
আন্‌মনা আমি চেয়ে থাকি দূর হিঙুল-মেঘের পানে!
মৌন নীলের ইশারায় কোন্ কামনা জাগিছে প্রাণে!
বুকের বাদল উথলি উঠিছে কোন্ কাজরীর গানে!
দাদুরী-কাঁদানো শাঙন-দরিয়া হৃদয়ে উঠিছে দ্রবি!

স্বপন-সুরার ঘোরে
আখের ভুলিয়া আপনারে আমি রেখেছি দিওয়ানা ক’রে!
জন্ম ভরিয়া সে কোন্ হেঁয়ালি হল না আমার সাধা–
পায় পায় নাচে জিঞ্জির হায়, পথে পথে ধায় ধাঁধা!
-নিমেষে পাসরি এই বসুধার নিয়তি-মানার বাধা
সারাটি জীবন খেয়ালের খোশে পেয়ালা রেখেছি ভ’রে!

ভুঁয়ের চাঁপাটি চুমি
শিশুর মতন, শিরীষের বুকে নীরবে পড়ি গো নুমি!
ঝাউয়ের কাননে মিঠা মাঠে মাঠে মটর-ক্ষেতের শেষে
তোতার মতন চকিতে কখন আমি আসিয়াছি ভেসে!
-ভাটিয়াল সুর সাঁঝের আঁধারে দরিয়ার পারে মেশে,–
বালুর ফরাশে ঢালু নদীটির জলে ধোঁয়া ওঠে ধূমি!

বিজন তারার সাঁঝে
আমার প্রিয়ের গজল-গানের রেওয়াজ বুঝি বা বাজে!
প’ড়ে আছে হেথা ছিন্ন নীবার, পাখির নষ্ট নীড়!
হেথায় বেদনা মা-হারা শিশুর, শুধু বিধবার ভিড়!
কোন্ যেন এক সুদূর আকাশ গোধূলিলোকের তীর
কাজের বেলায় ডাকিছে আমারে, ডাকে অকাজের মাঝে!

স্বভাব

যদিও আমার চোখে ঢের নদী ছিলো একদিন
পুনরায় আমাদের দেশে ভোর হ’লে,
তবুও একটি নদী দেখা যেতো শুধু তারপর;
কেবল একটি নারী কুয়াশা ফুরোলে
নদীর রেখার পার লক্ষ্য ক’রে চলে;
সূর্যের সমস্ত গোল সোনার ভিতরে
মানুষের শরীরের স্থিরতর মর্যাদার মতো
তার সেই মূর্তি এসে পড়ে।
সূর্যের সম্পূর্ণ বড় বিভোর পরিধি
যেন তার নিজের জিনিস।
এতদিন পরে সেইসব ফিরে পেতে
সময়ের কাছে যদি করি সুপারিশ
তা’হলে সে স্মৃতি দেবে সহিষ্ণু আলোয়
দু-একটি হেমন্তের রাত্রির প্রথম প্রহরে;
যদিও লক্ষ লোক পৃথিবীতে আজ
আচ্ছন্ন মাছির মত মরে -
তবুও একটি নারী ‘ভোরের নদীর
জলের ভিতরে জল চিরদিন সূর্যের আলোয় গড়াবে’
এ রকম দু-চারটে ভয়াবহ স্বাভাবিক কথা
ভেবে শেষ হ’য়ে গেছে একদিন সাধারণভাবে।


আকাশে সাতটি তারা যখন উঠেছে ফুটে

আকাশে সাতটি তারা যখন উঠেছে ফুটে আমি এই ঘাসে
বসে থাকি; কামরাঙা লাল মেঘ যেন মৃত মনিয়ার মতো
গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে-আসিয়াছে শান- অনুগত
বাংলার নীল সন্ধ্যা-কেশবতী কন্যা যেন এসেছে আকাশে;
আমার চোখের পরে আমার মুখের পরে চুল তার ভাসে;
পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখেনিকো দেখি নাই অত
অজস্র চুলের চুমা হিজলে কাঁঠালে জামে ঝরে অবিরত,
জানি নাই এত স্নিগ্ধ গন্ধ ঝরে রূপসীর চুলের বিন্যাসে

পৃথিবীর কোনো পথে; নরম ধানের গন্ধ-কলমীর ঘ্রাণ,
হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদা সরপুটিদের
মৃদু ঘ্রাণ, কিশোরীর চাল ধোয়া ভিজে হাত-শীত হাতখান,
কিশোরের পায়ে- দলা মুথাঘাস,-লাল লাল বটের ফলের
ব্যথিত গন্ধের ক্লান- নীরবতা-এরি মাঝে বাংলার প্রাণ;
আকাশে সাতটি তারা যখন উঠেছে ফুটে আমি পাই টের।


কতদিন তুমি আর আমি এসে এইখানে বসিয়াছি

কতদিন তুমি আর আমি এসে এইখানে বসিয়াছি ঘরের ভিতর
খড়ের চালের নিচে, অন্ধকারে; — সন্ধ্যার ধূসর সজল
মৃদু হাত খেলিতেছে হিজল জামের ডালে — বাদুড় কেবল
করিতেছে আসা-যাওয়া আকাশের মৃদু পথে — ছিন্ন ভিজে খড়
বুকে নিয়ে সনকার মতো যেন পড়ে আছে নরম প্রান্তর;
বাঁকা চাঁদ চেয়ে আছে — কুয়াশায় গা ভাসায়ে দেয় অবিরল
নিঃশব্দ গুবরে পোকা — সাপমাসী — ধানী শ্যামাপোকাদের দল;
দিকে দিকে চালধোয়া গন্ধ মৃদু — ধূসর শাড়ির ক্ষীণ স্বর

শোনা যায় — মানুষের হৃদয়ের পুরোনো নীরব
বেদনার গন্ধ ভাসে — খড়ের চালের নিচে তুমি আর আমি
কতদিন মলিন আলোয় বসে দেখেছি বুঝেছি এই সব;
সময়ের হাত থেকে ছুটি পেয়ে স্বপনের গোধূলিতে নামি
খড়ের চালের নিচে মুখোমুখি বসে থেকে তুমি আর আমি
ধূসর আলোয় বসে কতদিন দেখেছি বুঝেছি এইসব।


ভিজে হয়ে আসে মেঘে এ দুপুর

ভিজে হয়ে আসে মেঘে এ-দুপুর — চিল একা নদীটির পাশে
জারুল গাছের ডালে বসে বসে চেয়ে থাকে ওপারের দিকে;
পায়রা গিয়েছে উড়ে তবু চরে, খোপে তার; — শসাতাটিকে,
ছেড়ে গেছে মৌমাছি; — কালো মঘে জমিয়াছে মাঘের আকাশে,
মরা প্রজাতিটির পাখার নরম রেণু ফেলে দিয়ে ঘাসে
পিঁপড়েরা চলে যায়; — দুই দন্ড আম গাছে শালিখে — শালিখে
ঝুটোপুটি, কোলাহল — বউকথাকও আর রাঙা বউটিকে
ডাকে নাকো-হলুদ পাখনা তার কোন যেন কাঁঠালে পলাশে

হারায়েছে; বউ উঠানে নাই — প’ড়ে আছে একখানা ঢেঁকি;
ধান কে কুটবে বলো-কত দিন সে তো আর কোটে নাকো ধান,
রোদেও শুকাতে সে যে আসে নাকো চুল তার — করে নাকে স্নান
এ-পুকুরে — ভাঁড়ারে ধানের বীজ কলায়ে গিয়েছে তার দেখি,
তবুও সে আসে নাকে; আজ এ দুপুরে এসে খই ভাজিবে কি?
হে চিল, সোনালি চিল, রাঙা রাজকন্যা আর পাবে না কি প্রাণ?


মনে হয় একদিন আকাশের

মনে হয় একদিন আকাশের শুকতারা দেখিব না আর;
দেখিব না হেলেঞ্চার ঝোপ থেকে এক ঝাড় জোনাকি কখন
নিভে যায়; দেখিব না আর আমি পরিচিত এই বাঁশবন,
শুকনো বাঁশের পাতা-ছাওয়া মাটি হয়ে যাবে গভীর আঁধার
আমার চোখের কাছে; লক্ষ্মীপূর্ণিমার রাতে সে কবে আবার
পেঁচা ডাকে জ্যোৎস্নায়; হিজলের বাঁকা ডাল করে গুঞ্জরণ;
সারা রাত কিশোরীর লাল পাড় চাঁদে ভাসে-হাতের কাঁকন
বেজে ওঠে : বুঝিব না-গঙ্গাজল, নারকোলনাডুগুলো তার

জানি না সে কারে দেবে- জানি না সে চিনি আর শাদা তালশাঁস
হাতে লয়ে পলাশের দিকে চেয়ে দুয়ারে দাঁড়ায়ে রবে কি না…
আবার কাহার সাথে ভালোবাসা হবে তার-আমি তা জানি না-
মৃত্যুরে কে মনে রাখে?-কীর্তিনাশা খুঁড়ে খুঁড়ে চলে বারো মাস
নতুন ডাঙার দিকে-পিছনের অবিরল মৃত চর বিনা
দিন তার কেটে যায়- শুকতারা নিভে গেলে কাঁদে কি আকাশ?


মানুষের ব্যথা আমি পেয়ে গেছি

মানুষের ব্যথা আমি পেয়ে গেছি পৃথিবীর পথে এসে — হাসির আস্বাদ
পেয়ে গেছি; দেখেছি আকাশে দূরে কড়ির মতন শাদা মেঘের পাহাড়ে
সূর্যের রাঙা ঘোড়া; পক্ষিরাজের মতো কমলা রঙের পাখা ঝাড়ে
রাতের কুয়াশা ছিঁড়ে; দেখেছি শরের বনে শাদা রাজহাঁসদের সাধ
উঠেছে আনন্দে জেগে — নদীর স্রোতের দিকে বাতাসের মতন অবাধ
চলে গেছে কলরবে; — দেখেছি সবুজ ঘাস — যত দূর চোখ যেতে পারে;
ঘাসের প্রকাশ আমি দেখিয়াছি অবিরল, — পৃথিবীর ক্লান্ত বেদনারে
ঢেকে আছে; — দেখিয়াছি বাসমতী, কাশবন আকাঙ্খার রক্ত, অপরাধ

মুছায়ে দিতেছে যেন বার বার কোন এক রহস্যের কুয়াশার থেকে
যেখানে জন্মে না কেউ, যেখানে মরে না কেউ, সেই কুহকের থেকে এসে
রাঙা রোদ, শালিধান, ঘাস, কাশ, মরালেরা বার বার রাখিতেছে ঢেকে
আমাদের রুক্ষ প্রশ্ন, ক্লান্ত ক্ষুধা, স্ফুট মৃত্যু — আমাদের বিস্মিত নীরব
রেখে দেয় — পৃথিবীর পথে আমি কেটেছি আচঁড় ঢের, অশ্রু গেছি রেখে
তবু ঐ মরালীরা কাশ ধান রোদ ঘাস এসে এসে মুছে দেয় সব।


যখন মৃত্যুর ঘুমে শুয়ে রবো

যখন মৃত্যুর ঘুমে শুয়ে রবো — অন্ধকারে নক্ষত্রের নিচে
কাঁঠাল গাছের তলে হয়তো বা ধলেশ্বরী চিলাইয়ের পাশে –
দিনমানে কোনো মুখ হয়তো সে শ্মশানের কাছে নাহি আসে –
তবুও কাঁঠাল জাম বাংলার- তাহাদের ছায়া যে পড়িছে
আমার বুকের পরে — আমার মুখের পরে নীরবে ঝরিছে
খয়েরী অশথপাতাত — বইচি, শেয়ালকাঁটা আমার এ দেহ ভালোবাসে,
নিবিড় হয়েছে তাই আমার চিতার ছাইয়ে — বাংলার ঘাসে
গভীর ঘাসের গুচ্ছে রয়েছি ঘুমায়ে আমি, — নক্ষত্র নড়িছে

আকাশের থেকে দূর-আরো দূর-আরো দূর-নির্জন আকাশে
বাংলার-তারপর অকারণ ঘুমে আমি পড়ে যাই ঢুলে।
আবার যখন জাগি, আমা শ্মশানচিতা বাংলার ঘাসে
ভরে আছে, চেয়ে দেখি,-বাসকের গন্ধ পাই-আনারস ফুলে
ভোমরা উড়িছে,শুনি-গুবরে পোকার ক্ষীণ গুমরানি ভাসিছে বাতাসে
রোদের দুপুর ভরে-শুনি আমি; ইহারা আমার ভালোবাসে-


যদি আমি ঝরে যাই একদিন

যদি আমি ঝরে যাই একদিন কার্তিকের নীল কুয়াশায়;
যখন ঝরিছে ধান বাংলার ক্ষেতে-ক্ষেতে ম্লান চোখ বুজে,
যখন চড়াই পাখি কাঁঠালীচাপাঁর নীড়ে ঠোঁট আছে গুজে,
যখন হলুদ পাতা মিশিতেছে খয়েরি পাতায়,
যখন পুকুরে হাঁস সোঁদা জলে শিশিরের গন্ধ শুধু পায়,
শামুক গুগলিগুলো পড়ে আছে শ্যাওলার মলিন সবুজে-
তখন আমারে যদি পাও নাকো লালশাক-ছাওয়া মাঠে খুঁজে,
ঠেস্‌ দিয়ে বসে আর থাকি নাকো যদি বুনো চালতার গায়ে,

তাহলে জানিও তুমি আসিয়াছে অন্ধকার মৃত্যুর আহ্বান-
যার ডাক শুনে রাঙা রৌদ্রেরো চিল আর শালিখের ভিড়
একদিন ছেড়ে যাবে আম জাম বনে নীল বাংলার তীর,
যার ডাক শুনে আজ ক্ষেতে-ক্ষেতে ঝরিতেছে খই আর মৌরির ধান;-
কবে যে আসিবে মৃত্যু; বাসমতী চালে-ভেজা শাদা হাতখান-
রাখো বুকে, হে কিশোরী, গোরোচনারূপে আমি করিব যে ম্লান-


পৃথিবীর পথে আমি বহুদিন বাস করে

পৃথিবীর পথে আমি বহুদিন বাস করে হৃদয়ের নরম কাতর
অনেক নিভৃত কথা জানিয়াছি; পৃথিবীতে আমি বহুদিন
কাটায়েছি; বনে বনে ডালপালা উড়িতেছে — যেন পরী জিন্‌
কথা কয়; ধূসর সন্ধ্যায় আমি ইহাদের শরীরের পর
খইয়ের ধানের মতো দেখিয়াছি ঝরে ঝর্‌ ঝর
দু-ফোটা মেঘের বৃষ্টি, — শাদা ধুলো জলে ভিজে হয়েছে মলিন,
ম্লান গন্ধ মাঠে ক্ষেতে… গুবরে পোকার তুচ্ছ বুক থেকে ক্ষীণ
অস্ফুট করুণ শব্দ ডুবিতেছে অন্ধকারে নদীর ভিতর:

এই সব দেখিয়াছি; — দেখিয়াছি নদীটিরে — মজিতেছে ঢালু অন্ধকারে;
সাপমাসী উড়ে যায়; দাঁড়কাক অম্বনে’র নীড়ের ভিতর
পাখনার শব্দ করে অবিরাম; কুয়াশায় একাকী মাঠের ঐ ধারে
কে যেন দাঁড়ায়ে আছে: আরো দূরে দু একটা স — ব্দ খোড়ো ঘর
পড়ে আছে; — খাগড়ার বনে ব্যাং ডাকে কেন — থামিতে কি পারে;
‘তুমি কেন এইখানে’, ‘তুমি কেন এইখানে’ — শরের বনের থেকে দেয় সে উত্তর।
(আবার পাখনা নাড়ে — কাকের তরুন ডিম পিছলায়ে পড়ে যায় শ্যাওয়ার ঝাড়ে)


পাড়াগাঁর দু পহর ভালোবাসি

পাড়াগাঁর দু পহর ভালোবাসি — রৌদ্র যেন গন্ধ লেগে আছে
স্বপনের; — কোন গল্প, কি কাহিনী, কি স্বপ্ন যে বাঁধিয়াছে ঘর
আমার হৃদয়ে, আহা, কেউ তাহা জানে নাকো — কেবল প্রান্তর
জানে তাহা, আর ওই প্রান্তরের শঙ্খচিল; তাহাদের কাছে
যেন এ-জনমে নয় — যেন ঢের যুগ ধরে কথা শিখিয়াছে
এ — হৃদয় — স্বপ্নে যে বেদনা আছে : শুষ্ক পাতা — শালিখের স্বর,
ভাঙা মঠ — নক্‌শাপেড়ে শাড়িখানা মেযেটির রৌদ্রের ভিতর
হলুদ পাতার মতো স’রে যায়, জলসিড়িটির পাশে ঘাসে

শাখাগুলো নুয়ে আছে বহু দিন ছন্দহীন বুনো চালতার:
জলে তার মুখখানা দেখা যায় — ডিঙিও ভাসিছে কার জলে,
মালিক কোথাও নাই, কোনোদিন এই দিকে আসিবেনা আর,
ঝাঁঝরা ফোঁপরা, আহা ডিঙিটিরে বেঁধে রেখে গিয়েছে হিজলে;
পাড়াগাঁর দু — পহর ভালোবাসি — রৌদ্রে যেন ভিজে বেদনার
গন্ধ লেগে আছে, আহা, কেঁদে কেঁদে ভাসিতেছে আকাশের তলে।


তোমার বুকের থেকে একদিন চলে যাবে

তোমার বুকের থেকে একদিন চলে যাবে তোমার সন্তান
বাংলার বুক ছেড়ে চলে যাবে; যে ইঙ্গিতে নক্ষত্রও ঝরে,
আকাশের নীলাভ নরম বুক ছেড়ে দিয়ে হিমের ভিতরে
ডুবে যায়, - কুয়াশায় ঝ’রে পড়ে দিকে-দিকে রপশালী ধান
একদিন; - হয়তো বা নিমপেঁচা অন্ধকারে গা’বে তার গান,
আমারে কুড়ায়ে নেবে মেঠো ইঁদুরের মতো মরণের ঘরে -
হ্নদয়ে ক্ষদের গন্ধ লেগে আছে আকাঙ্খার তবু ও তো চোখের উপরে
নীল, মৃত্যু উজাগর - বাঁকা চাঁদ, শূন্য মাঠ, শিশিরের ঘ্রাণ -

কখন মরণ আসে কে বা জানে - কালীদহে কখন যে ঝড়
কমলের নাম ভাঙে - ছিঁড়ে ফেলে গাংচিল শালিকের প্রাণ
জানি নাকো;- তবু যেন মরি আমি এই মাঠ - ঘাটের ভিতর,
কৃষ্ণা যমুনায় নয় - যেন এই গাঙুড়ের ডেউয়ের আঘ্রাণ
লেগে থাকে চোখে মুখে - রুপসী বাংলা যেন বুকের উপর
জেগে থাকে; তারি নিচে শুয়ে থাকি যেন আমি অর্ধনারীশ্বর।


তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও

তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও — আমি এই বাংলার পারে
র’য়ে যাব; দেখিব কাঁঠালপাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে;
দেখিব খয়েরি ডানা শালিখের সন্ধ্যায় হিম হয়ে আসে
ধবল রোমের নিচে তাহার হলুদ ঠ্যাং ঘাসে অন্ধকারে
নেচে চলে-একবার — দুইবার — তারপর হঠাৎ তাহারে
বনের হিজল গাছ ডাক দিয়ে নিয়ে হৃদয়ের পাশে;
দেখিব মেয়েলি হাত সকরুণ — শাদা শাঁখা ধূসর বাতাসে
শঙ্খের মতো কাঁদে: সন্ধ্যায় দাঁড়ালে সে পুকুরের ধারে,

খইরঙা হাঁসটিরে নিয়ে যাবে যেন কোন্‌ কাহিনীর দেশে –
‘পরণ-কথা’র গন্ধ লেগে আছে যেন তার নরম শরীরে,
কল্‌মীদামের থেকে জন্মেছে সে যেন এই পুকুরের নীরে –
নীরবে পা ধোয় জলে একবার — তারপর দূরে নিরুদ্দেশে
চ’লে যায় কুয়াশায় — তবু জানি কোনোদিন পৃথিবীর ভিড়ে
হারাব না তারে আমি — সে যে আছে আমার এ বাংলার তীরে।


তুমি কেন বহু দূরে

তুমি কেন বহু দূরে — ঢের দূর — আরো দূরে — নক্ষত্রের অস্পষ্ট আকাশ
তুমি কেন কোনদিন পৃথিবীর ভিড়ে এসে বলো নাকো একটিও কথা;
আমরা মিনার গড়ি — ভেঙে পড়ে দুদিনেই — স্বপনের ডানা ছিড়ে ব্যথা
রক্ত হয়ে ঝরে শুধু এইখানে — ক্ষুধা হয়ে ব্যথা দেয় — নীল নাভিশ্বাস;
ফেনায়ে তুলিছে শুধু পৃথিবীতে পিরামিড যুগ থেকে আজো বারোমাস;
আমাদের সত্য, আহা রক্ত হযে ঝরে শুধু; — আমাদের প্রাণের মমতা
ফড়িঙের ডানা নিয়ে ওড়ে, আহা: চেয়ে দেখে অন্ধকার কঠিন ক্ষমতা
ক্ষমাহীন — বার বার পথ আটকায়ে ফেলে বার বার করে তারে গ্রাস;

তারপর চোখ তুলে দেখি ঐ কোন দূর নক্ষত্রের ক্লান্ত আয়োজন
ক্লানি — র ভুলিতে বলে — ঘিয়ের সোনার দীপে লাল নীল শিখা
জ্বলিতেছে যেন দূর রহস্যের কুয়াশায়, — আবার স্বপ্নের গন্ধে মন
কেঁদে ওঠে — তবু জানি আমাদের স্বপ্ন হতে অশ্রু ক্লানি — রক্তের কণিকা
ঝরে শুধু — স্বপ্ন কি দেখেনি বুদ্ধ — নিউসিডিয়ায় বসে দেখেনি মণিকা?
স্বপ্ন কি দেখেনি রোম, এশিরিয়া, উজ্জায়িনী, গৌড় বাংলা, দিল্লী, বেবিলন?


তবু তাহা ভুল জানি

তবু তাহা ভুল জানি — রাজবল্লভের কীর্তি ভাঙে কীর্তিনাশা:
তবুও পদ্মার রূপ একুশরত্নের চেয়ে আরো ঢের গাঢ় —
আরো ঢের প্রাণ তার, বেগ তার, আরো ঢের জল, জল আরো;
তোমারো পৃথিবী পথ; নক্ষত্রের সাথে তুমি খেলিতেছ পাশা:
শঙ্খমালা নয় শুধু: অনুরাধা রোহিনীর ও চাও ভালোবাসা,
না জানি সে কতো আশা — কতো ভালোবাসা তুমি বাসিতে যে পার!
এখানে নদীর ধারে বাসমতী ধানগুলো ঝরিছে আবাো;
প্রান্তরের কুয়াশায় এখানে বাদুড়ের যাওয়া আর আসা —

এসেছে সন্ধ্যার কাক ঘরে ফিরে, — দাঁড়ায়ে রয়েছে জীর্ণ মঠ,
মাঠের আঁধার পথে শিশু কাঁদে — লালপেড়ে পুরানো শাড়ির
ছবিটি মুছিয়া যায় ধীরে ধীরে — কে এসেছে আমার নিকট?
কার শিশু? বলো তুমি: শুধালাম, উত্তর দিলো না কিছু বটে;
কেউ নাই কোনোদিকে — মাঠে পথে কুয়াশার ভিড়;
তোমারে শুধাই কবি: তুমিও কি জানো কিছু এই শিশুটির।


জীবন অথবা মৃত্যু চোখে রবে

জীবন অথবা মৃত্যু চোখে র’বে - আর এই বাংলার ঘাস
র’বে বুকে; এই ঘাস:সীতারাম রাজারাম রামনাথ রায়-
ইহাদের ঘোড়া আজো অন্ধকারে এই ঘাস ভেঙে চ’লে যায়-
এই ঘাস:এরি নিচে কস্কাবতী শঙ্খশালা করিতেছে বাস:
তাদের দেহের গন্ধ,চাঁপা ফুল-মাখা স্নান চুলের বিন্যাস
ঘাস আজো ঢেকে আছে : যখন হেমন- আসে গৌড় বাংলায়
কার্তিকের অপরাহ্নে হিজলের পাতা শাদা উঠানের গায়
ঝ’রে পড়ে, পুকুরের ক্লান্ত জল ছেড়ে দিয়ে চ’লে যায় হাঁস,

আমি এ ঘাসের বুকে শুয়ে থাকি - শালিখ নিয়েছে নিঙড়ায়ে
নরম হলুদ পায়ে এই ঘাস; এ সবুজ ঘাসের ভিতরে
সোঁদা ধুলো শুয়ে আছে- কাঁচের মতন পাখা এ ঘাসের গায়ে
ভেরেন্ডাফুলের নীল ভোমরারা বুলাতেছে - শাদা দুধ ঝরে
করবীর : কোন্‌ এক কিশোরী এসে ছিঁড়ে নিয়ে চ’লে গেছে ফুল,
তাই দুধ ঝরিতেছে করবীর ঘাসে - ঘাসে : নরম ব্যাকুল।


ঘুমায়ে পড়িব আমি একদিন তোমাদের নক্ষত্রের রাতে

ঘুমায়ে পড়িব আমি একদিন তোমাদের নক্ষত্রের রাতে
শিয়রে বৈশাখ মেঘ-শাদা-শাদা যেন কড়ি-শঙ্খের পাহাড়
নদীর ওপার থেকে চেয়ে রবে- কোনো এক শঙ্খবালিকার
ধূসর রূপের কথা মনে হবে-এই আম জামের ছায়াতে
কবে যেন তারে আমি দেখিয়াছি-কবে যেন রাখিয়াছে হাতে
তার হাতে- কবে যেন তারপর শ্মশান চিতায় তার হাড়
ঝরে গেছে, কবে যেন; এ জনমে নয় যেন-এই পাড়াগাঁর
পথে তবু তিন শো বছর আগে হয়তো বা- আমি তার সাথে

কাটায়েছি; পাঁচশো বছর আগে হয়তো বা — সাতশো বছর
কেটে গেছে তারপর তোমাদের আম জাম কাঁঠালের দেশে;
ধান কাটা হয়ে গেলে মাঠে-মাঠে কতোবার কুড়ালাম খড়;
বাঁধিলাম ঘর এই শ্যামা আর খঞ্জনার দেশ ভালোবেসে,
ভাসানের গান গুনে কত বার ঘর আর খড় গেল ভেসে
মাথুরের পালা বেঁধে কত বার ফাঁকা হল খর আর ঘর।


ঘুমায়ে পড়িব আমি একদিন

ঘুমায়ে পড়িব আমি একদিন তোমাদের নক্ষত্রের রাতে;
তখনো যৌবন প্রাণে লেগে আছে হয়তো বা — আমার তরুণ দিন
তখনো হয়নি শেষ- সেই ভালো — ঘুম আসে-বাংলার তৃণ
আমার বুকের নিচে চোখ বুজে-বাংলার আমের পাতাতে
কাঁচপোকা ঘুমায়েছে — আমিও ঘুমায়ে রবো তাহাদের সাথে,
ঘুমাব প্রাণের সাধে এই মাঠে — এই ঘাসে — কথাভাষাহীন
আমার প্রাণের গল্প ধীরে-ধীরে যাবে-অনেক নবীন
নতুন উৎসব রবে উজানের-জীবনের মধুর আঘাতে

তোমাদের ব্যস্ত মনে; — তবুও, কিশোর, তুমি নখের আঁচড়ে
যখন এ ঘাস ছিঁড়ে চলে যাবে — যখন মানিকমালা ভোরে
লাল-লাল বটফল কামরাঙা কুড়াতে আসিবে এই পথে–
যখন হলুদ বোঁটা শেফালি কোনো এক নরম শরতে
ঝরিয়ে ঘাসের পরে, — শালিখ খঞ্জনা আজ কতো দূরে ওড়ে–
কতোখানি রোদ-মেঘ — টের পাবে শুয়ে শুয়ে মরণের ঘোরে।


ঘাসের বুকের থেকে

ঘাসের বুকের থেকে কবে আমি পেয়েছি যে আমার শরীর –
সবুজ ঘাসের থেকে; তাই রোদ ভালো লাগে — তাই নীলাকাশ
মৃদু ভিজে সকরুণ মনে হয়; — পথে পথে তাই এই ঘাস
জলের মতন স্নিগ্ধ মনে হয়, — কউমাছিদের যেন নীড়
এই ঘাস; — যত দূর যাই আমি আরো যত দূর পৃথিবীর
নরম পায়ের তলে যেন কত কুমারীর বুকের নিঃশ্বাস
কথা কয় — তাহাদের শান — হাত খেলা করে — তাদের খোঁপায় এলো ফাঁস
খুলে যায় — ধূসর শাড়ির গন্ধে আসে তারা — অনেক নিবিড়

পুরোনো প্রাণের কথা কয়ে যায় — হৃদয়ের বেদনার কথা –
সান্ত্বনার নিভৃত নরম কথা — মাঠের চাঁদের গল্প করে –
আকাশের নক্ষত্রের কথা কয়; — শিশিরের শীত সরলতা
তাহাদের ভালো লাগে, — কুয়াশারে ভালো লাগে চোখের উপরে;
গরম বৃষ্টির ফোঁটা ভালো লাগে; শীত রাতে — পেঁচার নম্রতা;
ভালো লাগে এই যে অশ্বথ পাতা আমপাতা সারারাত ঝরে।


গোলপাতা ছাউনির বুক চুমে

গোলপাতা ছাউনির বুক চুমে নীল ধোঁয়া সকালে সন্ধ্যায়
উড়ে যায়- মিশে যায় আমবনে কার্তিকের কুয়াশার সাথে;
পুকুরের লাল সর ক্ষীণ ঢেউয়ে বার-বার চায় সে জড়াতে
করবীর কচি ডাল; চুমো খেতে চায় মাছরাঙাটির পায়;
এক-একটি ইট ধ্বসে-ডুবজলে ডুব দিয়ে কোথায় হারায়
ভাঙা ঘাটলায় এই-আজ আর কেউ এসে চাল-ধোয়া হাতে
বিনুনি খসায় নাকো-শুকনো পাতা সারা দিন থাকে যে গড়াতে;
কড়ি খেলিবার ঘর মজে গিয়ে গোখুরার ফাটলে হারায়;

ডাইনীর মতো হাত তুলে-তুলে ভাঁট আঁশশ্যাওড়ার বন
বাতাসে কি কথা কয় বুঝি নাকো, -বুঝি নাকো চিল কেন কাঁদে
পৃথিবীর কোনো পথে দেখি নই আমি, হায়, এমন বিজন
শাদা পথ-সোঁদা পথ-বাঁশের ঘোমটা মুখে বিধবার ছাঁদে
চলে গেছে শ্মশানের পারে বুঝি;-সন্ধ্যা সহসা কখন;
সজিনার ডালে পেঁচা কাঁদে নিম-নিম নিম কার্তিকের চাঁদে।


কোনোদিন দেখিব না তারে আমি

কোনোদিন দেখিব না তারে আমি: হেমন্তে পাকিবে ধান, আষাঢ়ের রাতে
কালো মেঘ নিঙড়ায়ে সবুজ বাঁশের বন গেয়ে যাবে উচ্ছ্বাসের গান
সারারাত, — তবু আমি সাপচরা অন্ধ পথে — বেনুবনে তাহার সন্ধান
পাবো নাকে: পুকুরের পাড়ে সে যে আসিবে না কোনোদিন হাঁসিনীর সাথে,
সে কোনো জ্যোৎস্নায় আর আসিবে না — আসিবে না কখনো প্রভাতে,
যখন দুপুরে রোদে অপরাজিতার মুখ হয়ে থাকে ম্লান,
যখন মেঘের রঙে পথহারা দাঁড়কাক পেয়ে গেছে ঘরের সন্ধান,
ধূসর সন্ধ্যায় সেই আসিবে না সে এখানে; — এইখানে ধুন্দুল লতাতে

জোনাকি আসিবে শুধু: ঝিঁঝিঁ শুধু; সারারাত কথা কবে ঘাসে আর ঘাসে
বাদুড় উড়িবে শুধু পাখনা ভিজায়ে নিয়ে শান্ত হয়ে রাতের বাতাসে;
প্রতিটি নক্ষত্র তার স’ান খুঁজে জেগে রবে প্রতিটির পাশে
নীরব ধূসর কণা লেগে রবে তুচ্ছ অনূকণাটির শ্বাসে
অন্ধকারে — তুমি, সখি চলে গেলে দূরে তবু; — হৃদয়ের গভীর বিশ্বাসে
অশ্বত্থের শাখা ঐ দুলিতেছে; আলো আসে, ভোর হয়ে আসে।

খুঁজে তারে মরো মিছে


খুঁজে তারে মরো মিছে — পাড়াগাঁর পথে তারে পাবে নাকো আর;
রয়েছে অনেক কাক এ উঠানে — তবু সেই ক্লান্ত দাঁড়কাক
নাই আর; — অনেক বছর আগে আমে জামে হৃষ্ট এক ঝাঁক
দাঁড়কাক দেখা যেত দিন — রাত, — সে আমার ছেলেবেলাকার
কবেকার কথা সব; আসিবে না পৃথিবীতে সেদিন আবার:
রাত না ফুরাতে সে যে কদমের ডাল থেকে দিয়ে যেত ডাক, —
এখনো কাকের শব্দে অন্ধকার ভোরে আমি বিমনা, অবাক
তার কথা ভাবি শুধু; এত দিনে কোথায় সে? কি যে হলো তার

কোথায় সে নিয়ে গেছে সঙ্গে করে সেই নদী, ক্ষেত, মাঠ, ঘাস,
সেই দিন, সেই রাত্রি, সেই সব ম্নান চুল, ভিজে শাদা হাত
সেইসব নোনা গাছ, করমচা, শামুক গুগলি, কচি তালশাসঁ
সেইসব ভিজে ধুলো, বেলকুড়ি ছাওয়া পথ, ধোয়া ওঠা ভাত,
কোথায় গিয়েছে সব? — অসংখ্য কাকের শব্দে ভরিছে আকাশ
ভোর রাতে — নবান্নের ভোরে আজ বুকে যেন কিসের আঘাত!




Me

Me

About this blog

Hello

This is Fahmida. You may imagine me as a five feet white ball. Completed MBA in Management . ভাললাগে গ্রাফিক্সের টুকিটাকি। শখ ছিল ফটোগ্রাফার হবো কিংবা সাংবাদিক। হইনি কিছুই। পেশায় ব্যাংকার। জন্ম উত্তর বঙ্গে। বসবাস দক্ষিণে। মাঝে মাঝে এক আধটু প্যাঁচাই। যদিও আমার লেখালেখির হাতেখড়ি আপ্র (http://forum.amaderprojukti.com/memberlist.php?mode=viewprofile&u=1094) থেকে তারপরও মাঝে মাঝে প্রথম আলো ব্লগেও মাঝেমাঝে ঢুঁ মারি। নিক আঁধার http://prothom-aloblog.com/users/base/adhar/p1 । আজকাল সচলদের অতিথি হতে ভাল লাগে। নিক অমাবস্যা। ইদানীং টিউরোটিয়াল বিডি'তে লেখার চেষ্টা করছি। গান শোনা, কবিতা পড়তে ভালবাসি। ভালবাসি ব্লাক কফি আর সিলেটের চা-পাতা । এক কথায় Im busy for nothing :)


লাইসেন্স:Licence
by-nc-nd (Creative Commons)

Blog Archive

My Blog List