Small journey

ছোট ছোট ঢেউ জুড়েই সুনামীর সৃষ্টি হয়

ফটোশপে গোল্ডেন টেক্সট

tআজ আমরা শিখবো কিভাবে ফটোশপে গোল্ড ইফেক্ট দিতে হয়।

স্টেপ ১:

Step 1
প্রথমে File মেন্যু থেকে একটি নতুন ডকুমেন্ট ওপেন করুন। এজন্য আপনি Ctrl+N কমান্ড দিয়েও কাজটি করতে পারেন। আমি এখানে নিচের সেটিংসটা নিয়েছি।

First open a document by pressing Ctrl+N or File-new .

ছবি
স্টেপ ২:
Step 2
এবার ফোরগ্রাউন্ড কালার কালো করে নিন। এজন্য কি-বোর্ডে D চাপলেই ফোরগ্রাউন্ড কালার কালো হয়ে যাবে। এবার লেয়ারটি কালো রং করে নিন। এটা আপনি চাইলে Atrl+Backspace চেপে করতে পারেন অথবা Fill color (G) টুল দিয়েও করতে পারেন। ফলে আপনার লেয়ারটি এমন দেখাবে।

Now make the foreground color black. For this press D on keyboard. Now press Atrl+Backspace of select Fill color(G ) . Now your image will be look like below.

ছবি

স্টেপ ৩:
Step 3

এবার কি-বোর্ডে X চেপে ফোরগ্রাউন্ড কালার সাদা করে নিন। টেক্সট টুল সিলেক্ট করুন। নতুন একটি লেয়ারে আপনার কাঙ্খিত টেক্সটি লিখুন এবং Ctrl+T চেপে ট্রান্সফরম করে টেক্সটিকে রিসাইজ করে নিন।

Press X key on keyboard in order to make the foreground color white. Select text tool. Now write a text in a new layer and transform it by pressing Ctrl+T. Follow the following settings.


ছবি

ছবি

স্টেপ ৪:

Step 4


Ctrl+J কমান্ড দিয়ে টেক্সট লেয়ারটির আরেকটি কপি তৈরী করুন। এবার কপি করা লেয়ারে ব্লেন্ডিং ইফেক্ট দিন। এজন্য আপনি লেয়ার প্যালেট এ দু'বার ক্লিক করলেই ব্লেন্ডিং অপশন আসবে। অথবা আপনি Layer-Layer style-blending option থেকেও এটা করতে পারেন। অথবা লেয়ার প্যালেটে রাইট মাউস ক্লিক করলে Blending অপশন আসবে।এবার নিচের সেটিংসগুলো দিন।প্রথমে Gradient Overlay যোগ করুন।

Create a copy of the text layer by pressing Ctrl+J . Now add blending option by right clicking on the layer thumnails or give this command " Layer-Layer style-blending option". Use the following settings. First add gradient overlay.

ছবি

ছবি

ছবি


এরপর Bevel & Emboss যোগ করুন।

Now add Bevel and Emboss.


ছবি

ছবি

ছবি

ছবি

ছবি

ছবি

Inner glow দিন।
Use inner glow.

ছবি

ছবি

স্টেপ ৫:

Step 5

এবার অরিজিনাল টেক্সট লেয়ারটি সিলেক্ট করুন। এবং আগের মত ব্লেন্ডিং অপশনে গিয়ে Stroke দিন।
Now select the original layer and give stroke from the blending option as step 4.


ছবি

ছবি

Stroke এর Gradient Overlay তে নিচের সেটিংসগুলো দিন।

ছবি

ছবি

এবারে Outer glow দিন।

Add Outer glow.

ছবি

ফলে আপনার ইমেজটি দেখতে এমন হবে।

Now your image will be look like this
ছবি

এর সাথে আরো কিছু ইফেক্ট যোগ করে আপনি আপনার ইমেজটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন। আমি এখানে বাড়তি ব্রাশ টুল ও লেভেল এ্যাড করেছি।

You can make your image more attractive by using more effects as you prefer. Here I use extra brush effect and also add level.

Thank you all.

ছবি

আমি চেষ্টা করেছি এমন একটা টিউটোরিয়াল দিতে যাতে একটা টিউটোরিয়াল রপ্ত করলেই ফটোশপের অনেকগুলো খুঁটিনাটি বিষয় শেখা যায়। এই টিউটোরিয়ালে মূলত: ব্লেন্ডিং অপশনের উপর জোর দেয়া হয়েছে। আশা করি এই টিউটোরিয়াল থেকে ব্লেন্ডিং অপশনের বিষয়টা সহজ হয়ে যাবে। টিউটোরিয়াল লিখতে লিখতে হঠাৎ ছেলেবেলায় শোনা সেই গল্পটা মনে পড়ে গেল। এক লোক সোনার আংটি হাতে পরে বাজার করতে গেছেন। মাছের দোকানে গিয়ে আংটি পরা আঙ্গুল টা'কে নাড়িয়ে বলছেন,"ঐ যে ঐ মাছ টা। ওটার দাম কত?" মাছওয়ালা তার সোনা বাধাঁনো দাঁতটা দেখিয়ে একগাল হেসে বললো,"৫০০ টাকা"। গল্পটা মনে পড়তেই মনে হলো আমার দাঁতগুলো কে সোনা দিয়ে বাধাঁলে কেমন হবে :-? অবশ্যই ফটোশপে। সোনার দাতঁ দিয়ে খেতে নিশ্চয় খুব একটা খারাপ লাগবে না। ভার্চুয়াল খাবার :k


লিংকটা এখানে http://forum.amaderprojukti.com/viewtopic.php?f=57&t=2912

আমার কথার প্যাঁচাপেঁচি

(শরীরটা ইদানীং ভাল যাচ্ছে না। প্রায়শ:ই অসুস্থতা আমার দেহের খাঁচায় ভর করে। সময় তার মত করেই বয়ে যায়, আর আমি আমার মতই থাকি । সেই একঘেঁয়ে ক্লান্তিকর জীবন। মাঝে মাঝে মাথার ভেতর কথারা বেড়াতে আসে। আমি তাদের কাগজে বসতে দিয়ে আপ্যায়ন করি। মনের মাধুরী মিশাই। তারা আস্তানা গাঁড়ে। কখনো কখনো তাদের আকাশের ঠিকানায় প্রমোদ ভ্রমণে পাঠাই । আজো একদলকে পাঠাচ্ছি । একটু বাতাস খেয়ে আসুক ।)



-জরি , ঐ জরি, ঘুমাইছস?
-ক্যাডা? ভেতর থেকে ফিসফিস করে কেউ বলে ওঠে। বাইরে আরেকটা ফিসফিসানির শব্দ ।
-আমি রফিক, বাইরে আয়, কতা আছে।
-কি কতা রফিক ভাই?
- বাইরে না আইলে কেমতে কই?
ফকফকে জ্যোৎস্নায় একটা ছায়ার্মূতি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে।বাঁশের ঝোপে খসখস শব্দ হয় । কাঁটাঝোপের আড়ালে পাতারা কানাকানি করে। কঞ্চি লতারা জরির আঁচল চেপে ধরে। আবছা আলোয় কচি বাঁশের শাখাগুলো আকুল আবেদন জানায়। যেন চুপিচুপি বলে ওঠে যাসনে।


-জলদি কও রফিক ভাই, মায়ে টের পাইলে সর্বনাশ হইয়া যাইবো।
-খ্যাতা পোড়াই তোর সর্বনাশের । চল নদীর ঘাটে যাই।
-না রফিক ভাই, আইজ ছাড়ান দেও। কাইল আমাক দেখবার আইসবো।
-দেখবার আইসবো মাইনে ? কারা দেখবার আইসবো, ক্যান দেখবার আইসবো ? রফিক খেঁকিয়ে ওঠে।
-বুড়িমারী থাইক্যা কারা জানি , মায়ের দূরসর্ম্পকের ভাইস্তা।
-আহুক গিয়া, দেহি কুন শালার কত মুরোদ, আমাক ছাড়ি তুই কই যাবি ? জরি, চল আমরা পলাই যাই। দেহিস, আমি তোর কোন অযত্ন করুম না। তুই সুখেই থাকবি। রফিক জরির হাতটা চেপে ধরে।
-এইডা কি কও রফিক ভাই, আমি যদি তোমার লগে যাই তয় মাইনষে আমার বাপ-মায়রে দুষবো না? কইবো , কেমন মাইয়া প্যাডে ধরছিলা, মুখে চুনকালি মাখাইয়া পলাইছে। আতুর ঘরে গলা টিইপ্যা মাইরা ফ্যালাইতে পারো নাই মিয়া? তহন আমার মা-বাপ গ্যারামে মুখ দেখাইবো ক্যামতে? তুমি যাও রফিক ভাই। সবের কপালে সবতে হয় না। তুমি আমারে দুর থাইক্যাই ভালবাইসো। ঘর সংসার কইরা সুখি হইবার চেষ্টা কইরো। তাইলেই আমি সুখি হমু।
- তুই এইডা কইবার পারলি জরি? আমি তরে ছাইড়া আরেকজনের লগে বিয়া করুম? তুই আমাক এইডা কইবার পারলি?
-ক্যান পারুম না কও। তোমারেও তো তোমার বাপ-মা কষ্ট কইরা মানুষ করছে। তাগোরে তুমি কষ্ট দিবার চাও? তাছাড়া তুমি তো এহন আর মানুষ নাই , মদ, জুয়া ,মাইয়া মানুষ .......... জরি কথা শেষ করে না ।
-এইডা আমার ব্যাপার, তুই যাবি কিনা ক? নাইলে কিন্তু........
-নাইলে কি রফিক ভাই?
-সেইডা সময়ে ট্যার পাবি ।
-রফিক ভাই তুমি এমুন বেবুঝ হইয়ো না। আমি তোমার লগে যাইবার পারুম না। মনে লও এইতেও তোমার আমার ভালা।
-তুই যাবিনা?
-না রফিক ভাই, আমারে তুমি ক্ষমা করো।
-আইচ্ছা, দেইখ্যা নিমু। ধুপধাপ শব্দ তুলে রফিক চলে যায়। ওর যাবার পথে জরি অপলক চেয়ে থাকে। এই মানুষটাকে ও কি ভালই না বেসেছে। ইস্ রফিক ভাই যদি একটা কাম জুটাইতো, নেশাটেশা না করতো, তাইলে বাপ-মা নিশ্চয় অমত করতো না। মেম্বারের ছাওয়াল, চেষ্টা করলে একটা কিছু নিশ্চয় জুটতো। কত শান্ত ছিল রফিক । পান সিগারেটের ধারে কাছে যেতো না । হঠাৎ কি হলো নেশা ধরলো, সাথে মেয়ে মানুষ। জরি কতবার বোঝাতে চেয়েছে এসব ভাল নয়। রফিক বুঝতে চায়নি। উল্টো ওকে ফুসলিয়েছে পালিয়ে যাবার জন্য । দীর্ঘশ্বাসকে বাতাসে উড়িয়ে জরি ঘুমাতে যায়। সে অন্যের ঘরের ঘরণী হবে হয়তো এটাই স্রষ্টার নিয়তি।

কাক ডাকা ভোরে জরির ঘুম ভেঙ্গে যায়। তবুও বিছানা ছেড়ে উঠতে মন চায় না। থাক না, আজ না হয় একটু দেরী করেই উঠলো, বাপের বাড়িতে আজই তার শেষ শয়ন, কাল যে জরী এখানে আসবে সে হবে অন্য কেউ।
-জরি, উঠ মা, এত বেইল কইরা ঘুমাইতে নাই, শ্বশুর বাড়ির লোকে মন্দ কইবো। মাইয়া মানুষ যত সহাল সহাল উঠবো ততই ভালা। মায়ের ডাক শুনে জরি নড়েচড়ে বসে। এখনো যাদের সে দেখেনি, জানেনি, সেইসব মানুষকে খুশি করার ট্রেনিং সে ঠিকানায় পৌছাঁবার আগেই শুরু হয়ে গেছে। জরির বুকটা ধড়াস করে ওঠে। সত্যিই কি ওখানে সবাই গালমন্দ করবে। পায়ে আলতা চড়িয়ে, মেহেদীর রঙয়ে হাতদুটো রাঙিয়ে একহাত লম্বা ঘোমটা টেনে জরি শ্বশুর বাড়ি চলে গেল। তালগাছের নিচে দাঁড়িয়ে ঝাপসা ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে রফিক তার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থাকে ।


চারপাশে ছোট-বড় অনেকে ভিড় করেছে নতুন বউ দেখবে বলে। দুটো শিশু ঠেলাঠেলি করছে
-সর , সর । আমার নতুন মামী। পাশের শিশুটি তখন মুখ ভেংচে জানান দিচ্ছে নববধুটি তারও আত্নীয়া।
-তর মামী আমার কি লয়? আমার চাচী । আমারডা বেশি আপনার। কি আশ্চর্য পৃথিবীর নিয়ম । কয়েক মুহূর্ত আগেও জরি ছিল শুধু একটি মেয়ে। তিনবার কবুলের সাথে সাথে কত আত্নীয়ের বাঁধনে বাধাঁ পড়ে গেছে । কত দায়িত্ব এখন তার। ভাবলেই মাথাটা ঘুরে আসে। একদিন এই শিশুদের মত জরিও অপেক্ষায় থেকেছে নতুন বউয়ের আগমনের। গ্রামে কারো বিয়ে হলেই জরির চোখে ঘুম থাকতো না। কারনে অকারনে বিয়ে বাড়িতে ঘুরঘুর করতো। ঔৎসুক চোখে অপেক্ষায় থাকতো কখন আসবে নতুন বউ। শাড়ি গহনার আড়ালে ক্লান্ত-ঘর্মাক্ত মুখটাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হতো। বুকে খেলা করতো চাপা উত্তেজনা। আর ছোট ছোট দীর্ঘশ্বাসকে বাতাসে ভাসিয়ে সেও স্বপ্ন দেখতো এমন একটা দিনের। জানতে ইচ্ছে করতো আগাগোড়া সাজানো গোছানো মানুষটার বুকের ভেতরে কেমন লাগছে । অথচ জানতো না জীবনের মঞ্চে এ এক আরেক গল্প পাঠের অভিষেক। আজ কাঁচের এধারে দাঁড়িয়ে অনুভূতির কোন রংই সে দেখতে পায়না। সবকিছুকে কেমন ক্লান্ত , বিষন্ন লাগে। কেউ একজন এগিয়ে এসে কোলে তুলে নেয়।
-আরে নয়া ভাবী যে দেহি এহেবারেই শুটকি । তালোই সাব মনে লয় ঠিকমত খাইবার দেয় নাই। আশেপাশের লোকজন হেসে ওঠে। জরির বুকটা বির্বণ হয়ে যায়। এ কেমনতর অপবাদ।
বৃদ্ধামত এক নারী এগিয়ে আসে। পাশ থেকে কেউ একজন বলে ওঠে, তোমার শাশুড়ি। কদমবুসি করো। জরি মাথা নামিয়ে কদমবুসি করে। বৃদ্ধা মিষ্টি মুখ করায়।
-আরে আরে টেকা কই , টেকা। শাশুড়িরে কদমবুসি করার টেকা দিবা না ? খালি হাতে কি কদমবুসি হয়। না বউয়ের বাপ-মা দেহি কিছুই শেখায় নাই। কোন এক আত্নীয়া বলে ওঠে।
-থাক, থাক অহন ঐসব বাদ দেও। জলিলের মা তুমি বউরে কোলের উপর বসাও। সহানুভূতির সুরে কে যেন বলে ওঠে। জরি তাকাতে সাহস পায়না। পাছে কোন ভুল হয়ে যায়। অথচ মুখটাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হয়। একটা মাদুরের উপর বসে জরির শাশুড়ি জরিকে হাঁটুর উপর বসায়। তারপর একটা পানের ভেতর একটা মিষ্টি পুরে জরিকে খেতে বলে। জরি বুঝতে পারে না কি করবে। কথামত পানটাকে মুখের ভেতর পুরে চিবানোর চেষ্টা করে। বিকৃত এক স্বাদ জরির গলা বেয়ে বুকের কাছে হঠাৎ আটকে যায়। জরি উগড়ে দেয় সবকিছু। আর তখনই আশেপাশ থেকে গুন্জন আসে , বউয়ের ধৈর্য্য দেহি এহেবারেই নাই। ও জলিলের মা কি মাইয়া ঘরে আনলা। আমগো জলিলের তো এহেবারে সাড়ে সর্বনাশ। জরির কানদুটো ঝাঁ ঝাঁ করে ওঠে।

বিয়েবাড়ির সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে জরিকে ঘুমাতে দেয়া হয় এক বিশাল ঘরে। যত রাজ্যের জ্ঞাতি দাদী নানী চাচী মুরুব্বী মহিলাদের বিশ্রামস্থল। ক্রমাগত পান চিবানোর শব্দ, বাতের ব্যথায় গোঙরানি, নাক ডাকার ফোঁসফোঁস শব্দ জরির রাতের ঘুম কেড়ে নেয়। সেই মানুষটাকে কোথাও দেখতে পায় না যার সাথে তার সারাটা জীবন তিন কবুলের বন্ধনে বাধাঁ পড়ে গেছে। নির্ঘুম চোখে জরি এপাশ ওপাশ করে। অথচ এই রাতটাকে নিয়ে সে কত স্বপ্নই না দেখেছিল। মঞ্চের উপরের দৃশ্যটাই সে সবসময় দেখেছে। পর্দার আড়ালের পৃথিবী তার অচেনা।

বৌভাত শেষে পড়ন্ত বিকেলে গরুর গাড়িতে দুলতে দুলতে জরি বাপের বাড়ির পথে রওয়ানা দেয়। সামনে দিকে মুখ করে তার স্বামী বসা। এপাশে ঘোমটার আড়ালে জরি মেঠো পথ ধরে চেনা গাছগুলোকে খুঁজতে থাকে। কাল রাতের আঁধারে কিছুই দেখতে পায় নি। বিকেলের শেষ আলোয় দূরের ধানক্ষেতটাকে মনে হয় বিশাল এক সবুজ শাড়ি। তারই পাশঘেঁষে সাদা আলের রেখাকে মনে হয় চওড়া পাড়। ইচ্ছে করে সেই বিশাল শাড়িটায় শরীরটাকে জড়িয়ে দিগন্তের শেষে হারিয়ে যায়।
-আরে ঐযে অরা সব আইয়া পরছে। মায়ের গলার স্বর শুনে জরি সম্বিৎ ফিরে পায়। দৌড়ে মায়ের কাছে যায়।
-মাগো।
- ধুর পাগলি। এইতো আমি। মা বুকে জড়িয়ে নেয়। মাত্র একরাত, একদিন । তাতেই মনে হচ্ছে কত যুগ পরে জরি ফিরে এসেছে।

বাতাসে ভ্যাপসা গরম। টিনের চালে ঘাম বাষ্প হযে উড়ে গিয়ে শুকিয়ে যায়। সে বাষ্পে মেঘ তৈরী হয় না। শুধু ঘরের ভেতর জেগে থাকা দুটি শরীরে বৃষ্টি বৃষ্টি খেলা করে । ঢেউ তোলে, ভেঙ্গে যায়, গুঁড়িয়ে দেয়। আজ জরির বাসর রাত। বিবাহিত জীবনের বহু কাঙ্খিত রাত। ঢেউ তুলে বাঁধ ভেঙ্গে একসময় সব খেলা শেষ হয়। পাশের মানুষটি ক্লান্ত হয়ে ঘুমের রাজ্যে পা বাড়ায়। অন্ধকারে আরেকটা বুকে তখন লাল-নীল-ছাই তুষের আগুন জ্বলে। মনে হয় অন্ধকারের ভেতর থেকে লাল-নীল হাসির প্রতিধ্বনি তার ঘরের চালে টুংটাং করে বাজছে। দাঁতে দাঁত চেপে রফিক বিছানায় ছটফট করতে থাকে। টিনের চালে হাসির প্রতিধ্বনি প্রবল থেকে আরো প্রবল হয়। লাল শাড়ীর আচঁল, পদ্ম ডাটার মত নরম শরীর হাতছানি দেয়। রফিক ছুটে বাইরে বেরিয়ে আসে।

মুয়াজ্জিনের ঘুম ভাঙ্গতে এখনো বাকি । জরি বিছানা ছেড়ে নেমে যায়। মনে হয় শরীরের ভাঁজে ভাঁজে কে যেন ভালবাসার করাত চালিয়েছে। নিজের শরীরটাকে অচেনা মনে হয়। ক্লান্ত লাগে। ইচ্ছে করে পদ্মপাতার মত পুকুরে একটু ভেসে থাকতে। একটু একটু দুলতে দুলতে জরি পুকুর ঘাঁটে যায়। ভালবাসার আদরগুলোর সুগন্ধ পুকুরের পানিতে আলতো আলতো করে ছড়াতে থাকে। পদ্মডাটাগুলোর দিকে তাকিয়ে নিজের মনেই হেসে ওঠে । একটু আঙ্গুল ছুঁয়ে দেয়। আনমনে বলে ওঠে , অমন বেহায়ার মত চাইয়া থাহিস না, আমার শরম করে না বুঝি ? পদ্মডাটারা দুলে উঠে নিজেদের বেহায়ত্ব প্রমাণ করে । কিংবা কে জানে তারাও জরির গায়ে ভালবাসার পরশ দিতে না পেরে ঈর্ষান্বিত হয়।

-জরি । এই জরি । গলার আওয়াজ শুনে জরি চমকে ওঠে। বুকের ভেতর টা কেঁপে ওঠে। দেহের সবটুকু শক্তি দিয়ে পদ্মডাটাগুলোকে চেপে ধরে। কে ডাকে তাকে ?কিছু বুঝে ওঠার আগেই শক্ত দুটো হাত জরিকে পুকুরের নিচের তলার দিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। জরি পদ্মডাটাগুলোকে আরো প্রবল ভাবে চেপে ধরে ওপরে ওঠার চেষ্টা করে। পারে না কিছুতেই। পদ্মডাটাগুলো আরো জড়িয়ে যায়। পুকুরের পানিতে ঝপঝপ শব্দ হয়। মায়ের ঘুম ভেঙ্গে যায় । কোন এক মিষ্টি রাতের কথা মনে করে মা আবার ঘুমিয়ে পড়ে ।

দিনের আলো ছুঁয়েছে ভোরের আকাশ। সকালের প্রথম সূর্য সহানুভূতির চাদর বিছিয়ে একে একে ছুঁয়ে যায় ঘাস, মাছ, পুকুরঘাট । শীতল পানি একটু একটু করে উষ্ণ হতে থাকে। ঠান্ডা পানিতে ভেসে থাকা উষ্ণ দেহটা আস্তে আস্তে শীতল হতে থাকে। সেই সাথে শীতলতা ভর করে ভালবাসার ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে । রফিক সম্বিৎ ফিরে পায়। জরির দেহটার দিকে অপলক চেয়ে থাকে। কি করেছে সে । ভালভাবে বোঝার চেষ্টা করে । বুঝতে পারে না কিছুই । শুধু পদ্মপাতারা জরির স্থবির শরীরটাকে নিবিড়, আরো নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে .....................


২২মে , ২০০৯

আজাকারের লাগি

অনেকদিন পর গতপরশু সচলায়তনে লিখলাম । জানিনা কেমন হলো । কিছু একটা করার দায়বদ্ধতা থেকে লিখা । লিংক :

http://www.sachalayatan.com/guest_writer/24434#new

আজাকারের লাগি


লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২০০৯-০৫-১৯ ০৩:০২)
ক্যাটেগরী: | | | |

(উৎসর্গ : ভালবাসার রক্ত ঢেলে যারা গড়ছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ )
- স্যার মনে হয় ওর হাতের আঙ্গুলগুলান বেশি লম্বা। একটু কাইট্যা দিলেই সব সাইজ হইয়া যাইবো। তহন আর কিছু লেখবার পারবোনা। হালা বইলে শিক্ষিত, দ্যাহেন তো স্যার , সামান্য একখান কথা কইতে পারেনা আবার বইলে ভাষার জন্য যুদ্ধ করছে। হাম তিনবার প্যারাইমারী ফেইল দিয়াও ওর চেয়ে ভাল কইতে পারি। পাকিস্তান জিন্দাবাদ, পাকিস্তান জিন্দাবাদ।

মাঝরাতে দেয়ালের গাঁথুনিতে, সিলিংয়ের কোণায় বাড়ি খেয়ে কথাগুলো ঠুকঠাক করতে থাকে । মস্তবড় এই দালানের একটুকরো ইট আমি আড়ি পেতে থাকি আরো কিছু শোনা যায় কিনা। প্রায় প্রতিরাতেই কিছু না কিছু ঘটছে। দিনগুলোও বাদ পড়ে নেই । ফাগুনের এই শেষ বিদায়ের বেলায় আমরা ঘরের প্রতিটি কাঠ, আসবাব, ইট, সিমেন্ট, সুরকি চুপিচুপি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি । কখনো ঔৎস্যুক চোখে , কানের ফুটোগুলোকে একটু বড় করে একাত্তর দেখি।

ওপাশে চেয়ারে বসে থাকা মানুষটার পেশীগুলো তখন ফুঁলে উঠেছে। কিছু না করতে পারার ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে শরীরের কোষে কোষে। যদি একবার হাতের মুঠোয় পেতো। একটা দীর্ঘশ্বাস লুটোপুটি খায় শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, বাম নিলয় থেকে ডান নিলয়ে, কলিজায়।পরক্ষণেই ঝলকে উঠে পেশীগুলো শান্ত হয়ে আসে। হাত দুটো বাঁধা। চুলগুলোকে কে যেন মুঠোর মধ্যে প্রবল আক্রোশে চেপে ধরে। আড়চোখে তাকিয়ে দেখে মাতৃভূমির বিশ্বাসঘাতক সন্তানের মুখ । শরীফ সর্দার। একদিন কবরের মাটিও যাকে আলিঙ্গন করতে অস্বীকার করবে।

-আপ কুছ লেঙ্গে কেয়া? ঠান্ডা অর কফি? সিগরেট পিয়েঙ্গে আপ? ও হাম তো ভুল হি গ্যায়া, আপ মুসলমান হে। আরে হাম তো ভাই স্রেফ মু বোলি মুসলমান হ্যায়। থোরা সা জাম , থোরা নাম অর থোরা সা ............মুখটা’কে অশ্লীলভাবে বিকৃত করে মেজর কিছু একটা অসভ্য ইঙ্গিত করে।

- মি: রাইটার , শুনাহে আপ রোমান্টিক কাহানী লিখতাহে বহত খুউব। ক্যান ইউ ইমাজিন দ্যাট হাম আপকা আম্মি কে সাথ সুহাগ রাত মানানে গেয়ি অর আধি রাত কো .........হা হা হা । এক পশলা কুৎসিত হাসি সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। চেয়ারে বসে থাকা মানুষটা’র চোখদুটো রর্ক্তাত্ত হয়ে ওঠে যেন চোখ দিয়েই ধূলিস্মাৎ করে দেবে সামনে দাঁড়ানো মানুষরুপী জানোয়ারটিকে।
- আরে , আপতো বহত গুছ্ছেমে হে। আরে ভাই , হাম বুরা ক্যা বোলা? আপকো মন্জুর নেহি তো হাম নাহি যায়েঙ্গে আপকা ঘর আপকা আম্মিকে সাথ সুহাগরাত মানানে। লেকিন ইসকে লিয়ে আপকো তো কুচ দেনে পড়েগা হামকো। সমঝিয়ে সাম স্মল গিফট। কেয়া আপকো হামারি দোস্তী মন্জুর হ্যায়? সামনের চোখ দুটো নির্বাক। জানোয়ারটা কি বলতে চায়।

-নো নো আপ টেনশন মাতলো। হাম কুচ মেহেঙ্গা গিফট নাহি মাঙ্গতা, আপ স্রেফ ইয়ে কাহিয়ে আপকা আউর সাথি কাহা হে । হাম আপকো ছোড় দেঙ্গে।

একদলা রর্ক্তাত্ত থুথুর শিলাবৃষ্টি চেয়ারের দিক থেকে ছুটে আসে। মেজরের মুখে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে লাল-সাদা থুথুর বৃষ্টি।
-শালা হারামকে আওলাদ। কাট দো উসকে হাত কো।

-হ স্যার, হামভি ইয়ে বলতে চাই। উসকা হাত কাইট্যা দ্যান, তারপর দেহি কোন হাত দিয়া শালা বন্দুক ধরে, কলম দিয়া রাইট করে। চেয়ারে বসে থাকা মানুষটার হাতদুটোকে সুপারীর মত ঝাঁতার বাহুডোরে আবদ্ধ করে দেয় শরীফ সর্দার । তারপর টুক করে একটা শব্দ, শূন্য থেকে কয়েকটা আঙ্গুল পাকা করমচার মত টুপ করে মাটিতে খসে পড়ে।

-দেখলি তো আমি কি করবার পারি। শরীফ ফুঁসে ওঠে ।

-একদিন এই হাত দিয়া তুই আমার কলাট চাইপ্যা ধরছিলি মনে নাই? দুষটা কার বেশি ছিল ক, আমি না হয় তোর সুন্দরী বউটার দিকে চাইছিলাম, তুই ক্যান অমন সুন্দর একটা মাইয়া বিয়া করছিলি? ক? চুপ কইরা থাহস ক্যা? অহন তো তর বউ, ঘর সব ভ্যানিশ।

-পানি, পানি। একটু পানি। গলাটা শুকিয়ে আসছে। একটু পানি............চেয়ারের উপরে থাকা মানুষটা চেঁচিয়ে ওঠে ।

-শরীফ সাহাব, আপকা পাস কুছ হ্যা কেয়া , উসকো পিলাইয়ে না। আফটার অল ইয়ে আপকা মুল্লুকটা লেড়কা হে। মেজর সাহেবের গলায় দরদ উপচে পড়ে।

-হ স্যার, জরুর হ্যায়। হামারা তল পেট কুচ ভরা ভরা লাগতা। স্যার হাম আভি আতিহে। পা চাটা কুকুরের মত কুঁইকুঁই করতে করতে শরীফ ব্যস্ত হয়ে পড়ে মেজরের হুকুম তামিল করতে।

-আরে শরীফ সাহাব, আপ উধার কাহা যাতিহে, এহি আনজাম করো না। যরা হামভি দেখে।
শরীফ তার তলপেট খালি করে সবটুকু শয়তানীর নির্যাস চেয়ারের উপর বসে থাকা মানুষটার তৃষ্ণার্ত ঠোঁটদুটোর দিকে ছড়িয়ে দেয়। ক্লান্ত দেহটা ঘৃণায় কুকঁড়ে ওঠে।

-আল্লাহ তোদের কক্ষনো ক্ষমা করবে না শয়তান। একদিন এই বাংলাদেশে তোরা কুকুরের মত মরে থাকবি।রাগে , ঘৃণায় , ক্ষোভে চেয়ারটা দুলে ওঠে।

-আমি শয়তান? শরীফ খেঁকিয়ে ওঠে। দেহাইতাছি কেডা কুকুরের মত মইরা থাহে। মেজর সাব, ইয়ে আপকো শয়তান বোলা। এইডারে বেহেস্তে পাঠানোর বন্দোবস্ত করদি জি য়ে স্যার। দেরী করলে কিন্তুক ব্যাটা আমগোরেই বেহেস্তে পাঠাইয়া দিবো।

-নাহি, ইয়ে ছোটামোটা কাম তুমহি করো। হামারা তবিয়ত আচ্ছি নেহি হে। হামকো থোরাসা চেন্জ জরুরত হ্যায়। নয়া মাল কো আচ্ছি সে পিনা হ্যায়। ক্যায়সি খুবসুরত। হ্যায়, নিন্দ উড় গ্যায়ী।

চল, বেজন্মার পূত, আল্লাহর কাছে যাইয়া পরাণ ভইরা আমগো গাইল পার। কোরবাণীর ছুরি টা বাতাসে লাফিয়ে ওঠে ।আল্লাহু আকবর.............রক্তের স্রোত ঘরটাকে ভাসিয়ে দেয়। চেয়ারের উপর বসে থাকা বন্দী দেহটা একসময় দেহের খাঁচা ছেড়ে অনন্তলোকে পাড়ি জমায়।

অমাবস্যা
১৯মে ২০০৯


কবিতা



যদি নির্বাসন দাও
সূনীল গঙ্গোপাধ্যায়


যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো!
বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ
নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ
প্রান্তরে দিগন্ত নিনির্মেষ-
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো।

ধানক্ষেতে চাপ চাপ রক্ত
এইখানে ঝরেছিল মানুষের ঘাম
এখনো স্নানের আগে কেউ কেউ করে থাকে নদীকে প্রণাম
এখনো নদীর বুকে
মোচার খোলায় ঘোরে

লুঠেরা, ফেরারী!
শহরে বন্দরে এত অগ্নি বৃষ্টি
বৃষ্টিতে চিক্কণ তবু এক একটি অপরূপ ভোর
বাজারে ক্রুরতা, গ্রামে রণহিংসা
বাতাবি লেবুর গাছে জোনাকির ঝিকমিক খেলা
বিশাল প্রাসাদে বসে কাপুরুষতার মেলা
বুলেট ও বিস্ফোরণ
শঠ তঞ্চকের এত ছদ্মবেশ
রাত্রির শিশিরে কাঁপে ঘাস ফুল-
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো।

কুয়াশার মধ্যে এক শিশু যায় ভোরের ইস্কুলে
নিথর দিঘির পাড়ে বসে আছে বক
আমি কি ভুলেছি সব
স্মৃতি, তুমি এত প্রতারক?
আমি কি দেখিনি কোনো মন্থর বিকেলে
শিমুল তুলোর ওড়াউড়ি?
মোষের ঘাড়ের মত পরিশ্রমী মানুষের পাশে
শিউলি ফুলের মত বালিকার হাসি
নিইনি কি খেজুর রসের ঘ্রাণ
শুনিনি কি দুপুরে চিলের
তীক্ষ স্বর?
বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ…
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো।

জুলাই ১৯৭১ : গঙ্গা থেকে বুড়িগঙ্গা



মন ভালো নেই
সূনীল গঙ্গোপাধ্যায়


মন ভালো নেই
মন ভালো নেই
মন ভালো নেই
কেউ তা বোঝে না
সকলি গোপন
মুখে ছায়া নেই
চোখ খোলা তবু
চোখ বুজে আছি
কে তা দেখেনি
প্রতিদিন কাটে
দিন কেটে যায়
আশায় আশায় আশায় আশায়

এখন আমার
ওষ্ঠে লাগে না
কোনো প্রিয় স্বাদ
এমনকি নারী
এমনকি নারী
এমনকি নারী
এমন কি সুরা এমন কি ভাষা

মন ভালো নেই
মন ভালো নেই
মন ভালো নেই
বিকেল বেলায়
একলা একলা
পথে ঘুরে ঘুরে
একলা একলা পথে ঘুরে ঘুরে একলা একলা পথে ঘুরে ঘুরে

কিছুই খুঁজি না
কোথাও যাই না
কাউকে চাইনি
কিছুই খুঁজি না কোথাও যাই না
আমিও মানুষ
আমার কী আছে
অথবা কী ছিল
আমার কী আছে অথবা কী ছিল
ফুলের ভিতরে
বীজের ভিতরে
ঘুণের ভিতরে
যেমন আগুন আগুন আগুন আগুন আগুন

মন ভালো নেই
মন ভালো নেই
মন ভালো নেই
তবু দিন কাটে
দিন কেটে যায়
আশায় আশায়
আশায় আশায় আশায় আশায়

কোনোদিন দেখিব না তারে আমি
জীবনানন্দ দাস


কোনোদিন দেখিব না তারে আমি: হেমন্তে পাকিবে ধান, আষাঢ়ের রাতে
কালো মেঘ নিঙড়ায়ে সবুজ বাঁশের বন গেয়ে যাবে উচ্ছ্বাসের গান
সারারাত, — তবু আমি সাপচরা অন্ধ পথে — বেনুবনে তাহার সন্ধান
পাবো নাকে: পুকুরের পাড়ে সে যে আসিবে না কোনোদিন হাঁসিনীর সাথে,
সে কোনো জ্যোৎস্নায় আর আসিবে না — আসিবে না কখনো প্রভাতে,
যখন দুপুরে রোদে অপরাজিতার মুখ হয়ে থাকে ম্লান,
যখন মেঘের রঙে পথহারা দাঁড়কাক পেয়ে গেছে ঘরের সন্ধান,
ধূসর সন্ধ্যায় সেই আসিবে না সে এখানে; — এইখানে ধুন্দুল লতাতে

জোনাকি আসিবে শুধু: ঝিঁঝিঁ শুধু; সারারাত কথা কবে ঘাসে আর ঘাসে
বাদুড় উড়িবে শুধু পাখনা ভিজায়ে নিয়ে শান্ত হয়ে রাতের বাতাসে;
প্রতিটি নক্ষত্র তার স’ান খুঁজে জেগে রবে প্রতিটির পাশে
নীরব ধূসর কণা লেগে রবে তুচ্ছ অনূকণাটির শ্বাসে
অন্ধকারে — তুমি, সখি চলে গেলে দূরে তবু; — হৃদয়ের গভীর বিশ্বাসে
অশ্বত্থের শাখা ঐ দুলিতেছে; আলো আসে, ভোর হয়ে আসে।


স্বভাব
জীবনানন্দ দাস


যদিও আমার চোখে ঢের নদী ছিলো একদিন
পুনরায় আমাদের দেশে ভোর হ’লে,
তবুও একটি নদী দেখা যেতো শুধু তারপর;
কেবল একটি নারী কুয়াশা ফুরোলে
নদীর রেখার পার লক্ষ্য ক’রে চলে;
সূর্যের সমস্ত গোল সোনার ভিতরে
মানুষের শরীরের স্থিরতর মর্যাদার মতো
তার সেই মূর্তি এসে পড়ে।
সূর্যের সম্পূর্ণ বড় বিভোর পরিধি
যেন তার নিজের জিনিস।
এতদিন পরে সেইসব ফিরে পেতে
সময়ের কাছে যদি করি সুপারিশ
তা’হলে সে স্মৃতি দেবে সহিষ্ণু আলোয়
দু-একটি হেমন্তের রাত্রির প্রথম প্রহরে;
যদিও লক্ষ লোক পৃথিবীতে আজ
আচ্ছন্ন মাছির মত মরে -
তবুও একটি নারী ‘ভোরের নদীর
জলের ভিতরে জল চিরদিন সূর্যের আলোয় গড়াবে’
এ রকম দু-চারটে ভয়াবহ স্বাভাবিক কথা
ভেবে শেষ হ’য়ে গেছে একদিন সাধারণভাবে।

প্রিয় কবিতা ; হেলাল হাফিজ

ভূমিহীন কৃষকের গান

দুই ইঞ্চি জায়গা হবে?
বহুদিন চাষাবাদ করিনা সুখের।

মাত্র ইঞ্চি দুই জমি চাই
এর বেশী কখনো চাবো না,
যুক্তিসঙ্গত এই জৈবনিক দাবি খুব বিজ্ঞানসম্মত
তবু ওটুকু পাবো না
এমন কী অপরাধ কখন করেছি!

ততোটা উর্বর আর সুমসৃণ না হলেও ক্ষতি নেই
ক্ষোভ নেই লাবন্যের পুষ্টিহীনতায়,
যাবতীয় সার ও সোহাগ দিয়ে
একনিষ্ঠ পরিচর্যা দিয়ে
যোগ্য করে নেবো তাকে কর্মিষ্ঠ কৃষকের মত।

একদিন দিন চলে যাবে মৌসুম ফুরাবে,
জরা আর খরায় পীড়িত খাঁ খাঁ
অকর্ষিত ওলো জমি
কেঁদে-কেটে কৃষক পাবে না।

১২.১১.৮১


হৃদয়ের ঋণ

আমার জীবন ভালোবাসাহীন গেলে
কলঙ্ক হবে কলঙ্ক হবে তোর,
খুব সামান্য হৃদয়ের ঋণ পেলে
বেদনাকে নিয়ে সচ্ছলতার ঘর

বাঁধবো নিমেষে। শর্তবিহীন হাত
গচ্ছিত রেখে লাজুক দু’হাতে আমি
কাটাবো উজাড় যুগলবন্দী হাত
অযুত স্বপ্নে। শুনেছি জীবন দামী,

একবার আসে, তাকে ভালোবেসে যদি
অমার্জনীয় অপরাধ হয় হোক,
ইতিহাস দেবে অমরতা নিরবধি
আয় মেয়ে গড়ি চারু আনন্দলোক।

দেখবো দেখাবো পরস্পরকে খুলে
যতো সুখ আর দুঃখের সব দাগ,
আয় না পাষাণী একবার পথ ভুলে
পরীক্ষা হোক কার কতো অনুরাগ।

২২.৬.৮৩


ব্যবধান

অতো বেশ নিকটে এসো না, তুমি পুড়ে যাবে,
কিছুটা আড়াল কিছু ব্যবধান থাকা খুব ভালো।
বিদ্যুত সুপারিবাহী দু’টি তার
বিজ্ঞানসম্মত ভাবে যতোটুকু দূরে থাকে
তুমি ঠিক ততোখানি নিরাপদ কাছাকাছি থেকো,
সমূহ বিপদ হবে এর বেশী নিকটে এসো না।

মানুষ গিয়েছে ভূলে কী কী তার মৌল উপাদান।
তাদের ভেতরে আজ বৃক্ষের মতন সেই সহনশীলতা নেই,
ধ্রুপদী স্নিগ্ধতা নেই, নদীর মৌনতা নিয়ে মুগ্ধ মানুষ
কল্যাণের দিকে আর প্রবাহিত হয় না এখন।

আজকাল অধঃপতনের দিকে সুপারসনিক গতি মানুষের
সঙ্গত সীমানা ছেড়ে অদ্ভুত নগরে যেন হিজরতের প্রতিযোগিতা।

তবু তুমি কাছে যেতে চাও? কার কাছে যাবে?
পশু-পাখিদের কিছু নিতে তুমুল উল্লাসে যেন
বসবাস করে আজ কুলীন মানুষ।

১০.২.৮২


মানবানল

আগুন আর কতোটুকু পোড়ে ?
সীমাবদ্ধ ক্ষয় তার সীমিত বিনাশ,
মানুষের মতো আর অতো নয় আগুনের সোনালি সন্ত্রাস।

আগুন পোড়ালে তবু কিছু রাখে
কিছু থাকে,
হোক না তা শ্যামল রঙ ছাই,
মানুষে পোড়ালে আর কিছুই রাখে না
কিচ্ছু থাকে না,
খাঁ খাঁ বিরান, আমার কিছু নাই।

৭.২.৮১


অচল প্রেমের পদ্য - ০১

আছি।
বড্ড জানান দিতে ইচ্ছে করে, - আছি,
মনে ও মগজে
গুন্‌ গুন্‌ করে
প্রণয়ের মৌমাছি।


তুমি ডাক দিলে

একবার ডাক দিয়ে দেখো আমি কতোটা কাঙাল,
কতো হুলুস্থূল অনটন আজম্ন ভেতরে আমার।

তুমি ডাক দিলে
নষ্ঠ কষ্ঠ সব নিমিষেই ঝেড়ে মুছে
শব্দের অধিক দ্রুত গতিতে পৌছুবো
পরিণত প্রণয়ের উৎসমূল ছোঁব
পথে এতোটুকু দেরিও করবো না।
তুমি ডাক দিলে
সীমাহীন খাঁ খাঁ নিয়ে মরোদ্যান হবো,
তুমি রাজি হলে
যুগল আহলাদে এক মনোরম আশ্রম বানাবো।

একবার আমন্রণ পেলে
সব কিছু ফেলে
তোমার উদ্দেশে দেবো উজাড় উড়াল,
অভয়ারণ্য হবে কথা দিলে
লোকালয়ে থাকবো না আর
আমরণ পাখি হয়ে যাবো, -খাবো মৌনতা তোমার


ইদানিং জীবন যাপন


আমার কষ্টেরা বেশ ভালোই আছেন,
প্রাত্যহিক সব কাজ ঠিক-ঠাক করে চলেছেন
খাচ্ছেন-দাচ্ছেন, অফিসে যাচ্ছেন,
প্রেসক্লাবে আড্ডাও দিচ্ছেন।

মাঝে মাঝে কষ্টেরা আমার
সারাটা বিকেল বসে দেখেন মৌসুমী খেলা,
গোল স্টেডিয়াম যেন হয়ে যায় নিজেই কবিতা।

আজকাল আমার কষ্টেরা বেশ ভালোই থাকেন,
অঙ্কুরোদ্‌গম প্রিয় এলোমেলো যুবকের
অতৃপ্ত মানুষের শুশ্রূষা করেন। বিরোধী দলের ভুল
মিছিলের শোভা দেখে হাসেন তুমুল,
ক্লান্তিতে গভীর রাতে ঘরহীন ঘরেও ফেরেন,
নির্জন নগরে তারা কতিপয় নাগরিক যেন
কতো কথোপকথনে কাটান বাকিটা রাত,
অবশেষে কিশোরীর বুকের মতন সাদা ভোরবেলা
অধিক ক্লান্তিতে সব ঘুমিয়ে পড়েন।

আমার কষ্টেরা বেশ ভালোই আছেন, মোটামুটি সুখেই আছেন।
প্রিয় দেশবাসী;
আপনারা কেমন আছেন?

২.১০.৮০


ফেরীঅলা

কষ্ট নেবে কষ্ট
হরেক রকম কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট !

লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট
পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট,
আলোর মাঝে কালোর কষ্ট
‘মালটি-কালার’ কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট ।

ঘরের কষ্ট পরেরর কষ্ট পাখি এবং পাতার কষ্ট
দাড়ির কষ্ট
চোখের বুকের নখের কষ্ট,
একটি মানুষ খুব নীরবে নষ্ট হবার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট ।

প্রেমের কষ্ট ঘৃণার কষ্ট নদী এবং নারীর কষ্ট
অনাদর ও অবহেলার তুমুল কষ্ট,
ভুল রমণী ভালোবাসার
ভুল নেতাদের জনসভার
হাইড্রোজনে দুইটি জোকার নষ্ট হবার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট ।

দিনের কষ্ট রাতের কষ্ট
পথের এবং পায়ের কষ্ট
অসাধারণ করুণ চারু কষ্ট ফেরীঅলার কষ্ট
কষ্ট নেবে কষ্ট ।

আর কে দেবে আমি ছাড়া
আসল শোভন কষ্ট,
কার পুড়েছে জন্ম থেকে কপাল এমন
আমার মত ক’জনের আর
সব হয়েছে নষ্ট,
আর কে দেবে আমার মতো হৃষ্টপুষ্ট কষ্ট ।


অমিমাংসিত সন্ধি

তোমাকে শুধু তোমাকে চাই, পাবো?
পাই বা না পাই এক জীবনে তোমার কাছেই যাবো।

ইচ্ছে হলে দেখতে দিও, দেখো
হাত বাড়িয়ে হাত চেয়েছি রাখতে দিও, রেখো

অপূণতায় নষ্টে-কষ্টে গেলো
এতোটা কাল, আজকে যদি মাতাল জোয়ার এলো
এসো দু’জন প্লাবিত হই প্রেমে
নিরাভরণ সখ্য হবে যুগল-স্নানে নেমে।

থাকবো ব্যাকুল শর্তবিহীন নত
পরস্পরের বুকের কাছে মুগ্ধ অভিভূত।

১০.৩.৮২

My deviations




সচলায়তনে লেখা প্রথম গল্প


লিংক :
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/22804

ক্ষত

(এক পরিচিতার কাছে জানতে চেয়েছিলাম '৭১ এর বীরাঙ্গনাদের ইতিহাস। কথা প্রসঙ্গে বললেন এক বৃদ্ধার কথা যাকে মিলিটারীরা প্রশ্ন করেছিল পুরানধানে কি খই হয়? বৃদ্ধা না বুঝেই মাথা নেড়েছিল। পুরষ্কার হিসেবে তাকেও বরণ করতে হয়েছিল বীরাঙ্গনার গল্প।'৭১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত তাদের স্মরণে যাদের ভালবাসায় পূর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ।)

আমিও মৃতদের দলে। যারা বেঁচে থেকে মরে আছে। মাঝে মাঝে ভুলে যাই বেঁচে আছি না মরে গেছি। গাঁদা গাঁদা মৃতদের ভিড়ে নিজেকেও মৃত বলে মনে হয়। যন্ত্রের মত মৃতদেহগুলোকে কবরে নামাই। মেয়েগুলোকে দেখলে শরীর শিউরে ওঠে। একটা প্রশ্ন মনের ভেতর ঘুরপাক খায়, মেয়েদের শরীরটাই কি মেয়েদের বড় শত্রু ? শরীরগুলোর দিকে তাকানো যায় না। স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে বেয়োনেটের খোঁচা। কোথাও মাংসপিন্ড নেই। সারামুখে , সারা শরীরে অসংখ্য নখের আচঁড়, দাঁতের ফলা কোথাও সৃষ্টি করেছে গহব্বর। ফোঁটা ফোঁটা রক্ত সেই গহব্বরে সৃষ্টি করেছে কৃত্রিম হ্রদ। লাল লাল পানিতে সাঁতার কাটছে মাছি। বুকের পর্বত পাশেই পড়ে আছে, ছেঁড়া, রক্তাত্ত। কোথাও বাসা বেধেঁছে মেটে ইদুঁর। লাল-কালচে রক্তে সারি সারি পিঁপড়ের সারি। পুরুষগুলোর কারো চোখ বাঁধা, বেয়োনেটের আঘাতে জর্জরিত। গলিত, কর্দমাক্ত, বিভৎস লাশগুলোকে দেখলে চোখ দুটো বুঁজে আসে। কোন মতে মাটি চাপা দেই। কোন কোন দিন মাঝরাতে ডিউটি দিতে দিতে ভাবি যারা ছিল, তারা সব কোথায় গেল, কোন অজানা রাজ্য, চুপিচুপি । কেউ তো একবারো ফিরে এসে বললো না কোথায় গিয়েছে তারা, কেমন আছে।

ঘুম ঘুম চোখে কাঁধে রাইফেল ঝুলিয়ে লেফট-রাইট করতে করতে ধান ক্ষেতের দিকে হাঁটা শুরু করি। কখনো কখনো মাটির উচুঁ ঢিবিটার উপর বসে দেখতে চেষ্টা করি কোথাও কিছু দেখা যায় কিনা। আকাশে র্পূণ মাসির চাঁদ।বাতাসে তখনো মৃতদের গন্ধ। চাপ চাপ রক্তের ছাপ মাটিয়ে মিশে । ঘাসেদের নরম বুকে সবুজ কোমল ছায়ায় ছোপ ছোপ রক্তগুলো বিশাল এক মানচিত্রের মত দেখায়। মনে হয় কোন এক কাজল বধু নতুন কাঁচা রংয়ের শাড়িটা অভিমানে বিছিয়ে দিয়েছে। থমকে দাড়াঁই। চাঁদের আলোয় ভুল দেখছিনা তো। চোখদুটো আরো বড় করে হৃদয়ের সবটুকু মনযোগ ঢেলে দেই। হ্যাঁ, এখানেই তো সেদিন অপারেশন হয়েছিল। বারুদের গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছিল বাতাস, সেই সাথে আমাদের বুকগুলো। যেখানে কবর পাড়ার ছবিটা বুকে বেঁধে আমরা মাঠে নেমেছিলাম একটু সকাল সকাল ঘুমাবো বলে। কতদিন ঘুমাই না। ছাব্বিশজনের একটা দল। ওরা শতাধিক, সেই সাথে এদেশের কিছু বিশ্বাসঘাতক। ধানক্ষেতটা দুলে ওঠে। আড়চোখে নিজের বুকপকেটের দিকে তাকাই। কিছু একটা নড়ে ওঠে। ধানক্ষেতটা নড়েচড়ে বসে। পাশে বাবলার সাঁড়ি। একটা, দুইটা উচুঁ ঢিবি।

-বাদল আছিস? আমি সীমান্ত। চিনতে পারছিস ?

কবরের ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ আসে না। শহীদেরা নাকি মরে না। গেল অপারেশনে বাদল চলে গেল। বাদল সবসময় বলতো, দেখিস সীমান্ত, যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি কখনোই মরবো না। সবকটা’কে শেষ করে তারপর স্বাধীন পতাকাটাকে মাথায় জড়িয়ে মা’র কাছে যাবো। মা হাসতে হাসতে বলবে, তুই এখনো পাগলই রয়েগেলি। আমি মায়ের কোলে মাথা রেখে চোখ বুঁজে পড়ে থাকবো। বাদল’কে কবরে নামাবার সময় ওর চোখদুটো খোলা ছিল। যেন কিছুতেই ঘুমাবে না। আমরা ওকে জোড় করে শুইয়ে রেখে এলাম। মুঠো মুঠো মাটি দিয়ে ঢেকে দিলাম ওর স্বপ্নটাকে। তারপর কবরের ভেতর একটা বাবলার ডাল পুঁতে রেখে চলে এলাম। মাঝে মাঝে সেই ডালটার সামনে মুখ রেখে সবার অজান্তে বাদলের সাথে কথা বলি।

- বাদল’রে রুটি খাবি?

কতদিনের উপোস ছিল। অপারেশনের আগে হঠাৎ বললো,

-সীমান্ত তোর মনে পড়ে মা কেমন করে রুটি বানাতো? চুলোর পিঠে বসে তুই আর আমি গরম গরম রুটি নালিগুঁড়ে ডুবিয়ে খেতাম। মনে পড়ে? কবে যে মায়ের হাতের রুটি খাবো। বাদল বুক ভরে শ্বাস নেয়। দূর বাতাস থেকে যেন মায়ের হাতের রুটির মিষ্টি গন্ধ নাকে ভেসে আসে। রুটির একটা টুকরো কবরের উপর রেখে একমুঠো মাটি তুলে নেই। বুক পকেটে রাখি। কিছু একটা বাধা দেয়। বুক পকেট টা আবার নড়েচড়ে ওঠে। হাঁটতে থাকি।
সামনেই ব্যারাক। কেউ একজন পিছন থেকে বলে ওঠে,
- স্টপ।
সাথে সাথে রাইফেলটা নামিয়ে দেই। হাতদুটো তুলে আকাশের দিকে চেয়ে থাকি। অন্ধকার থেকে একজোড়া হাত আমার শরীরে তল্লাশী চালায়। বুক পকেটে এসে থেমে যায়। পকেট টা আবার নড়ে চড়ে ওঠে। অন্ধকারের মানুষটার চোখে আলোর ঝিলিক খেলে যায়। সারা মুখে বিস্ময়ের চিন্হ নিয়ে আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে বলে। রাইফেল টা কাঁধে নিয়ে আবার ছুটতে থাকি। পরশু অপারেশন।

-ইয়েস স্যার, নম্বর এইটটিন স্যার । কমান্ডার মুখ তুলে তাকায়। কি খবর?
-সব ঠিক আছে স্যার।
-পরশু অপারেশন, জানো তো কোথায়?
-জ্বী , স্যার। মাথা নাড়াই।
- ঠিক আছে। তুমি জলিলের সাথে দেখা করো। স্যালুট দিয়ে ঘুরে দাঁড়াই। ট্রেনিংয়ের সময় স্যালুট দেয়া শিখেছিলাম। ভালোই লাগে। নিজেকে কেমন দক্ষ সৈনিক সৈনিক বলে মনে হয়। বুকে সাহস ফিরে পাই। বুক পকেট টা আবারো নড়ে ওঠে।

ভোর রাতে কমান্ডার ব্রিফিং করে।
-কিছুতেই ফিরে আসবে না। যদি সর্বস্বও হারাতে হয়। ভেবে নাও এই তোমাদের শেষ দেখা।
একে অপরের মুখের দিকে তাকাই। অমলের মুখটা ফ্যাকাসে। ঘরে কিশোরী বধু। আসন্ন নবজাতকের আগমনে উন্মুখ নবীন চোখ ভয়ে মৃতপ্রায়। অমলের পরিপক্ক বুক নতুন ফসলের ছোঁয়া লাগার অপেক্ষায়। এক্ষুণি চলে যেতে হবে। অমলের চোখে যেন আধাঁর নেমে আসে। পঞ্চাশোর্ধ্ব কেরামত আলীর চোখে জ্বলন্ত আগুন। চোখের সামনে মেরে ফেলেছে তার জোয়ান ছেলেটা’কে। বৌটাকেও রেহাই দেয়নি। টেনে হিঁচড়ে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে গেছে। তারপর একদিন এদোঁপুকুরে সদ্য বিকশিত পদ্মের মত ভেসে থাকতে দেখেছে নিথর দেহটা। দরজায় দাঁড়িয়ে কেরামত আলীর আশি বছরের বৃদ্ধা অন্ধ মা বুঝতে পারছিল না কি ঘটছে।
-ওই ক্যারামইত্যা, কারা আইছে রে?
কেরামত আলী তখন বাড়ির পিছনের পরিত্যক্ত ডোবার ভেতর ঘাপটি মেরে বসে। মিলিটারীদের একজন কেরামত আলীর মাকে কি একটা জিজ্ঞেস করে, বুড়ি বুঝতে পারে না। শরীফ মাতব্বর বুঝিয়ে বলে, কাকী, মেজর সাব জানবার চায় পুরান ধানে কি খই হয়? বৃদ্ধা না বুঝেই মাথা নাড়ায়। ক্যান হবে না বাজান, পুরান ধান থাইক্যাতো আরো ভাল খই হয়। একপশলা নিষ্ঠুরতার হাসি উঠোনে খেলা করে। তারপর, শকুনদের ছোবল থেকে সেও নিষ্কৃতি পায়না। কেরামত আলীর চোখ ঝলসে ওঠে। প্রতিশোধ যে তাকে নিতেই হবে। রশিদ ভাই আমাদের কমান্ডার, আমাদের দু’এক ঘর পড়ে তার বাড়ি। চোখে মুখে যার শিশুর সরলতা খেলা করতো। আজ সেখানে ঘৃণার আগুন, প্রতিশোধের নেশা। মিলিটারীরা তার সাত বছরের মেয়েটা’কে দুমড়ে মুচড়ে অবশেষে দু’পা টেনে ছিঁড়ে ফেলেছে। একটাই অপরাধ তার বাবা যুদ্ধে গিয়েছে। বউ টা হয়তো এখনো ওদের খাঁচায় বন্দী।

উদাস চোখে সামনের দিকে তাকাই। সূর্যটা চোখ মেলে তাকাতে এখনো অনেক বাকি। দিগন্তের শেষে কালো রেখা মাঠের শেষ সীমাকে ছুঁয়েছে। ধানগাছগুলো দুলছে, একটু একটু বৃষ্টি। স্মৃতির পাতাটা উল্টে যায়। একটা দৃশ্যপট ভেসে আসে।

বর্ষায় কদমতলীর ছোট্ট নদীটা ভরে উঠেছে। মাছ ধরার জালটা নিয়ে একদৌড়ে নদীর ঘাটে ছুটে যেতে উদ্দত এক যুবক। পিছন থেকে মা চিৎকার করে বলে,

- খোকা , যাসনে, শরীর খারাপ করবে। শাসনের দেয়াল টপকে যুবক ততক্ষণে মায়ের দৃষ্টির আড়ালে চলে গেছে। নদীর ঘাটে যাবার পথে আড়চোখে কদমগাছের নিচটা দেখে নেয়। জানালার ফাঁক থেকে ততক্ষণে সরে গেছে কৌতুহলী কোন চোখ। যুবক হতাশ। ব্যস্ত পায়ে চলে যাবার ভান করে।
-ইস্, ঢং.........পেছন থেকে মৃদু তিরস্কার। একটু অপেক্ষা করলে কি হয়। কেউ যেন বাতাসের সাথে কথা বলে ওঠে।
-কারো সময় নাই। এখন ব্যস্ত, মাছ ধরতে হবে। যুবক বিড়বিড় করে। পেছনের কন্ঠস্বরটা বলে ওঠে, আজকাল লেখাপড়া ছেড়ে লোকের জেলে হবার সাধ হয়েছে। যত্তসব আদিখ্যেতা। আহারে, বইকারাত্ত, তুমি জাত-কূল মানলে না। যুবক ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
- যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর। বাড়ির ভেতর থেকে ততক্ষণে আরেকটা গলার আওয়াজ ভেসে আসে।
- মালতী, কার সাথে কথা বলছিস?
- কেউ না মা, বাতাসের সাথে। মালতী ছুটে বেড়িয়ে যায়। বৃষ্টির পানিতে তখন যুবকের র্দীঘশ্বাস মিশে একাকার হয়ে গেছে। এটুকু পেতেই তো এতটা পথ ছুটে আসা। স্মৃতির পৃষ্ঠাটা উল্টে যায়।
-কবে ফিরলে? জানো গ্রামে মিলিটারী ক্যাম্প বসেছে। আমার খুব ভয় হয়। শাহজাহান মাতব্বর কেমন করে আমার দিকে তাকায়। কি জানি মনে কোন দুষ্টু মতলব এটেঁছে। তুমি ভাল আছো তো? যুবক মাথা নাড়ায়। এর মধ্যে আর কতটা ভাল থাকা যায়। তবুও স্বান্তনা দিতে চেষ্টা করে।
-একটু সাবধানে থেকো। মার দিকে খেয়াল রেখো।
-আবার কবে আসবে?
-ট্রেনিং শেষ হলেই।
মালতী কিছু একটা বলতে যায়, গলাটা রুদ্ধ হয়ে আসে।
- ভালো থেকো।

ট্রেনিং শেষ করেই গ্রামে ফিরে যায় মা’কে দেখতে। কামার পাড়ার শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে আর এগুতে পারে না। চারদিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। গুলির শব্দ, আর্তনাদ, শিশুদের কান্না। মেয়েদের টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাবার শব্দ। জিপের হিসহিসানি। যুবক স্তব্ধ। আর এগোতে পারে না। পাশের ধানক্ষেতে ছিটকে পড়ে। একসময় চারপাশ শান্ত হয়ে আসে। যুবক উঠে দাঁড়ায়। বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। অন্ধকারে কিছু একটা পায়ে বেঁধে যায়। চাঁদের আলোয় প্রথমে বুঝতে বেশ কষ্ট হয়। চোখ রগড়ে আবার চেয়ে দ্যাখে, ভুল দেখছে নাতো। আশপাশে তাকায়। এখানে ওখানে আরো কিছু লাশ। রোমেলা চাচী, বিলুর মা, করিম চাচা । করিম চাচার দেহটায় কচিধানের শিষগুলো পরম মমতায় হাত বুলিয়ে যায়। কয়েকটা বুলেট মাথার খুলিটাকে ঝাঁঝড়া করে দিয়েছে। রাত ফুরিয়ে আসছে, ফিরে যেতে হবে। যুবক ব্যস্ত হয়ে পড়ে। করিম চাচার দেহটাকে পেছনে ফেলে দ্রুত বাড়ির পথে হাঁটা দেয়।
-মা , মা আমি । দরজা খোল। ভেতর থেকে কোন সাড়া মেলে না। জিনিসপত্র লন্ডভন্ড। মেটে সানকি’তে কতগুলো পান্তা পরে। যুবকের বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। মাগো, কোথায় তুমি? ছিটকে বেরিয়ে যায়। জ্যোৎস্নার আলোতে ধবধবে সাদা কিছু একটা দেখে যুবক শিউরে ওঠে। ভূত নয়তো। সাহসে ভর করে এগিয়ে যায়। মাথায় অগণিত গহ্বর। কোথাও লাল লাল রক্তের ছাপ। মুখের একপাশটা চেনা যায়না। অসংখ্য দাঁতের চিন্হ এখানে ওখানে ছড়িয়ে। মনে হচ্ছে কে যেন নির্মম ভাবে বৈশাখের ঝড়ো হাওয়ার পটভূমিতে নকশীকাঁথা এঁকেছে। বুকটা ফাঁকা।দুধ সাদা শাড়ির ছিন্নভিন্ন আচঁলে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। একটা ভাঙ্গাচোড়া শরীর, আঘাতে আঘাতে জর্জরিত। বুকের পর্বত কে যেন গুঁড়িয়ে দিয়েছে। খড়ের গাঁদায় পড়ে আছে মায়ের দেহটা। যুবক হাত বাড়ায়। কিছু একটা খুঁজে পাবার চেষ্টা করে । মাগো..................স্মৃতির চোখ বুঁজে আসে।

ধানক্ষেত টা দুলছে। চোখের পাতায় ভর করে একজোড়া ঠোঁট। কতদিন ঘাসফুলের মত নরম ঐ ঠোঁটদুটোকে দেখে কেঁপে উঠেছে যুবক। গোলাপী গালে সকালের নরম রৌদ্রের পরশ বোলাতে দেখে যুবক কখনো কখনো ভেবেছে যদি মানুষ না হয়ে বাতাস হতো। চুপিচুপি ছুঁয়ে যেতো অধর। মালতী?
-হুম।
-আমার বউ হবি?
-ইস্ , শখ কতো।
-কেন , আমি কে দেখতে খারাপ? জানিস, ভার্সিটির কত মেয়েরা আমার দিকে তাকিয়ে ক্লাসের কথা ভুলে যায়?
-হুম, ঠোঁট বাকিঁয়ে মালতী প্রতিত্তর করে। কিন্তু তাকিয়ে কি যে দ্যাখে সেটাতো তুমি জানো না , তাইনা? আমি অবশ্য জানি তারা কি দ্যাখে, বলবো?
-কি? যুবক ভয়ে ভয়ে জানতে চায়।
মালতী হাসতে হাসতে বলে,
-মেয়েগুলো অবাক হয়ে ভাবে এই বুড়ো খোকাটার এখনো গোঁফ গজায়নি কেন ।
-তবে রে । যুবক, শক্ত হাতে মালতীর খোঁপাটা চেপে ধরে। আকস্মিকতায় মালতীর চোখদুটো বিকশিত পাঁপড়ীর মত চেয়ে থাকে । যুবক মুখ নামিয়ে নেয়। এক ঝটকায় মালতী সরে আসে। যুবকের হাতে আটকে যায় মালতীর দীঘল কালো চুল। স্মৃতির পাতা ঝাপসা হয়ে আসে। সামনের ধানক্ষেতটা দুলছে। কচি ধানের শীষগুলো গড়াগড়ি খায়। যেন অধরের সাথে অধরের মিলন। অমল পাশে এসে দাড়াঁয়।
-ভয় পেয়েছিস, সীমান্ত। ঝাপসা চোখে সীমান্ত অমলের দিকে তাকায়। বুক পকেট থেকে উঁকি মারে কয়েকটা চুল।

কাল অপারেশন । কদমতলী গ্রামে । যেখানে মালতীর ধানের শীষের মত কচি শরীরে মানচিত্র আকঁছে পাকিস্তানী হায়েনারা।

অমাবস্যা
২৬শে মার্চ, ২০০৯
ইমেইল:fy.cvyasmin@amaderprojukti.com

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি
১ | ইশতিয়াক রউফ | বিষ্যুদ, ২০০৯-০৩-২৬ ১০:৩১

"মুক্তিযুদ্ধের গল্প"... লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনার বর্ণনার শক্তির কাছে নত হয়ে কাঁপছি।


সুজন চৌধুরী এর ছবি
২ | সুজন চৌধুরী | বিষ্যুদ, ২০০৯-০৩-২৬ ১০:৪০

ভয়াবহ ! পাকিগো ছিড়া ফালাইতে ইচ্ছা করে মাঝেমাঝে।


লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ

মূলত পাঠক এর ছবি
৩ | মূলত পাঠক | বিষ্যুদ, ২০০৯-০৩-২৬ ১১:১৫

অসাধারণ ! বর্ণনার কথা বাদই দিলাম, গল্পের গঠন/structure দেখেও মুগ্ধ হলাম।

আরো লেখা পড়বার আশায় রইলাম।


সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি
৪ | সুলতানা পারভীন শিমুল | বিষ্যুদ, ২০০৯-০৩-২৬ ১৩:৫০

কি অসাধারণ বর্ণনার ধরণ আপনার।
ভীষন মুগ্ধ।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন


নজরুল ইসলাম এর ছবি
৫ | নজরুল ইসলাম | বিষ্যুদ, ২০০৯-০৩-২৬ ১৪:৩৫

খুব দারুণ লেখা... চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল


মাহবুব লীলেন এর ছবি
৬ | মাহবুব লীলেন | বিষ্যুদ, ২০০৯-০৩-২৬ ১৫:৪১

দুর্দান্ত গল্প
কিন্তু গল্পটা বোধহয় আরো কিছুটা বিস্তৃতি দাবি করে
অনেকগুলো ঘটনা পরপর ঘটছে
মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে ফেলছিলাম

০২
সচলে স্বাগত অমাবস্যা


অতিথি লেখক এর ছবি
৭ | অতিথি লেখক | বিষ্যুদ, ২০০৯-০৩-২৬ ১৬:১০

পড়লাম..অনুভব করলাম..

বলার মত আর কিছু পাচ্ছিনা..শুধু সুন্দর একটি গল্প বলে বাহ্বা দিলে লেখাটাকে ছোট করা হবে...লেখাটা তার আপন শক্তিতে জায়গা দখল করে থাকুক...

( জয়িতা )


নিবিড় এর ছবি
৮ | নিবিড় | বিষ্যুদ, ২০০৯-০৩-২৬ ১৬:২২

দারুন একটা লেখা চলুক
আপনার আর লেখা পড়ার আশায় থাকলাম অমাবস্যা


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

সাদামাটা এর ছবি
৯ | সাদামাটা (যাচাই করা হয়নি) | বিষ্যুদ, ২০০৯-০৩-২৬ ১৭:০১

এমন অসাধারণ গল্প অনেক দিন পর পড়লাম।


১০

রেনেট এর ছবি
১০ | রেনেট | বিষ্যুদ, ২০০৯-০৩-২৬ ২০:৪০

অসাধারণ গল্প, স্রেফ অসাধারণ!
(আমি মডু হলে শুধু মাত্র এই একটি গল্পের জন্য আপনাকে পূর্ণ সচল বানিয়ে দিতাম)
সচলে স্বাগতম!
---------------------------------------------------------------------------
If your father is a poor man, it's not your fault ; but If your father-in-Law is a poor man, it's definitely your fault.


১১

সুহান রিজওয়ান এর ছবি
১১ | সুহান রিজওয়ান | বিষ্যুদ, ২০০৯-০৩-২৬ ২৩:৩৮

অমাবস্যা'র আলোয় সচল ভেসে গেলো।
...গল্প দুর্দান্ত হয়েছে।


১২

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি
১২ | শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] (যাচাই করা হয়নি) | শুক্র, ২০০৯-০৩-২৭ ০০:০৫

..................


১৩

তানবীরা এর ছবি
১৩ | তানবীরা | শুক্র, ২০০৯-০৩-২৭ ০১:১০

ভয়াবহ গল্প, এ চোখে ঘুম আসে না ........................।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে


১৪

নাজনীন খলিল এর ছবি
১৪ | নাজনীন খলিল [অতিথি] | শুক্র, ২০০৯-০৩-২৭ ০২:০৮

নির্বাক! স্তব্ধ!
স্যালুট লেখককে।


১৫

সচল জাহিদ এর ছবি
১৫ | সচল জাহিদ | শুক্র, ২০০৯-০৩-২৭ ০৫:২৮

চমৎকার গল্প, অসাধারন লেখনী। গল্পটি জহির রায়হানের 'সময়ের প্রয়োজনে' লেখাটিকে মনে করিয়ে দেয়।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


১৬

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি
১৬ | সংসারে এক সন্ন্যাসী | শুক্র, ২০০৯-০৩-২৭ ০৬:৪০

ঘৃণাজাগানিয়া গল্প!
খুবই চমত্কার।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...


১৭

অতিথি লেখক এর ছবি
১৭ | অতিথি লেখক | শুক্র, ২০০৯-০৩-২৭ ১৫:৫৬

আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমির প্রতিটি ধূলিকণায় মিশে আছে অত্যাচারের আবরণ, তাকে কি করে বুকের ভেতর চেপে রাখি। নতুন প্রজন্ম জানুক কতটা অন্যায় করা হয়েছে আমাদের সাথে। সবার আন্তরিকার জন্য ধন্যবাদ। সচলদের অতিথি হয়ে যেন নিয়মিত হতে পারি সচলায়তনে এই প্রত্যাশায়-

অমাবস্যা
২৭ শে মার্চ, ২০০৯
আমাকে পাওয়া যাবে এইখানে fy.cvyasmin@ gmail.com অথবা fy.cvyasmin@amaderprojukti.com


১৮

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি
১৮ | ভূঁতের বাচ্চা [অতিথি] | শুক্র, ২০০৯-০৩-২৭ ১৯:১৬

অসাধারণ একটা গল্প !
--------------------------


১৯

s-s এর ছবি
১৯ | s-s | শনি, ২০০৯-০৩-২৮ ২০:৫৬

চমতকার!

আদৌ কি পরিপাটি হয় কোনো ক্লেদ?ঋণ শুধু শরীরেরই, মন ঋণহীন??



Me

Me

About this blog

Hello

This is Fahmida. You may imagine me as a five feet white ball. Completed MBA in Management . ভাললাগে গ্রাফিক্সের টুকিটাকি। শখ ছিল ফটোগ্রাফার হবো কিংবা সাংবাদিক। হইনি কিছুই। পেশায় ব্যাংকার। জন্ম উত্তর বঙ্গে। বসবাস দক্ষিণে। মাঝে মাঝে এক আধটু প্যাঁচাই। যদিও আমার লেখালেখির হাতেখড়ি আপ্র (http://forum.amaderprojukti.com/memberlist.php?mode=viewprofile&u=1094) থেকে তারপরও মাঝে মাঝে প্রথম আলো ব্লগেও মাঝেমাঝে ঢুঁ মারি। নিক আঁধার http://prothom-aloblog.com/users/base/adhar/p1 । আজকাল সচলদের অতিথি হতে ভাল লাগে। নিক অমাবস্যা। ইদানীং টিউরোটিয়াল বিডি'তে লেখার চেষ্টা করছি। গান শোনা, কবিতা পড়তে ভালবাসি। ভালবাসি ব্লাক কফি আর সিলেটের চা-পাতা । এক কথায় Im busy for nothing :)


লাইসেন্স:Licence
by-nc-nd (Creative Commons)

My Blog List