অনেকদিন পর বড় দুলাভাই বেড়াতে আসলেন, হাতে প্যাকেট প্যাকেট রসগোল্লা। আমি অবশ্য প্যাকেটের ভেতর না দেখেই বুঝতে পারি ভেতরে কি আছে। কারণ দুলাভাই যতবারই আসেন, ততবারই রসগোল্লা ছাড়া আর কোন মিষ্টি আনেননা। আমি অনেক ভেবে দেখলাম, দুলাভাই সবথেকে রসগোল্লা পছন্দ করেন, আর যাতে শ্বশুর বাড়ি পারপাজে ব্যয়িত অর্থ পুরোটাই উসুল করা যায় তার জন্য যেকোন উপায় অবলম্বন করতে তিনি এতটুকুও কার্পণ্য করেন না। অবশ্য মিষ্টি+ যাতায়াত ভাড়া বাবদ যা খরচ হয় তার তিনচারগুণ বেশি ভেসে যায় আমার বাবার পকেট থেকে।সাথে শাশুড়ি নামের ফ্রী বার্বুচীর ভালবাসা মেশানো রান্না, শ্যালক-শ্যালিকা নামের পরিচারক-পরিচারিকা আর শ্বশুর নামের ম্যানেজার তো আছেই। যাইহোক, দুলাভাইয়ের চেহারার দিকে তাকিয়ে মনে হলো কে যেন তার শরীর থেকে সমস্ত রসটাই লেবুর মত নিংড়ে বের করে নিয়েছে। হাসতে হাসতে বললাম, দুলাভাই, সব রস কি মিষ্টির হাঁড়িতে করে নিয়ে এসেছেন? অমনি এক তাড়া, যা ভাগ। আপাতত: ভাগলাম রান্না ঘরের দিকে। শাশুড়ি আম্মা মনযোগ সহকারে রুই মাছের মুড়িঘন্ট করছেন। খুনতির হাতা ধীরে ধীরে দোলাচ্ছেন যেন মাছের মাথা আহত না হয়। জামাই খাবে। টিভিতে তখন একটা নাটক দেখছিলাম । দুলাভাই সহ পরিবারের প্রায় সব সদস্যই ছিল। মাঝে আম্মাজানও আসলেন। হঠাৎ নাটকের একটা দৃশ্যে সবার মনযোগ চলে গেল। সকাল বেলা বাড়ির গৃহকর্তা খুব শখ করে একটা বড় রুই মাছ আনলেন। মধ্যবিত্তের সংসার। তারউপর এমন খামখেয়ালীর জন্য গিন্নীর ধমক, বৌমার ঠোঁট বাঁকানো সবই কপালে জুটল। তাতে কি । মাছের মাথা খাবার সময় এই সব ছোট ছোট দু:খ কষ্ট থাকবে না।গিন্নীকে বললেন, মাথাটা আলাদা করে রাধঁবে। অনেকদিন মাছের মাথা খাইনা। যাই হোক, মাথা রান্না হচ্ছে। ইতিমধ্যে কোথায় থেকে জামাই বাবাজীর আগমন। খাবার সময় গিন্নী ভেবে পাচ্ছেন না মাথাটা কার পাতে দেবেন। মেয়ে ভাবছে জামাইয়ের পাতে দিলে সম্মানটা বাড়ে। বৌমা ভাবছে আমার স্বামীর টাকায় সংসার চলে, সুতরাং মাথাটা আমার সাহেবের প্রাপ্য। ওদিকে শ্বশুর বেচারার হার্টবিট কমতে শুরু করেছে। অবশেষে সবাইকে বোল্ড আউট করে জামাই বললো, আম্মা , মাথাটা আমাকেই দেন। আমার আবার রুই মাছের মাথা খুবই পছন্দ।অগত্যা আচঁলে মুখ লুকিয়ে গিন্নী মাথাটা জামাইয়ের পাতেই তুলে দিলেন। নাটক শেষ। এবার আমাদেরও খাবার পালা। কিন্তু মাথাটা কে খাবে এই নিলে বাধঁলো মহা সমস্যা। কারণ সবার মাথায়ই তখন নাটকের কাহিনী ঘুরছে। আব্বা বললেন, সবুজ কে দাও ( আমার দুলাভাইয়ের নাম)। দুলাভাই তো কিছুতেই নেবেন না। আম্মা একবার মাছের মাথা সহ চামচ দুলাভাইয়ের পাতের দিকে নিচ্ছেন আবার আব্বার দিকে নিচ্ছেন। আমরা বাকি সদস্যরা গম্ভীর মুখে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি ফলাফল দেখার জন্য। অবশেষে নাটকেরই জয় হলো। মাছের মাথাটা দুলাভাইয়ের পাতেই পড়লো। জামাই বইলে কতা...........................
জীবনের অনেক ঘটনা গল্পকেও হার মানায় । তেমনি মনে রাখার মত একটি হাস্যকর স্মৃতি ।
লিংক : http://prothom-aloblog.com/users/base/adhar/7
http://forum.amaderprojukti.com/viewtopic.php?f=21&t=3042
মাছের মাথা
Labels: My writings
নদী
নদীতে আমি কেবল লাশের গন্ধ পাই
অজস্র ধূলিকণায় জেগে থাকা
দেহের একেকটি অংশ
কিছু অস্পষ্ট স্মৃতি
দুই একটা ব্যর্থ জীবন, এইতো।
অতীতের কোন এক তীরে নেমেছিল
সময়ের তরী
আজও সেই পথ ধরে ভেসে আসা স্রোতে
যেন দেখতে পাই
ছিন্নভিন্ন হাজারো দেহ,
গৃহত্যাগী কোন বধূর ছেঁড়া আচঁল,
বৃদ্ধ বাবার ভেঙ্গে যাওয়া চশমা,
অথবা কাঁজল গাঁয়ের কোন এক দামাল ছেলে
শিশুর সরলতা যা চোখে মুখে,
আর পথ চলা সেই সব হাজারো মানুষ
যাদের দেহের গন্ধ আজো এই নদীতে
মিশে আছে,
সারা নদীতে আমি শুধু তাদের'কেই দেখি
সময়কে পিছে ফেলে যারা আজ হয়ে গেছে দূর।
নদী (১৮/২/৯৯)
Labels: আমার কবিতা
এলোমেলো
মাটিতো মা , মেয়ে নয় কেন?
মেয়েরাই তো মা হয়,
জন্ম দেয়, বড় করে.....
জননী জন্মভূমি, পৃথিবী নয় কেন?
পৃথিবীর বুকেই তো বেড়ে ওঠে
জন্মভূমি, জননীর মত...
আমি নারী, মানুষ নই কেন?
আমারো তো হাত আছে, চোখ আছে
আছে ভালবাসার অধিকার,
তবে আমি নির্যাতিত কেন?
আমি শিশু, বাবা নই কেন?
আমিই তো একদিন জন্ম দেবো
নতুন পৃথিবীর, তবে কেন এত বঞ্চনা?
চারিদিকে এত কেন,
সব জানি, তবু যেন
কিছুই জানি না
বিবেকের জানালা বন্ধ করে
নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দেই
প্রতিটি প্রহর।"
Labels: আমার কবিতা
পোকা
পোকারা পাতা খায়
আমরাও পাতা খাই,
তবে কি আমরা পোকা?
কেঁচো মাটি খুঁড়ে চলে
আমরা খুঁড়ে চলি সততার আবরণ,
ঘুষের পাত্রে হাত ধুয়ে
সততাকে খুঁড়ে চলি অনবরত,
পৃথিবী অনুর্বরা হয়,
আমরা ফুলে ফেঁপে দ্বিগুণ হয়ে উঠি।
কীটনাশক খেয়ে খেয়ে
পোকারা আরো শক্তিশালী হয়,
আর আমরা ধীরে ধীরে পরিণত হই
পোকাতে.........
Labels: আমার কবিতা
দু:খবিলাস
শরতের মেঘ খেলা করে আমার দু'চোখে
গলে যায়, ঝরে যায়, পড়ে যায়...
ভেসে যায়, আসে যায়, নিভে যায়,
দু:খ বিলাসী আমি...........................।।
আজ আমার চোখ ভেসে যায়, বুক ভেসে যায়, মুখ ভেসে যায়,
আজ আমার মন ভেসে যায়, গান ভেসে যায়, প্রাণ ভেসে যায়,
আজ আমার হৃদয় হাওয়ায় পাল তুলে যায় ঘাটের মাঝি,
আজ আমি রিক্ত হাতে , শূন্য ঘাটে শুধুই চেয়ে থাকি,
আজ আমি নি:স্ব বুকে , স্বপ্ন চোখে ভোরের পাতা আঁকি,
আজ আমার মনের কোণের গহীন বনে শুধুই মাতামাতি,
আজ আমি হাওয়ার দোলা, খেলার মেলা,অভিনয়ের গান,
তাই কি বুঝি ছিনিয়ে নিলে আমার শূণ্য প্রাণ?"
Labels: আমার কবিতা
ভুল কথন
ছোট্ট ছোট্ট ভুল অনু পরমাণুর মত
সৃষ্টি করে শত শত নতুন ভুলের
সারি বেঁধে বেড়ে চলে
নতুন ভুলের জন্ম দেবার আশায়
কোন এক অসংলগ্ন মূর্হুতে যে
সৃষ্টি করবে আর একটা ভুলের পৃথিবীর
ছন্দহীন, গদ্যময় নষ্ট একটা পৃথিবী
যেখানে ভালবাসার মায়াজাল নেই,
স্নেহ মমতার বালাই নেই,
দালান-কোঠাগুলো নির্মমতার কংক্রীটে ঢাকা
নিষ্টুরতার আচ্ছাদনে আচ্ছাদিত প্রতিটি ঘর
যেখানে মানুষেরা ভালবাসাকে
বাক্স বন্দী করে রাখে,
গাছের পাতাগুলো ঝরে পড়ে
নি:শব্দে, প্রিয়জন হারানোর বেদনায়
যে শহরে চাঁদের স্নিগ্ধ আলো নেই
আছে শুধু প্রতিহিংসার আগুন,
যে আগুনে কোন একদিন
চেনা পৃথিবীটা'কে অচেনা করে দিয়ে
জন্ম হবে আরেকটা নতুন পৃথিবীর।।
শেষ চিঠি
যা কিছু দিয়েছি তারে থাক পড়ে থাকনা
ভালবাসা কারে কয় ভুলেছি সে ভাবনা,
ছোট ছোট চাওয়াগুলো দুলে দুলে পড়ে যায়
আঁধারের হাত ধরে আঁধারের বাড়ি যায়,
মেঘে মেঘে খেলা করে সকালের রৌদ্র
হাতপাশ চারপাশ তুষারের শুভ্র,
মেঘে মেঘে বেলা হয় আকাশের ভাবনায়
যূথীবন খোলে মন পিয়ালের পাখনায়,
হেলেদুলে উড়ে চলে শালিকের কষ্ট
বুক ভাঙ্গা নদীগুলো হয় পথভ্রষ্ট।।
Labels: আমার কবিতা