Small journey

ছোট ছোট ঢেউ জুড়েই সুনামীর সৃষ্টি হয়

হেলাল হাফিজের কবিতা

অন্যরকম সংসার

এই তো আবার যুদ্ধে যাবার সময় এলো
আবার আমার যুদ্ধে খেলার সময় হলো
এবার রানা তোমায় নিয়ে আবার আমি যুদ্ধে যাবো
এবার যুদ্ধে জয়ী হলে গোলাপ বাগান তৈরী হবে।
হয় তো দু’জন হারিয়ে যাবো ফুরিয়ে যাবো
তবুও আমি যুদ্ধে যাবো তবু তোমায় যুদ্ধে নেবো
অন্যরকম সংসারেতে গোলাপ বাগান তৈরী করে
হারিয়ে যাবো আমরা দু’জন ফুরিয়ে যাবো।
স্বদেশ জুড়ে গোলাপ বাগান তৈরী করে
লাল গোলাপে রক্ত রেখে গোলাপ কাঁটায় আগুন রেখে
আমরা দু’জন হয় তো রানা মিশেই যাবো মাটির সাথে।
মাটির সথে মিশে গিয়ে জৈবসারে গাছ বাড়াবো
ফুল ফোটাবো, গোলাপ গোলাপ স্বদেশ হবে
তোমার আমার জৈবসারে। তুমি আমি থাকবো তখন
অনেক দূরে অন্ধকারে, অন্যরকম সংসারেতে।
২০.১২.৭৩


নিরাশ্রয় পাচঁটি আঙুল

নিরাশ্রয় পাচঁটি আঙুল তুমি নির্দ্বিধায়
অলংকার করে নাও, এ আঙুল ছলনা জানে না।
একবার তোমার নোলক, দুল, হাতে চুড়ি
কটিদেশে বিছা করে অলংকৃত হতে দিলে
বুঝবে হেলেন, এ আঙুল সহজে বাজে না।
একদিন একটি বেহালা নিজেকে বাজাবে বলে
আমার আঙুলে এসে দেখেছিলো
তার বিষাদের চেয়ে বিশাল বিস্তৃতি,
আমি তাকে চলে যেতে বলিনি তবুও
ফিরে গিয়েছিলো সেই বেহালা সলাজে।
অসহায় একটি অঙ্গুরী
কনিষ্ঠা আঙুলে এসেই বলেছিলো ঘর,
অবশেষে সেও গেছে সভয়ে সলাজে।
ওরা যাক, ওরা তো যাবেই
ওদের আর দুঃখ কতোটুকু? ওরা কি মানুষ?
২.৪.৭০


যুগল জীবনী
আমি ছেড়ে যেতে চাই, কবিতা ছাড়ে না।
বলে,–’কি নাগর
এতো সহজেই যদি চলে যাবে
তবে কেন ঘর বেঁধেছিলে উদ্ধাস্তু ঘর,
কেন করেছিলে চারু বেদনার এতো আয়োজন।
শৈশব কৈশোর থেকে যৌবনের কতো প্রয়োজন
উপেক্ষার ‘ডাস্টবিনে’ ফেলে
মনে আছে সে-ই কবে
চাদরের মতো করে নির্দ্বিধায় আমাকে জড়ালে,
আমি বাল্য-বিবাহিতা বালিকার মতো
অস্পষ্ট দু’চোখ তুলে নির্নিমেষে তাকিয়েছিলাম
অপরিপক্ক তবু সন্মতি সূচক মাথা নাড়িয়েছিলাম
অতোশতো না বুঝেই বিশ্বাসের দুই হাত বাড়িয়েছিলাম,
ছেলেখেলাচ্ছলে
সেই থেকে অনাদরে, এলোমেলো
তোমার কষ্টের সাথে শর্তহীন সখ্য হয়েছিলো,
তোমার হয়েছে কাজ, আজ প্রয়োজন আমার ফুরালো’?
আমি ছেড়ে যেতে চাই, কবিতা ছাড়ে না।
দুরারোগ্য ক্যান্সারের মতো
কবিতা আমার কোষে নিরাপদ আশ্রম গড়েছে
সংগোপনে বলেছে,–’হে কবি
দেখো চারদিকে মানুষের মারাত্মক দুঃসময়
এমন দুর্দিনে আমি পরিপুষ্ট প্রেমিক আর প্রতিবাদী তোমাকেই চাই’।
কষ্টে-সৃষ্টে আছি
কবিতা সুখেই আছে,–থাক,
এতো দিন-রাত যদি গিয়ে থাকে
যাক তবে জীবনের আরো কিছু যাক।
২৬.১০.৮১


আমার সকল আয়োজন


আমাকে দুঃখের শ্লোক কে শোনাবে?
কে দেখাবে আমাকে দুঃখের চিহ্ন কী এমন,
দুঃখ তো আমার সেই জন্ম থেকে জীবনের
একমাত্র মৌলিক কাহিনী।
আমার শৈশব বলে কিছু নেই
আমার কৈশোর বলে কিছু নেই,
আছে শুধু বিষাদের গহীন বিস্তার।
দুঃখ তো আমার হাত–হাতের আঙুন–আঙুলের নখ
দুঃখের নিখুঁত চিত্র এ কবির আপাদমস্তক।
আমার দুঃখ আছে কিন্তু আমি দুখী নই,
দুঃখ তো সুখের মতো নীচ নয়, যে আমাকে দুঃখ দেবে।
আমার একেকটি দুঃখ একেকটি দেশলাই কাঠির মতন,
অবয়ব সাজিয়েছে ভয়ঙ্কর সুন্দরের কালো কালো অগ্নিতিলকে,
পাঁজরের নাম করে ওসব সংগোপনে
সাজিয়ে রেখেছি আমি সেফ্‌টি-ম্যাচের মতো বুকে।
৯.২.৭৪


ইচ্ছে ছিলো

ইচ্ছে ছিলো তোমাকে সম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো
ইচ্ছে ছিলো তোমাকেই সুখের পতাকা করে
শান্তির কপোত করে হৃদয়ে উড়াবো।
ইচ্ছে ছিলো সুনিপূণ মেকআপ-ম্যানের মতো
সূর্যালোকে কেবল সাজাবো তিমিরের সারাবেলা
পৌরুষের প্রেম দিয়ে তোমাকে বাজাবো, আহা তুমুল বাজাবো।
ইচ্ছে ছিলো নদীর বক্ষ থেকে জলে জলে শব্দ তুলে
রাখবো তোমার লাজুক চঞ্চুতে,
জন্মাবধি আমার শীতল চোখ
তাপ নেবে তোমার দু’চোখে।
ইচ্ছে ছিল রাজা হবো
তোমাকে সাম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো,
আজ দেখি রাজ্য আছে
রাজা আছে
ইচ্ছে আছে,
শুধু তুমি অন্য ঘরে।
৭.২.৭৩


ইদানিং জীবন যাপন

আমার কষ্টেরা বেশ ভালোই আছেন,
প্রাত্যহিক সব কাজ ঠিক-ঠাক করে চলেছেন
খাচ্ছেন-দাচ্ছেন, অফিসে যাচ্ছেন,
প্রেসক্লাবে আড্ডাও দিচ্ছেন।
মাঝে মাঝে কষ্টেরা আমার
সারাটা বিকেল বসে দেখেন মৌসুমী খেলা,
গোল স্টেডিয়াম যেন হয়ে যায় নিজেই কবিতা।
আজকাল আমার কষ্টেরা বেশ ভালোই থাকেন,
অঙ্কুরোদ্‌গম প্রিয় এলোমেলো যুবকের
অতৃপ্ত মানুষের শুশ্রূষা করেন। বিরোধী দলের ভুল
মিছিলের শোভা দেখে হাসেন তুমুল,
ক্লান্তিতে গভীর রাতে ঘরহীন ঘরেও ফেরেন,
নির্জন নগরে তারা কতিপয় নাগরিক যেন
কতো কথোপকথনে কাটান বাকিটা রাত,
অবশেষে কিশোরীর বুকের মতন সাদা ভোরবেলা
অধিক ক্লান্তিতে সব ঘুমিয়ে পড়েন।
আমার কষ্টেরা বেশ ভালোই আছেন, মোটামুটি সুখেই আছেন।
প্রিয় দেশবাসী;
আপনারা কেমন আছেন?
২.১০.৮০


উপসংহার

আমার যত শুভ্রতা সব দেবো,
আমি নিপুণ ব্লটিং পেপার
সব কালিমা, সকল ব্যথা ক্ষত শুষেই নেবো।
২৪.৭.৮০


উৎসর্গ

আমার কবিতা আমি দিয়ে যাবো
আপনাকে, তোমাকে ও তোকে।
কবিতা কি কেবল শব্দের মেলা, সংগীতের লীলা?
কবিতা কি ছেলেখেলা, অবহেলা রঙিন বেলুন?
কবিতা কি নোটবই, টু-ইন-ওয়ান, অভিজাত মহিলা -সেলুন?
কবিতা তো অবিকল মানুষের মতো
চোখ-মুখ-মন আছে, সেও বিবেক শাসিত,
তারও আছে বিরহে পুষ্পিত কিছু লাল নীল ক্ষত।
কবিতা তো রূপান্তরিত শিলা, গবেষণাগারে নিয়ে
খুলে দেখো তার সব অণু-পরমাণু জুড়ে
কেবলি জড়িয়ে আছে মানুষের মৌলিক কাহিনী।
মানুষের মতো সেও সভ্যতার চাষাবাদ করে,
সেও চায় শিল্প আর স্লোগানের শৈল্পিক মিলন,
তার তা ভূমিকা চায় যতোটুকু যার উৎপাদন।
কবিতা তো কেঁদে ওঠে মানুষের যে কোনো অ-সুখে,
নষ্ট সময় এলে উঠানে দাঁড়িয়ে বলে,–
পথিক এ পথে নয়
‘ভালোবাসা এই পথে গেছে’।
আমার কবিতা আমি দিয়ে যাবো
আপনাকে, তোমাকে ও তোকে।
১৭.৩.৮১



আমার কী এসে যাবে

আমি কি নিজেই কোন দূর দ্বীপবাসী এক আলাদা মানুষ?
নাকি বাধ্যতামূলক আজ আমার প্রস্থান,
তবে কি বিজয়ী হবে সভ্যতার অশ্লীল স্লোগান?
আমি তো গিয়েছি জেনে প্রণয়ের দারুণ আকালে
নীল নীল বনভূমি ভেতরে জন্মালে
কেউ কেউ চলে যায়, চলে যেতে হয়
অবলীলাক্রমে কেউ বেছে নেয় পৃথক প্লাবন,
কেউ কেউ এইভাবে চলে যায় বুকে নিয়ে ব্যাকুল আগুন।
আমার কী এসে যাবে, কিছু মৌল ব্যবধান ভালোবেসে
জীবন উড়ালে একা প্রিয়তম দ্বীপের উদ্দেশ্যে।
নষ্ট লগ্ন গেলে তুমিই তো দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে
সুকঠিন কংক্রিটে জীবনের বাকি পথ হেঁটে যেতে যেতে
বারবার থেমে যাবে জানি
‘আমি’ ভেবে একে-তাকে দেখে।
তুমিই তো অসময়ে অন্ধকারে
অন্তরের আরতির ঘৃতের আগুনে পুড়বে নির্জনে।
আমাকে পাবে না খুঁজে, কেঁদে-কেটে, মামুলী ফাল্‌গুনে।
৪.৮.৮০


অমিমাংসিত সন্ধি

তোমাকে শুধু তোমাকে চাই, পাবো?
পাই বা না পাই এক জীবনে তোমার কাছেই যাবো।
ইচ্ছে হলে দেখতে দিও, দেখো
হাত বাড়িয়ে হাত চেয়েছি রাখতে দিও, রেখো
অপূণতায় নষ্টে-কষ্টে গেলো
এতোটা কাল, আজকে যদি মাতাল জোয়ার এলো
এসো দু’জন প্লাবিত হই প্রেমে
নিরাভরণ সখ্য হবে যুগল-স্নানে নেমে।
থাকবো ব্যাকুল শর্তবিহীন নত
পরস্পরের বুকের কাছে মুগ্ধ অভিভূত।
১০.৩.৮২


কে

বেরিয়ে যে আসে সে তো এভাবেই আসে,
দুর্বিনীত ধ্রুপদী টংকার তুলে
লন্ডভন্ড করে চলে আসে মৌলিক ভ্রমণে, পথে
প্রচলিত রীতি-নীতি কিচ্ছু মানে না।
আমি এক সেরকম উত্থানের অনুপম কাহিনী শুনেছি।
এমন অনমনীয় পৃথক ভ্রমণে সেই পরিব্রাজকের
অনেক অবর্ণনীয় অভিমান থাকে,
টসটসে রসাল ফলের মতো ক্ষত আর
ব্যক্তিগত ক্ষয়-ক্ষতি থাকে। তাকে তুমুল শাসায়
মূলচ্যুত মানুষের ভুল ভালোবাসা, রাজনীতি,
পক্ষপাতদুষ্ট এক স্টাফ রিপোর্টার। আর তার সহগামী
সব পাখিদের ঈর্ষার আকাশে ভাসে ব্যর্থতার কিচির-মিচির।
এতো প্রতিকূলতায় গতি পায় নিষ্ঠাবান প্রেমিক শ্রমিক,
আমি এক সে রকম পথিকের প্রতিকৃতি নির্ভূল দেখেছি।
ইদানিং চারদিকে সমস্বরে এক প্রশ্ন,–কে? কে? কে?
বেরিয়ে যে আসে সে তো এই পথে এইভাবে আসে, নিপুণ ভঙ্গিতে।
১৫.২.৮২


কবি ও কবিতা

কবির জীবন খেয়ে জীবন ধারণ করে
কবিতা এমন এক পিতৃঘাতী শব্দের শরীর,
কবি তবু সযত্নে কবিতাকে লালন করেন,
যেমন যত্নে রাখে তীর
জেনে-শুনে সব জল ভয়াল নদীর।
সর্বভূক এ কবিতা কবির প্রভাত খায়
দুপুর সন্ধ্যা খায়, অবশেষে
নিশীথে তাকায় যেন বয়ঃসন্ধিকালের কিশোরী,
কবিকে মাতাল করে
শুরু হয় চারু তোলপাড়,
যেন এক নির্জন বনের কোনো হরিণের লন্ডভন্ড খেলা
নিজেরই ভিতরে নিয়ে সুবাসের শুদ্ধ কস্তুরী।
কবির কষ্ট দিয়ে কবিতা পুষ্ট হয়
উজ্জ্বলতা বাড়ায় বিবেক,
মানুষের নামে বাড়ে কবিতার পরমায়ু
অমরতা উভয়ের অনুগত হয়।
১০.২.৮১


ক্যাকটাস

দারুন আলাদা একা অভিমানী এই ক্যাকটাস।
যেন কোন বোবা রমণীর সখী ছিলো দীর্ঘকাল
কিংবা আজন্ম শুধু দেখেছে আকাল
এরকম ভাব-ভঙ্গি তার।
ধ্রুপদী আঙিনা ব্যাপী
কন্টকিত হাহাকার আর অবহেলা,
যেন সে উদ্ভিদ নয়
তাকালেই মনে হয় বিরান কারবালা।
হয় তো কেটেছে তার মায়া ও মমতাহীন সজল শৈশব
অথবা গিয়েছে দিন
এলোমেলো পরিচর্যাহীন এক রঙিন কৈশোর,
নাকি সে আমার মত খুব ভালোবেসে
পুড়েছে কপাল তার আকালের এই বাংলাদেশে।
বোকা উদ্ভিদ তবে কি
মানুষের কাছে প্রেম চেয়েছিলো?
চেয়েছিলো আরো কিছু বেশি।
৩০.৬.৮২


তৃষ্ণা

কোনো প্রাপ্তিই পূর্ণ প্রাপ্তি নয়
কোনো প্রাপ্তির দেয় না পূর্ণ তৃপ্তি
সব প্রাপ্তি ও তৃপ্তি লালন করে
গোপনে গহীনে তৃষ্ণা তৃষ্ণা তৃষ্ণা।
আমার তো ছিলো কিছু না কিছু যে প্রাপ্য
আমার তো ছিলো কাম্য স্বল্প তৃপ্তি
অথচ এ পোড়া কপালের ক্যানভাসে
আজন্ম শুধু শুন্য শুন্য শুন্য।
তবে বেঁচে আছি একা নিদারুণ সুখে
অনাবিষ্কৃত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বুকে
অবর্ণনীয় শুশ্রূষাহীন কষ্টে
যায় যায় দিন ক্লান্ত ক্লান্ত ক্লান্ত।
৪.৭.৮২


তোমাকেই চাই

আমি এখন অন্য মানুষ ভিন্ন ভাবে কথা বলি
কথার ভেতর অকথিত অনেক কথা জড়িয়ে ফেলি
এবং চলি পথ বেপথে যখন তখন।
আমি এখন ভিন্ন মানুষ অন্যভাবে কথা বলি
কথার ভেতর অনেক কথা লুকিয়ে ফেলি,
কথার সাথে আমার এখন তুমুল খেলা
উপযুক্ত সংযোজনে জীর্ণ-শীর্ণ শব্দমালা
ব্যঞ্জনা পায় আমার হাতে অবলীলায়,
ঠিক জানি না পারস্পরিক খেলাধূলায়
কখন কে যে কাকে খেলায়।
অপুষ্টিতে নষ্ট প্রাচীন প্রেমের কথা যত্রতত্র কীর্তন আমার
মাঝে মধ্যে প্রণয় বিহীন সভ্যতাকে কচি প্রেমের পত্র লিখি
যেমন লেখে বয়ঃসন্ধি-কালের মানুষ নিশীথ জেগে।
আমি এখন অন্য মানুষ ভিন্নভাবে চোখ তুলে চাই
খুব আলাদা ভাবে তাকাই
জন্মাবধি জলের যুগল কলস দেখাই,
ভেতরে এক তৃতীয় চোখ রঞ্জনালোয় কর্মরত
সব কিছু সে সঠিকভাবে সবটা দেখে এবং দারুণ প্রণয় কাতর।
আমি এখন আমার ভেতর অন্য মানুষ গঠন করে সংগঠিত,
বীর্যবান এক ভিন্ন গোলাপ এখন কসম খুব প্রয়োজন।
১০.১১.৮১


দুঃখের আরেক নাম

আমাকে স্পর্শ করো, নিবিড় স্পর্শ করো নারী।
অলৌকিক কিছু নয়,
নিতান্তই মানবিক যাদুর মালিক তুমি
তোমার স্পর্শেই শুধু আমার উদ্ধার।
আমাকে উদ্ধার করো পাপ থেকে,
পঙ্কিলতা থেকে, নিশ্চিত পতন থেকে।
নারী তুমি আমার ভিতরে হও প্রবাহিত দুর্বিনীত নদীর মতন,
মিলেমিশে একাকার হয়ে এসো বাঁচি
নিদারুণ দুঃসময়ে বড়ো বেশি অসহায় একা পড়ে আছি।
তুমুল ফাল্‌গুন যায়, ডাকে না কোকিল কোনো ডালে,
আকস্মিক দু’একটা কুহু কুহু আর্তনাদ
পৃথিবীকে উপহাস করে।
একদিন কোকিলেরো সুসময় ছিলো, আজ তারা
আমার মতোই বেশ দুঃসময়ে আছে
পাখিদের নীলাকাশ বিষাক্ত হয়ে গেছে সভ্যতার অশ্লীল বাতাসে।
এখন তুমিই বলো নারী
তোমার উদ্যান ছাড়া আমি আর কোথায় দাঁড়াবো।
আমাকে দাঁড়াতে দাও বিশুদ্ধ পরিপূর্ণতায়,
ব্যাকুল শুশ্রুষা দিয়ে আমাকে উদ্ধার করো
নারী তুমি শৈল্পিক তাবিজ,
এতোদিন নারী ও রমনীহীন ছিলাম বলেই ছিলো
দুঃখের আরেক নাম হেলাল হাফিজ।
৩.৩.৭৪


দুঃসময়ে আমার যৌবন

মানব জন্মের নামে হবে কলঙ্ক হবে
এরকম দুঃসময়ে আমি যদি মিছিলে না যাই,
উত্তর পুরুষে ভীরু কাপুরুষের উপমা হবো
আমার যৌবন দিয়ে এমন দুর্দিনে আজ
শুধু যদি নারীকে সাজাই।
১৪.২.৭১


কোমল কংক্রিট

জলের আগুনে পুড়ে হয়েছি কমল,
কী দিয়ে মুছবে বলো আগুনের জল।
১৫.১১.৮০


উৎসর্গ

আমার কবিতা আমি দিয়ে যাবো
আপনাকে, তোমাকে ও তোকে।
কবিতা কি কেবল শব্দের মেলা, সংগীতের লীলা?
কবিতা কি ছেলেখেলা, অবহেলা রঙিন বেলুন?
কবিতা কি নোটবই, টু-ইন-ওয়ান, অভিজাত মহিলা -সেলুন?
কবিতা তো অবিকল মানুষের মতো
চোখ-মুখ-মন আছে, সেও বিবেক শাসিত,
তারও আছে বিরহে পুষ্পিত কিছু লাল নীল ক্ষত।
কবিতা তো রূপান্তরিত শিলা, গবেষণাগারে নিয়ে
খুলে দেখো তার সব অণু-পরমাণু জুড়ে
কেবলি জড়িয়ে আছে মানুষের মৌলিক কাহিনী।
মানুষের মতো সেও সভ্যতার চাষাবাদ করে,
সেও চায় শিল্প আর স্লোগানের শৈল্পিক মিলন,
তার তা ভূমিকা চায় যতোটুকু যার উৎপাদন।
কবিতা তো কেঁদে ওঠে মানুষের যে কোনো অ-সুখে,
নষ্ট সময় এলে উঠানে দাঁড়িয়ে বলে,–
পথিক এ পথে নয়
‘ভালোবাসা এই পথে গেছে’।
আমার কবিতা আমি দিয়ে যাবো
আপনাকে, তোমাকে ও তোকে।
১৭.৩.৮১


একটি পতাকা পেলে

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস
ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন,–’পেয়েছি, পেয়েছি’।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে
ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে,
বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুতে-ভাতে।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে,
সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ
সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে।
১৩.১২.৮০


রাডার

একটা কিছু করুন।
এভাবে আর কদিন চলে দিন ফুরালে হাসবে লোকে
দুঃসময়ে আপনি কিছু বলুন
একটা কিছু করুন।
চতুর্দিকে ভালোবাসার দারুণ আকাল
খেলছে সবাই বেসুর-বেতাল
কালো-কঠিন-মর্মান্তিক নষ্ট খেলা,
আত্মঘাতী অবহেলো নগর ও গ্রাম গেরস্থালি
বনভূমি পাখপাখালি সব পোড়াবে,
সময় বড়ো দ্রুত যাচ্ছে
ভাল্লাগে না ভাবটা ছেড়ে সত্যি এবার উঠুন
একটা কিছু করুন।
দিন থাকে না দিন তো যাবেই
প্রেমিক যারা পথ তো পাবেই
একটা কিছু সন্নিকটে, আত বাড়িয়ে ধরুন
দোহাই লাগে একটা কিছু করুন।
২২.৩.৮১


রাখাল

আমি কোনো পোষা পাখি নাকি?
যেমন শেখাবে বুলি
সেভাবেই ঠোঁট নেড়ে যাবো, অথবা প্রত্যহ
মনোরঞ্জনের গান ব্যাকুল আগ্রহে গেয়ে
অনুগত ভঙ্গিমায় অনুকূলে খেলাবো আকাশ,
আমি কোনো সে রকম পোষা পাখি নাকি?
আমার তেমন কিছু বাণিজ্যিক ঋণ নেই,
কিংবা সজ্ঞানে এ বাগানে নির্মোহ ভ্রমণে
কোনোদিন ভণিতা করিনি। নির্লোভ প্রার্থনা
শর্ত সাপেক্ষে কারো পক্ষপাত কখনো চাবো না।
তিনি, শুধু তিনি
নাড়ীর আত্মীয় এক সংগঠিত আর অসহায় কৃষক আছেন
ভেতরে থাকেন, যখন যেভাবে তিনি আমাকে বলেন
হয়ে যাই শর্তাহীন তেমন রাখাল বিনা বাক্য ব্যয়ে।
কাঙাল কৃষক তিনি, জীবনে প্রথম তাকে যখন বুঝেছি
স্বেচ্ছায় বিবেক আমি তার কাছে শর্তাহীন বন্ধক রেখেছি।
৮.২.৮২



যেভাবে সে এলো

অসম্ভব ক্ষুধা ও তৃষ্ণা ছিলো,
সামনে যা পেলো খেলো,
যেন মন্বন্তরে কেটে যাওয়া রজতজয়ন্তী শেষে
এসেছে সে, সবকিছু উপাদেয় মুখে।
গাভিন ক্ষেতের সব ঘ্রাণ টেনে নিলো,
করুণ কার্নিশ ঘেঁষে বেড়ে ওঠা লকলকে লতাটিও খেলো,
দুধাল গাভীটি খেলো
খেলো সব জলের কলস।
শানে বাধা ঘাট খেলো
সবুজের বনভূমি খেলো
উদাস আকাশ খেলো
কবিতার পান্ডুলিপি খেলো।
দু’পায়া পথের বুক, বিদ্যালয়
উপাসনালয় আর কারখানার চিমনি খেলো
মতিঝিলে স্টেটব্যাংক খেলো।
রাখালের অনুপম বাঁশিটিকে খেলো,
মগড়ার তীরে বসে চাল ধোয়া হাতটিকে খেলো
স্বাধীনতা সব খেলো, মানুষের দুঃখ খেলো না।
১৮.৩.৮১


যুগল জীবনী

আমি ছেড়ে যেতে চাই, কবিতা ছাড়ে না।
বলে,–’কি নাগর
এতো সহজেই যদি চলে যাবে
তবে কেন ঘর বেঁধেছিলে উদ্ধাস্তু ঘর,
কেন করেছিলে চারু বেদনার এতো আয়োজন।
শৈশব কৈশোর থেকে যৌবনের কতো প্রয়োজন
উপেক্ষার ‘ডাস্টবিনে’ ফেলে
মনে আছে সে-ই কবে
চাদরের মতো করে নির্দ্বিধায় আমাকে জড়ালে,
আমি বাল্য-বিবাহিতা বালিকার মতো
অস্পষ্ট দু’চোখ তুলে নির্নিমেষে তাকিয়েছিলাম
অপরিপক্ক তবু সন্মতি সূচক মাথা নাড়িয়েছিলাম
অতোশতো না বুঝেই বিশ্বাসের দুই হাত বাড়িয়েছিলাম,
ছেলেখেলাচ্ছলে
সেই থেকে অনাদরে, এলোমেলো
তোমার কষ্টের সাথে শর্তহীন সখ্য হয়েছিলো,
তোমার হয়েছে কাজ, আজ প্রয়োজন আমার ফুরালো’?
আমি ছেড়ে যেতে চাই, কবিতা ছাড়ে না।
দুরারোগ্য ক্যান্সারের মতো
কবিতা আমার কোষে নিরাপদ আশ্রম গড়েছে
সংগোপনে বলেছে,–’হে কবি
দেখো চারদিকে মানুষের মারাত্মক দুঃসময়
এমন দুর্দিনে আমি পরিপুষ্ট প্রেমিক আর প্রতিবাদী তোমাকেই চাই’।
কষ্টে-সৃষ্টে আছি
কবিতা সুখেই আছে,–থাক,
এতো দিন-রাত যদি গিয়ে থাকে
যাক তবে জীবনের আরো কিছু যাক।
২৬.১০.৮১


যার যেখানে জায়গা

ভোলায়া ভালায়া আর কথা দিয়া কতোদিন ঠাগাইবেন মানুষ
ভাবছেন অহনো তাদের অয় নাই হুঁশ।
গোছায়া গাছায়া লন বেশি দিন পাইবেন না সময়
আলামত দেখতাছি মানুষের অইবোই জয়।
কলিমুদ্দিনের পোলা চিডি দিয়া জানাইছে,–’ভাই
আইতাছি টাউন দেখতে একসাথে আমরা সবাই,
নগরের ধাপ্‌পাবাজ মানুষেরে কইও রেডি অইতে
বেদম মাইরের মুখে কতোক্ষণ পারবো দাঁড়াইতে।’
টিকেট ঘরের ছাদে বিকালে দাঁড়ায়ে যখন যা খুশি যারা কন
কোনো দিন খোঁজ লইছেন গ্রামের লোকের সোজা মন
কী কী চায়, কতোখানি চায়
কয়দিন খায় আর কয়বেলা না খায়া কাটায়।
রাইত অইলে অমুক ভবনে বেশ আনাগোনা, খুব কানাকানি,
আমিও গ্রামের পোলা চুত্‌মারানি গাইল দিতে জানি।
৯.২.৮১


যাতায়াত

কেউ জানে না আমার কেন এমন হলো।
কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না
রাত কাটে তো ভোর দেখি না
কেন আমার হাতের মাঝে হাত থাকে না কেউ জানেনা।
নষ্ট রাখীর কষ্ট নিয়ে অতোটা পথ একলা এলাম
পেছন থেকে কেউ বলেনি করুণ পথিক
দুপুর রোদে গাছের নিচে একটু বসে জিরিয়ে নিও,
কেউ বলেনি ভালো থেকো সুখেই থেকো
যুগল চোখে জলের ভাষায় আসার সময় কেউ বলেনি
মাথার কসম আবার এসো
জন্মাবধি ভেতরে এক রঙিন পাখি কেঁদেই গেলো
শুনলো না কেউ ধ্রুপদী ডাক,
চৈত্রাগুনে জ্বলে গেলো আমার বুকের গেরস্থালি
বললো না কেউ তরুন তাপস এই নে চারু শীতল কলস।
লন্ডভন্ড হয়ে গেলাম তবু এলাম।
ক্যাঙ্গারু তার শাবক নিয়ে যেমন করে বিপদ পেরোয়
আমিও ঠিক তেমনি করে সভ্যতা আর শুভ্রতাকে বুকে নিয়েই দুঃসময়ে এতোটা পথ একলা এলাম শুশ্রূষাহীন।
কেউ ডাকেনি তবু এলাম, বলতে এলাম ভালোবাসি।
১০.৪.৮১






মানবানল

আগুন আর কতোটুকু পোড়ে ?
সীমাবদ্ধ ক্ষয় তার সীমিত বিনাশ,
মানুষের মতো আর অতো নয় আগুনের সোনালি সন্ত্রাস।
আগুন পোড়ালে তবু কিছু রাখে
কিছু থাকে,
হোক না তা শ্যামল রঙ ছাই,
মানুষে পোড়ালে আর কিছুই রাখে না
কিচ্ছু থাকে না,
খাঁ খাঁ বিরান, আমার কিছু নাই।
৭.২.৮১


ফেরীঅলা


কষ্ট নেবে কষ্ট
হরেক রকম কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট !
লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট
পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট,
আলোর মাঝে কালোর কষ্ট
‘মালটি-কালার’ কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট ।
ঘরের কষ্ট পরেরর কষ্ট পাখি এবং পাতার কষ্ট
দাড়ির কষ্ট
চোখের বুকের নখের কষ্ট,
একটি মানুষ খুব নীরবে নষ্ট হবার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট ।
প্রেমের কষ্ট ঘৃণার কষ্ট নদী এবং নারীর কষ্ট
অনাদর ও অবহেলার তুমুল কষ্ট,
ভুল রমণী ভালোবাসার
ভুল নেতাদের জনসভার
হাইড্রোজনে দুইটি জোকার নষ্ট হবার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট ।
দিনের কষ্ট রাতের কষ্ট
পথের এবং পায়ের কষ্ট
অসাধারণ করুণ চারু কষ্ট ফেরীঅলার কষ্ট
কষ্ট নেবে কষ্ট ।
আর কে দেবে আমি ছাড়া
আসল শোভন কষ্ট,
কার পুড়েছে জন্ম থেকে কপাল এমন
আমার মত ক’জনের আর
সব হয়েছে নষ্ট,
আর কে দেবে আমার মতো হৃষ্টপুষ্ট কষ্ট ।

................


প্রস্থান

এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিয়ো৷
এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালী তাল পাখাটা
খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পত্র দিয়ো৷
ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো খুব ব্যথিত
ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে, পত্র দিয়ো৷
কোন কথাটা অষ্টপ্রহর কেবল বাজে মনের কানে
কোন স্মৃতিটা উস্কানি দেয় ভাসতে বলে প্রেমের বানে
পত্র দিয়ো, পত্র দিয়ো৷
আর না হলে যত্ন করে ভুলেই যেয়ো, আপত্তি নেই৷
গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কী তাতে?
আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি ভুল করেছি,
নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে
পাঁচ দুপুরের নির্জনতা খুন করেছি, কী আসে যায়?
এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে,
এক মানবী কতোটা আর কষ্ট দেবে!
...............


ফেরীঅলা

কষ্ট নেবে কষ্ট
হরেক রকম কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট !
লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট
পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট,
আলোর মাঝে কালোর কষ্ট
‘মালটি-কালার’ কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট ।
ঘরের কষ্ট পরেরর কষ্ট পাখি এবং পাতার কষ্ট
দাড়ির কষ্ট
চোখের বুকের নখের কষ্ট,
একটি মানুষ খুব নীরবে নষ্ট হবার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট ।
প্রেমের কষ্ট ঘৃণার কষ্ট নদী এবং নারীর কষ্ট
অনাদর ও অবহেলার তুমুল কষ্ট,
ভুল রমণী ভালোবাসার
ভুল নেতাদের জনসভার
হাইড্রোজনে দুইটি জোকার নষ্ট হবার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট ।
দিনের কষ্ট রাতের কষ্ট
পথের এবং পায়ের কষ্ট
অসাধারণ করুণ চারু কষ্ট ফেরীঅলার কষ্ট
কষ্ট নেবে কষ্ট ।
আর কে দেবে আমি ছাড়া
আসল শোভন কষ্ট,
কার পুড়েছে জন্ম থেকে কপাল এমন
আমার মত ক’জনের আর
সব হয়েছে নষ্ট,
আর কে দেবে আমার মতো হৃষ্টপুষ্ট কষ্ট ।
বাম হাত তোমাকে দিলাম
এই নাও বাম হাত তোমাকে দিলাম।
একটু আদর করে রেখো, চৈত্রে বোশেখে
খরা আর ঝড়ের রাত্রিতে মমতায় সেবা ওশুশ্রূষা দিয়ে
বুকে রেখো, ঢেকে রেখো, দুর্দিনে যত্ন নিও
সুখী হবে তোমার সন্তান।
এই নাও বাম হাত তোমাকে দিলাম।
ও বড়ো কষ্টের হাত, দেখো দেখো অনাদরে কী রকম
শীর্ণ হয়েছে, ভুল আদরের ক্ষত সারা গায়ে
লেপ্টে রয়েছে, পোড়া কপালের হাত
মাটির মমতা চেয়ে
সম্পদের সুষম বন্টন চেয়ে
মানুষের ত্রাণ চেয়ে
জন্মাবধি কপাল পুড়েছে,
ওকে আর আহত করো না, কষ্ট দিও না
ওর সুখে সুখী হবে তোমার সন্তান।
কিছুই পারিনি দিতে, এই নাও বাম হাত তোমাকে দিলাম।
২৩.৭.৮০


বেদনা বোনের মত
একদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম
শুধু আমাকেই দেখা যায়,
আলোর প্রতিফলন প্রতিসরণের নিয়ম না জানা আমি
সেই থেকে আর কোনদিন আয়না দেখি না।
জননীর জৈবসারে বর্ধিত বৃক্ষের নিচে
কাঁদতাম যখন দাঁড়িয়ে
সজল শৈশবে, বড়ো সাধ হতো
আমিও কবর হয়ে যাই,
বহুদিন হলো আমি সেরকম কবর দেখি না
কবরে স্পর্ধিত সেই একই বৃক্ষ আমাকে দেখে না।
কারুকার্যময় চারু ঘরের নমুনা দিয়ে
একদিন ভরা ছিল আমার দু’রেটিনার সীমিত সীমানা,
অথচ তেমন কোনো সীমাবদ্ধতাকে আর কখন মানি না।
কী দারুণ বেদনা আমাকে তড়িতাহতের মতো কাঁপালো তুমুল
ক্ষরণের লাল স্রোত আজন্ম পুরোটা ভেতর উল্টে পাল্টে খেলো,
নাকি অলক্ষ্যে এভাবেই
এলোমেলো আমাকে পাল্টালো, নিপুণ নিষ্ঠায়
বেদনার নাম করে বোন তার শুশ্রূষায়
যেন আমাকেই সংগোপনে যোগ্য করে গেলো।
১৬.১.৭৩


ভূমিহীন কৃষকের গান


দুই ইঞ্চি জায়গা হবে?
বহুদিন চাষাবাদ করিনা সুখের।
মাত্র ইঞ্চি দুই জমি চাই
এর বেশী কখনো চাবো না,
যুক্তিসঙ্গত এই জৈবনিক দাবি খুব বিজ্ঞানসম্মত
তবু ওটুকু পাবো না
এমন কী অপরাধ কখন করেছি!
ততোটা উর্বর আর সুমসৃণ না হলেও ক্ষতি নেই
ক্ষোভ নেই লাবন্যের পুষ্টিহীনতায়,
যাবতীয় সার ও সোহাগ দিয়ে
একনিষ্ঠ পরিচর্যা দিয়ে
যোগ্য করে নেবো তাকে কর্মিষ্ঠ কৃষকের মত।
একদিন দিন চলে যাবে মৌসুম ফুরাবে,
জরা আর খরায় পীড়িত খাঁ খাঁ
অকর্ষিত ওলো জমি
কেঁদে-কেটে কৃষক পাবে না।
১২.১১.৮১



ব্যবধান


অতো বেশ নিকটে এসো না, তুমি পুড়ে যাবে,
কিছুটা আড়াল কিছু ব্যবধান থাকা খুব ভালো।
বিদ্যুত সুপারিবাহী দু’টি তার
বিজ্ঞানসম্মত ভাবে যতোটুকু দূরে থাকে
তুমি ঠিক ততোখানি নিরাপদ কাছাকাছি থেকো,
সমূহ বিপদ হবে এর বেশী নিকটে এসো না।
মানুষ গিয়েছে ভূলে কী কী তার মৌল উপাদান।
তাদের ভেতরে আজ বৃক্ষের মতন সেই সহনশীলতা নেই,
ধ্রুপদী স্নিগ্ধতা নেই, নদীর মৌনতা নিয়ে মুগ্ধ মানুষ
কল্যাণের দিকে আর প্রবাহিত হয় না এখন।
আজকাল অধঃপতনের দিকে সুপারসনিক গতি মানুষের
সঙ্গত সীমানা ছেড়ে অদ্ভুত নগরে যেন হিজরতের প্রতিযোগিতা।
তবু তুমি কাছে যেতে চাও? কার কাছে যাবে?
পশু-পাখিদের কিছু নিতে তুমুল উল্লাসে যেন
বসবাস করে আজ কুলীন মানুষ।
১০.২.৮২


প্রত্যাবর্তন

প্রত্যাবর্তনের পথে
কিছু কিছু ‘কস্ট্‌লি’ অতীত থেকে যায়।
কেউ ফেরে, কেউ কেউ কখনো ফেরে না।
কেউ ফিরে এসে কিছু পায়,
মৌলিক প্রেমিক আর কবি হলে অধিক হারায়।
তবু ফেরে, কেউ তো ফেরেই,
আর জীবনের পক্ষে দাঁড়ায়,
ভালোবাসা যাকে খায় এইভাবে সবটুকু খায়।
প্রত্যাবর্তনের প্তহে
পিতার প্রস্থান থেকে,
থাকে প্রণয়ের প্রাথমিক স্কুল,
মাতার মলিন স্মৃতি ফোটায় ধ্রুপদী হুল,
যুদ্ধোত্তর মানুষের মূল্যব
প্রতিমা
প্রেমের প্রতিমা তুমি, প্রণয়ের তীর্থ আমার।
বেদনার করুণ কৈশোর থেকে তোমাকে সাজাবো বলে
ভেঙেছি নিজেকে কী যে তুমুল উল্লাসে অবিরাম
তুমি তার কিছু কি দেখেছো?
একদিন এই পথে নির্লোভ ভ্রমণে
মৌলিক নির্মাণ চেয়ে কী ব্যাকুল স্থপতি ছিলাম,
কেন কালিমা না ছুঁয়ে শুধু তোমাকেই ছুঁলাম
ওসবের কতোটা জেনেছো?
শুনেছি সুখেই বেশ আছো, কিছু ভাঙচুর আর
তোলপাড় নিয়ে আজ আমিও সচ্ছল, টলমল
অনেক কষ্টের দামে জীবন গিয়েছে জেনে
মূলতই ভালোবাসা মিলনে মলিন হয়, বিরহে উজ্জ্বল।
এ আমার মোহ বলো, খেলা বলো
অবৈধ মুদ্রার মতো অচল আকাঙ্ক্ষা কিংবা
যা খুশী তা বলো,
সে আমার সোনালি গৌরব
নারী, সে আমার অনুপম প্রেম।
তুমি জানো, পাড়া-প্রতিবেশী জানে পাইনি তোমাকে,
অথচ রয়েছো তুমি এই কবি সন্নাসীর ভোগে আর ত্যাগে।
১১.৩.৭৩



নাম ভূমিকায়

তাকানোর মতো করে তাকালেই চিনবে আমাকে।
আমি মানুষের ব্যকরণ
জীবনের পুষ্পিত বিজ্ঞান
আমি সভ্যতার শুভ্রতার মৌল উপাদান,
আমাকে চিনতেই হবে
তাকালেই চিনবে আমাকে।
আমাকে না চেনা মানে
মাটি আর মানুষের প্রেমের উপমা সেই
অনুপম যুদ্ধকে না চেনা।
আমাকে না চেনা মানে
সকালের শিশির না চেনা,
ঘাসফুল, রাজহাঁস, উদ্ভিত না চেনা।
গাভিন ক্ষেতের ঘ্রাণ, জলের কসম, কাক
পলিমাটি চেনা মানে আমাকেই চেনা।
আমাকে চেনো না?
আমি তোমাদের ডাক নাম, উজাড় যমুনা।
৫.১২.৮০




নিখুঁত স্ট্র্যাটেজী

পতন দিয়েই আমি পতন ফেরাবো বলে
মনে পড়ে একদিন জীবনের সবুজ সকালে
নদীর উলটো জলে সাঁতার দিয়েছিলাম।
পতন দিয়েই আমি পতন ফেরাবো বলে
একদিন যৌবনের শৈশবেই
যৌবনকে বাজি ধরে
জীবনের অসাধারণ স্কেচ এঁকেছিলাম।
শরীরের শিরা ও ধমনী থেকে লোহিত কণিকা দিয়ে আঁকা
মারাত্মক উজ্জ্বল রঙের সেই স্কেচে
এখনো আমার দেখো কী নিখুঁত নিটোল স্ট্র্যাটেজী।
অথচ পালটে গেলো কতো কিছু,–রাজনীতি,
সিংহাসন, সড়কের নাম, কবিতার কারুকাজ,
কিশোরী হেলেন।
কেবল মানুষ কিছু এখনো মিছিলে, যেন পথে-পায়ে
নিবিড় বন্ধনে তারা ফুরাবে জীবন।
তবে কি মানুষ আজ আমার মতন
নদীর উলটো জলে দিয়েছে সাঁতার,
তবে কি তাদের সব লোহিত কণিকা
এঁকেছে আমার মতো স্কেচ,
তবে কি মানুষ চোখে মেখেছে স্বপন
পতন দিয়েই আজ ফেরাবে পতন।
৪.১.৭৪


নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়

এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
মিছিলের সব হাত
কন্ঠ
পা এক নয় ।
সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে,
কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার ।
কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার
শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে
অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে
অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে,
কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয় প্রলোভনে
কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয় ।
যদি কেউ ভালোবেসে খুনী হতে চান
তাই হয়ে যান
উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায় ।
এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় ।
১.২.৬৯


নেত্রকোনা

কতো দিন তোমাকে দেখি না
তুমি ভালো আছো? সুখে আছো? বোন নেত্রকোনা।
আমাকে কি চিনতে পেরেছো? আমি
ছিলাম তোমার এক আদরের নাগরিক নিকট-আত্মীয়
আমাদের বড়ো বেশি মাখামাখি ছিলো,
তারপর কী থেকে কী হলো
আভাইগা কপাল শুধু বিচ্ছেদের বিষে নীল হলো।
দোহাই লক্ষ্মী মেয়ে কোন দিন জিজ্ঞেস করো না
আমি কেন এমন হলাম জানতে চেয়ো না
কী এমন অভিমানে আমাদের এতো ব্যবধান,
কতোটা বিশৃংখলা নিয়ে আমি ছিমছাম সন্নাসী হলাম।
কিছু কথা অকথিত থেকে যায়
বেদনার সব কথা মানুষ বলে না, রমনী-কাতর
সবিতা সেনের সূতী শাড়িও জানে না
সোনালী অনল আর কতো জল দিদির ভেতর।
কেউ কি তাকিয়ে থাকে নিষ্পলক দাঁড়িয়ে প্রাঙ্গণে?
কারো কি তোলপাড় ওঠে ট্রেনের হুইসেল শুনে মনে?
তোমার মাটির রসে পরিপুষ্ট বৃক্ষ ফুল।
মগড়ার ক্ষীণ কলরোল
অমল কোমল এক মানুষের প্রতীক্ষায় থাক বা না থাক,
তুমি আছো আমার মজ্জায় আর মগজের কোষে অনুক্ষণ,
যে রকম ক্যামোফ্লাজ করে খুব ওতোপ্রোতভাবে থাকে
জীবনের পাশাপাশি অদ্ভুত মরণ।
২৫.১১.৮১



পরানের পাখি
পরানের পাখি তুমি একবার সেই কথা কও,
আমার সূর্যের কথা, কাঙ্খিত দিনের কথা,
সুশোভন স্বপ্নের কথাটা বলো,–শুনুক মানুষ।
পরানের পাখি তুমি একবার সেই কথা কও,
অলক্ষ্যে কবে থেকে কোমল পাহাড়ে বসে
এতোদিন খুঁটে খুঁটে খেয়েছো আমাকে আর
কতো কোটি দিয়েছো ঠোকর,
বিষে বিষে নীল হয়ে গেছি, শুশ্রূষায়
এখনো কী ভাবে তবু শুভ্রতা পুষেছি তুমি দেখাও না
পাখি তুমি তোমাকে দেখাও,–দেখুক মানুষ।
পরানের পাখি তুমি একবার সেই কথা কও,
সময় পাবে না বেশি চতুর্দিক বড়ো টলোমলো
পরানের পাখি তুমি শেষবার শেষ কথা বলো,
আমার ভেতরে থেকে আমার জীবন খেয়ে কতোটুকু
যোগ্য হয়েছো, ভূ-ভাগ কাঁপিয়ে বেসামাল
কবে পাখি দেবেই উড়াল, দাও,–শিখুক মানুষ।
২১.৭.৮০



পৃথক পাহাড়



আমি আর কতোটুকু পারি ?
কতোটুকু দিলে বলো মনে হবে দিয়েছি তোমায়,
আপাতত তাই নাও যতোটুকু তোমাকে মানায়।
ওইটুকু নিয়ে তুমি বড় হও,
বড় হতে হতে কিছু নত হও
নত হতে হতে হবে পৃথক পাহাড়,
মাটি ও মানুষ পাবে, পেয়ে যাবে ধ্রুপদী আকাশ।
আমি আর কতোটুকু পারি ?
এর বেশি পারেনি মানুষ।
৯.১০.৮০




তীর্থ

কেন নাড়া দিলে?
নাড়ালেই নড়ে না অনেক কিছু
তবু কেন এমন নাড়ালে?
পৃথিবীর তিন ভাগ সমান দু’চোখ যার
তাকে কেন একমাস শ্রাবণ দেখালে!
এক ওভাবে নাড়ালে?
যেটুকু নড়ে না তুমুলভাবে ভেতরে বাহিরে
কেন তাকে সেটুকু নাড়ালে?
ভয় দেখালেই ভয় পায় না অনেকে,
তবু তাকে সে ভয় দেখালে?
যে মানুষ জীবনের সব ক’টি শোক-দ্বীপে গেছে,
সব কিছু হারিয়েই সে মানুষ
হারাবার ভয় হারিয়েছে,
তার পর তীর্থ হয়েছে।
৩.৬.৮০



তৃষ্ণা


কোনো প্রাপ্তিই পূর্ণ প্রাপ্তি নয়
কোনো প্রাপ্তির দেয় না পূর্ণ তৃপ্তি
সব প্রাপ্তি ও তৃপ্তি লালন করে
গোপনে গহীনে তৃষ্ণা তৃষ্ণা তৃষ্ণা।
আমার তো ছিলো কিছু না কিছু যে প্রাপ্য
আমার তো ছিলো কাম্য স্বল্প তৃপ্তি
অথচ এ পোড়া কপালের ক্যানভাসে
আজন্ম শুধু শুন্য শুন্য শুন্য।
তবে বেঁচে আছি একা নিদারুণ সুখে
অনাবিষ্কৃত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বুকে
অবর্ণনীয় শুশ্রূষাহীন কষ্টে
যায় যায় দিন ক্লান্ত ক্লান্ত ক্লান্ত।
৪.৭.৮২


অচল প্রেমের পদ্য - ০১


বড্ড জানান দিতে ইচ্ছে করে, - আছি,
মনে ও মগজে
গুন্‌ গুন্‌ করে
প্রণয়ের মৌমাছি।


অচল প্রেমের পদ্য - ০২


কোনদিন, আচমকা একদিন
ভালোবাসা এসে যদি হুট করে বলে বসে,-
‘চলো যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাই’,
যাবে?


অচল প্রেমের পদ্য - ০৩

তোমার জন্য সকাল, দুপুর
তোমার জন্য সন্ধ্যা
তোমার জন্য সকল গোলাপ
এবং রজনীগন্ধা।


চল প্রেমের পদ্য - ০৪

ভালোবেসেই নাম দিয়েছি ‘তনা’
মন না দিলে
ছোবল দিও তুলে বিষের ফনা।


অচল প্রেমের পদ্য - ০৫

তোমার হাতে দিয়েছিলাম অথৈ সম্ভাবনা
তুমি কি আর অসাধারণ? তোমার যে যন্ত্রনা
খুব মামুলী, বেশ করেছো চতুর সুদর্শনা
আমার সাথে চুকিয়ে ফেলে চিকন বিড়ম্বনা


অচল প্রেমের পদ্য - ০৬

যদি যেতে চাও, যাও
আমি পথ হবো চরণের তলে
না ছুঁয়ে তোমাকে ছোঁব
ফেরাবো না, পোড়াবোই হিমেল অনলে।


অচল প্রেমের পদ্য - ০৭

আমাকে উস্টা মেরে দিব্যি যাচ্ছো চলে,
দেখি দেখি
বাঁ পায়ের চারু নখে চোট লাগেনি তো;
ইস্‌! করছো কি? বসো না লক্ষ্মীটি,
ক্ষমার রুমালে মুছে সজীব ক্ষতেই
এন্টিসেপটিক দুটো চুমু দিয়ে দেই।


অচল প্রেমের পদ্য - ০৮

তুমি কি জুলেখা, শিরী, সাবিত্রী, নাকি রজকিনী?
চিনি, খুব জানি
তুমি যার তার, যে কেউ তোমার,
তোমাকে দিলাম না - ভালোবাসার অপূর্ব অধিকার।
অচল প্রেমের পদ্য - ০৯

আজন্ম মানুষ আমাকে পোড়াতে পোড়াতে কবি করে তুলেছে
মানুষের কাছে এওতো আমার এক ধরনের ঝণ।
এমনই কপাল আমার
অপরিশোধ্য এই ঝণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।

অচল প্রেমের পদ্য - ১০


হয়তো তোমাকে হারিয়ে দিয়েছি
নয় তো গিয়েছি হেরে
থাক না ধ্রুপদী অস্পষ্টতা
কে কাকে গেলাম ছেড়ে।


ফটোশপ টিউটোরিয়াল : ভ্যালেন্টাইন ডে ই-কার্ড

সূর্য তার রাত্রিবাস ঝেড়ে ফেলেছে। আধো আলো, আধো ছায়ায় জানালার ফাঁক দিয়ে সকালের নরম রোদ ছুঁয়েছে মেঘের কপোল। আলসেমি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই মোবাইল ফোনটা বেসুরো গলায় গেয়ে ওঠে, ওপাশ থেকে ভেসে আসে ভালবাসা মেশানো অভিমানের মিষ্টি তিরস্কার। কন্জুস, ফুল কিনতে না হয় নোটগুলো কোরবাণী দিতে হয়, একটা ই-কার্ড পাঠাতেও কি সমস্যা? নাকি তাতেও পকেট খালি হয়ে যাবার ভয় আছে? নিজের মনে নিজেই হেসে ওঠি। পকেট, ও তাইতো, পকেট বলে কিছু আছে নাকি মেয়েদের? অবশ্য আমাদের তথাকথিত ললনাদের কথা আলাদা। তাদের শুধু পকেটই নয়, সাথে মানিব্যাগ উইথ মানি দুটো থেকেই সুন্দর গন্ধ ছড়ায়, কড়কড়ে নোটের মিষ্টি গন্ধ। তবে তাদের বসবাস সমাজের উচুঁ তলায়।তাদের নোট নামক মিষ্টি পারফিউমের গন্ধে অনেকের হাতেই শোভা পেয়েছে শব্দ যন্ত্র। গেল বছর আমার বন্ধু শিপন ঢাকা গেল। উঠলো ওর এক বন্ধুর মেসে। ছেলে অন্ত:প্রাণ মা কাপড়ের ব্যাগের জুনিয়র হিসেবে একটা খাবারের ব্যাগ দিতেও ভুল করলেন না। জুনিয়র পাঠিয়ে হলো আরেক কান্ড। মা অস্থির, ছেলে ঠিকমত খেলো কি না। তাই শিপন পৌঁছতে না পৌঁছতেই মোবাইলের বাটন ক্ষয় হতে থাকলো। শিপন, ঠিক মত খেয়েছিস তো? খাবার নষ্ট হয়ে যায়নি তো? না মা, খাবার ভাল আছে। এসেই ফ্রীজে রেখে দিয়েছি।তুমি চিন্তা করো না। মা কি ভাবলেন কে জানে। হ্যাঁ রে, ওরা কি খুব বড়লোক? ওপাশ থেকে শিপনের হাসির শব্দ ভেসে আসে। মা , এটা ওর বান্ধবী ওকে গিফট করেছে।এবার সত্যি সত্যি মায়ের ছোট ছোট চোখদুটো কমপ্লান পান করা ছাড়াই ইঞ্চি খানেক বড় হয়ে গেল। হায়রে কলিকাল.............অবশ্য আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজের কথা আলাদা। এখানে মনে করা হয় মেয়েদের পকেট নেই, সুতরাং পকেট খরচও নেই। যাই হোক, শ্রাবণের তিরস্কার খেয়ে নড়েচড়ে বসলাম। মাথার একপাশের সার্কিট বললো, ঘুমাও,ভ্যালেন্টাইন ডে তো চলে গেছে, এখন কার্ড পাঠিয়েই কি আর না পাঠিয়েই কি। কিন্ত বিবেক বলে, আরে ধুর, ভালবাসার জন্য আবার বিশেষ দিন লাগে নাকি। কম্বল ফেলে পিসির সামনে বসে যাই। প্রিয়জনের জন্য উপহার, মনের আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি না হলে কি ভালবাসার ফুল ফোটানো যায়?

স্টেপ ১: প্রথমে একটি ডকুমেন্ট তৈরী করুন। আমি এখানে ৮০০X ৬০০ পিক্সেল, রেজুলেশন ৭২ নিয়েছি।
First create a document of 800x600 pixel, regulation 72.


স্টেপ ২: এবার নতুন আরেকটি লেয়ার নিন এবং ফোরগ্রাউন্ডকালার #ff0000 সেট করে Alt+Backspace চেপে লেয়ারটিকে Fill করুন। অথবা আপনি চাইলে পেইন্ট বাকেট টুল (G) ব্যবহার করেও কাজটি করতে পারেন।

Create another layer and set foreground color #ff0000 and press Alt+Backspace and fill the the layer or use paint bucket tool for this

ছবি


স্টেপ ৩: এবার নতুন আরেকটি লেয়ার নিন এবং স্টেপ ২ এর মত #330000 কালার দ্বারা ফিল করুন। এবার লেয়ারটিতে Mask যোগ করুন। Create another layer and fill this layer as step 2 by#330000 color and add mask.


ছবি


ফোরগ্রাউন্ড কালার #০০০০০০ সিলেক্ট করুন এবং গ্রাডিয়েন্ট ( রেডিয়াল গ্রাডিয়েন্ট) টুল সিলেক্ট করে ইমেজের ৯০ ডিগ্রী এ্যাঙ্গেলে ড্রাগ করুন। ফলে আপনার ইমেজটি দেখতে এমন হবে।

Select foreground color #০০০০০০ and radial gradient and drag it on 90 degree angel. Now your image will look like below.
ছবি

স্টেপ ৪: নতুন আরেকটি লেয়ার নিন এবং আপনার পছন্দ মত যেকোন একটি ইমেজ পেস্ট করুন। আমি এখানে গোলাপের ইমেজ ব্যবহার করেছি।

Create another layer and paste an image as you like. Here I use a rose picture.


ছবি


স্টেপ ৫: এবার ফুলের ইমেজের লেয়ারটির পপআপ মেন্যু থেকে ব্লেন্ডিং অপশন Color burn, opacity ১৯% করে দিন। অথবা আপনি চাইলে লেয়ার-ব্লেন্ডিং অপশন- কালার বার্ণ কমান্ড দিয়েও করে নিতে পারেন।

Now from the layer pop up menu change the blending option Color burn and set the opecity 19 %.


ছবি

স্টেপ ৬: এবার Ctrl+T চেপে এই লেয়ারটিকে রিসাইজ করে নিন।
Now press Ctrl+T to resize the image.

ছবি


নতুন আরেকটি লেয়ার নিন এবং একে #000000 দ্বারা Fill করুন। এবারে লেয়ারটিকে ড্রাগ করে ফুলের ইমেজের লেয়ারের নিচে নামিয়ে নিন এবং এর অপাসিটি ২৫% করে দিন।

Create another layer and fill it by #000000 . Now drag this layer and set below the flower layer. Change the opacity to 25%.


স্টেপ ৭: ব্রাশ টুল সিলেক্ট করুন। এবং ব্রাশ পপআপ মেন্যু থেকে আপনার পছন্দমত যেকোন ব্রাশ সিলেক্ট করুন।
Select brush tool from the brush palette.


ছবি


স্টেপ ৮: এবার নতুন আরেকটি লেয়ারে ব্রাশ টুল দিয়ে আপনার ইচ্ছেমত ইমেজ আকুঁন। এবং লেয়ারটিতে ডবল ক্লিক করে ব্লেন্ডিং অপশন থেকে গ্রাডিয়েন্ট ওভারলে যোগ করুন।

Create another layer and draw some image as you like. Now double click on this layer and change the blending option gradient overlay.

ছবি

স্টেপ ৯: পেন টুল সিলেক্ট করুন এবং ফোরগ্রাউন্ড কালার #ff0000 সেট করুন। এবার কাস্টম সেপ থেকে একটি লাভ সেপ আকুঁন।

Select pen tool and set the foreground color #ff0000. Now from the custom shape draw a love sign.
ছবি


স্টেপ ১০: এবার ড্রপ শ্যাডো, বেভেল এন্ড এ্যামবস, গ্রাডিয়েন্ট ওভারলে যোগ করুন।

Now add drop shadow, bevel and emboss and gradient overlay.


ছবি
ছবি


ছবি


ছবি

স্টেপ ১১: লাভ চিন্হিত ইমেজটির কয়েকটি কপি তৈরী করুন এবং একে ছোট বড় করে আপনার ইচ্ছেমত জায়গায় সেট করুন।

Now duplicate the love sign layer and set it in different size as you like.

ছবি


স্টেপ ১২: নতুন আরেকটি লেয়ার নিন। পেন টুল সিলেক্ট করুন এবং কাস্টম সেপ থেকে রিবন সিলেক্ট করে #ffffff কালারের একটি রিবন আকুঁন।

Create another layer. Select pen tool and from the custom shape tool draw a #ffffff color ribbon.

ছবি

স্টেপ ১৩: এবারে রিবনের লেয়ারটিতে ডবল ক্লিক করে ব্লেন্ডিং অপশনে গিয়ে গ্রাডিয়েন্ট ওভারলে ও ড্রপ শ্যাডো যোগ করুন।

Now double click on the ribbon layer and add gradient overlay and drop shadow from the blending option.


ছবি

ব্যাস, বাকিটা আপনার ইচ্ছে।

Now the last is yours .
:k :k :k


ছবি


Happy valentine for all.

:k :k :k

ফটোশপে গোল্ডেন টেক্সট

tআজ আমরা শিখবো কিভাবে ফটোশপে গোল্ড ইফেক্ট দিতে হয়।

স্টেপ ১:

Step 1
প্রথমে File মেন্যু থেকে একটি নতুন ডকুমেন্ট ওপেন করুন। এজন্য আপনি Ctrl+N কমান্ড দিয়েও কাজটি করতে পারেন। আমি এখানে নিচের সেটিংসটা নিয়েছি।

First open a document by pressing Ctrl+N or File-new .

ছবি
স্টেপ ২:
Step 2
এবার ফোরগ্রাউন্ড কালার কালো করে নিন। এজন্য কি-বোর্ডে D চাপলেই ফোরগ্রাউন্ড কালার কালো হয়ে যাবে। এবার লেয়ারটি কালো রং করে নিন। এটা আপনি চাইলে Atrl+Backspace চেপে করতে পারেন অথবা Fill color (G) টুল দিয়েও করতে পারেন। ফলে আপনার লেয়ারটি এমন দেখাবে।

Now make the foreground color black. For this press D on keyboard. Now press Atrl+Backspace of select Fill color(G ) . Now your image will be look like below.

ছবি

স্টেপ ৩:
Step 3

এবার কি-বোর্ডে X চেপে ফোরগ্রাউন্ড কালার সাদা করে নিন। টেক্সট টুল সিলেক্ট করুন। নতুন একটি লেয়ারে আপনার কাঙ্খিত টেক্সটি লিখুন এবং Ctrl+T চেপে ট্রান্সফরম করে টেক্সটিকে রিসাইজ করে নিন।

Press X key on keyboard in order to make the foreground color white. Select text tool. Now write a text in a new layer and transform it by pressing Ctrl+T. Follow the following settings.


ছবি

ছবি

স্টেপ ৪:

Step 4


Ctrl+J কমান্ড দিয়ে টেক্সট লেয়ারটির আরেকটি কপি তৈরী করুন। এবার কপি করা লেয়ারে ব্লেন্ডিং ইফেক্ট দিন। এজন্য আপনি লেয়ার প্যালেট এ দু'বার ক্লিক করলেই ব্লেন্ডিং অপশন আসবে। অথবা আপনি Layer-Layer style-blending option থেকেও এটা করতে পারেন। অথবা লেয়ার প্যালেটে রাইট মাউস ক্লিক করলে Blending অপশন আসবে।এবার নিচের সেটিংসগুলো দিন।প্রথমে Gradient Overlay যোগ করুন।

Create a copy of the text layer by pressing Ctrl+J . Now add blending option by right clicking on the layer thumnails or give this command " Layer-Layer style-blending option". Use the following settings. First add gradient overlay.

ছবি

ছবি

ছবি


এরপর Bevel & Emboss যোগ করুন।

Now add Bevel and Emboss.


ছবি

ছবি

ছবি

ছবি

ছবি

ছবি

Inner glow দিন।
Use inner glow.

ছবি

ছবি

স্টেপ ৫:

Step 5

এবার অরিজিনাল টেক্সট লেয়ারটি সিলেক্ট করুন। এবং আগের মত ব্লেন্ডিং অপশনে গিয়ে Stroke দিন।
Now select the original layer and give stroke from the blending option as step 4.


ছবি

ছবি

Stroke এর Gradient Overlay তে নিচের সেটিংসগুলো দিন।

ছবি

ছবি

এবারে Outer glow দিন।

Add Outer glow.

ছবি

ফলে আপনার ইমেজটি দেখতে এমন হবে।

Now your image will be look like this
ছবি

এর সাথে আরো কিছু ইফেক্ট যোগ করে আপনি আপনার ইমেজটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন। আমি এখানে বাড়তি ব্রাশ টুল ও লেভেল এ্যাড করেছি।

You can make your image more attractive by using more effects as you prefer. Here I use extra brush effect and also add level.

Thank you all.

ছবি

আমি চেষ্টা করেছি এমন একটা টিউটোরিয়াল দিতে যাতে একটা টিউটোরিয়াল রপ্ত করলেই ফটোশপের অনেকগুলো খুঁটিনাটি বিষয় শেখা যায়। এই টিউটোরিয়ালে মূলত: ব্লেন্ডিং অপশনের উপর জোর দেয়া হয়েছে। আশা করি এই টিউটোরিয়াল থেকে ব্লেন্ডিং অপশনের বিষয়টা সহজ হয়ে যাবে। টিউটোরিয়াল লিখতে লিখতে হঠাৎ ছেলেবেলায় শোনা সেই গল্পটা মনে পড়ে গেল। এক লোক সোনার আংটি হাতে পরে বাজার করতে গেছেন। মাছের দোকানে গিয়ে আংটি পরা আঙ্গুল টা'কে নাড়িয়ে বলছেন,"ঐ যে ঐ মাছ টা। ওটার দাম কত?" মাছওয়ালা তার সোনা বাধাঁনো দাঁতটা দেখিয়ে একগাল হেসে বললো,"৫০০ টাকা"। গল্পটা মনে পড়তেই মনে হলো আমার দাঁতগুলো কে সোনা দিয়ে বাধাঁলে কেমন হবে :-? অবশ্যই ফটোশপে। সোনার দাতঁ দিয়ে খেতে নিশ্চয় খুব একটা খারাপ লাগবে না। ভার্চুয়াল খাবার :k


লিংকটা এখানে http://forum.amaderprojukti.com/viewtopic.php?f=57&t=2912

আমার কথার প্যাঁচাপেঁচি

(শরীরটা ইদানীং ভাল যাচ্ছে না। প্রায়শ:ই অসুস্থতা আমার দেহের খাঁচায় ভর করে। সময় তার মত করেই বয়ে যায়, আর আমি আমার মতই থাকি । সেই একঘেঁয়ে ক্লান্তিকর জীবন। মাঝে মাঝে মাথার ভেতর কথারা বেড়াতে আসে। আমি তাদের কাগজে বসতে দিয়ে আপ্যায়ন করি। মনের মাধুরী মিশাই। তারা আস্তানা গাঁড়ে। কখনো কখনো তাদের আকাশের ঠিকানায় প্রমোদ ভ্রমণে পাঠাই । আজো একদলকে পাঠাচ্ছি । একটু বাতাস খেয়ে আসুক ।)



-জরি , ঐ জরি, ঘুমাইছস?
-ক্যাডা? ভেতর থেকে ফিসফিস করে কেউ বলে ওঠে। বাইরে আরেকটা ফিসফিসানির শব্দ ।
-আমি রফিক, বাইরে আয়, কতা আছে।
-কি কতা রফিক ভাই?
- বাইরে না আইলে কেমতে কই?
ফকফকে জ্যোৎস্নায় একটা ছায়ার্মূতি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে।বাঁশের ঝোপে খসখস শব্দ হয় । কাঁটাঝোপের আড়ালে পাতারা কানাকানি করে। কঞ্চি লতারা জরির আঁচল চেপে ধরে। আবছা আলোয় কচি বাঁশের শাখাগুলো আকুল আবেদন জানায়। যেন চুপিচুপি বলে ওঠে যাসনে।


-জলদি কও রফিক ভাই, মায়ে টের পাইলে সর্বনাশ হইয়া যাইবো।
-খ্যাতা পোড়াই তোর সর্বনাশের । চল নদীর ঘাটে যাই।
-না রফিক ভাই, আইজ ছাড়ান দেও। কাইল আমাক দেখবার আইসবো।
-দেখবার আইসবো মাইনে ? কারা দেখবার আইসবো, ক্যান দেখবার আইসবো ? রফিক খেঁকিয়ে ওঠে।
-বুড়িমারী থাইক্যা কারা জানি , মায়ের দূরসর্ম্পকের ভাইস্তা।
-আহুক গিয়া, দেহি কুন শালার কত মুরোদ, আমাক ছাড়ি তুই কই যাবি ? জরি, চল আমরা পলাই যাই। দেহিস, আমি তোর কোন অযত্ন করুম না। তুই সুখেই থাকবি। রফিক জরির হাতটা চেপে ধরে।
-এইডা কি কও রফিক ভাই, আমি যদি তোমার লগে যাই তয় মাইনষে আমার বাপ-মায়রে দুষবো না? কইবো , কেমন মাইয়া প্যাডে ধরছিলা, মুখে চুনকালি মাখাইয়া পলাইছে। আতুর ঘরে গলা টিইপ্যা মাইরা ফ্যালাইতে পারো নাই মিয়া? তহন আমার মা-বাপ গ্যারামে মুখ দেখাইবো ক্যামতে? তুমি যাও রফিক ভাই। সবের কপালে সবতে হয় না। তুমি আমারে দুর থাইক্যাই ভালবাইসো। ঘর সংসার কইরা সুখি হইবার চেষ্টা কইরো। তাইলেই আমি সুখি হমু।
- তুই এইডা কইবার পারলি জরি? আমি তরে ছাইড়া আরেকজনের লগে বিয়া করুম? তুই আমাক এইডা কইবার পারলি?
-ক্যান পারুম না কও। তোমারেও তো তোমার বাপ-মা কষ্ট কইরা মানুষ করছে। তাগোরে তুমি কষ্ট দিবার চাও? তাছাড়া তুমি তো এহন আর মানুষ নাই , মদ, জুয়া ,মাইয়া মানুষ .......... জরি কথা শেষ করে না ।
-এইডা আমার ব্যাপার, তুই যাবি কিনা ক? নাইলে কিন্তু........
-নাইলে কি রফিক ভাই?
-সেইডা সময়ে ট্যার পাবি ।
-রফিক ভাই তুমি এমুন বেবুঝ হইয়ো না। আমি তোমার লগে যাইবার পারুম না। মনে লও এইতেও তোমার আমার ভালা।
-তুই যাবিনা?
-না রফিক ভাই, আমারে তুমি ক্ষমা করো।
-আইচ্ছা, দেইখ্যা নিমু। ধুপধাপ শব্দ তুলে রফিক চলে যায়। ওর যাবার পথে জরি অপলক চেয়ে থাকে। এই মানুষটাকে ও কি ভালই না বেসেছে। ইস্ রফিক ভাই যদি একটা কাম জুটাইতো, নেশাটেশা না করতো, তাইলে বাপ-মা নিশ্চয় অমত করতো না। মেম্বারের ছাওয়াল, চেষ্টা করলে একটা কিছু নিশ্চয় জুটতো। কত শান্ত ছিল রফিক । পান সিগারেটের ধারে কাছে যেতো না । হঠাৎ কি হলো নেশা ধরলো, সাথে মেয়ে মানুষ। জরি কতবার বোঝাতে চেয়েছে এসব ভাল নয়। রফিক বুঝতে চায়নি। উল্টো ওকে ফুসলিয়েছে পালিয়ে যাবার জন্য । দীর্ঘশ্বাসকে বাতাসে উড়িয়ে জরি ঘুমাতে যায়। সে অন্যের ঘরের ঘরণী হবে হয়তো এটাই স্রষ্টার নিয়তি।

কাক ডাকা ভোরে জরির ঘুম ভেঙ্গে যায়। তবুও বিছানা ছেড়ে উঠতে মন চায় না। থাক না, আজ না হয় একটু দেরী করেই উঠলো, বাপের বাড়িতে আজই তার শেষ শয়ন, কাল যে জরী এখানে আসবে সে হবে অন্য কেউ।
-জরি, উঠ মা, এত বেইল কইরা ঘুমাইতে নাই, শ্বশুর বাড়ির লোকে মন্দ কইবো। মাইয়া মানুষ যত সহাল সহাল উঠবো ততই ভালা। মায়ের ডাক শুনে জরি নড়েচড়ে বসে। এখনো যাদের সে দেখেনি, জানেনি, সেইসব মানুষকে খুশি করার ট্রেনিং সে ঠিকানায় পৌছাঁবার আগেই শুরু হয়ে গেছে। জরির বুকটা ধড়াস করে ওঠে। সত্যিই কি ওখানে সবাই গালমন্দ করবে। পায়ে আলতা চড়িয়ে, মেহেদীর রঙয়ে হাতদুটো রাঙিয়ে একহাত লম্বা ঘোমটা টেনে জরি শ্বশুর বাড়ি চলে গেল। তালগাছের নিচে দাঁড়িয়ে ঝাপসা ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে রফিক তার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থাকে ।


চারপাশে ছোট-বড় অনেকে ভিড় করেছে নতুন বউ দেখবে বলে। দুটো শিশু ঠেলাঠেলি করছে
-সর , সর । আমার নতুন মামী। পাশের শিশুটি তখন মুখ ভেংচে জানান দিচ্ছে নববধুটি তারও আত্নীয়া।
-তর মামী আমার কি লয়? আমার চাচী । আমারডা বেশি আপনার। কি আশ্চর্য পৃথিবীর নিয়ম । কয়েক মুহূর্ত আগেও জরি ছিল শুধু একটি মেয়ে। তিনবার কবুলের সাথে সাথে কত আত্নীয়ের বাঁধনে বাধাঁ পড়ে গেছে । কত দায়িত্ব এখন তার। ভাবলেই মাথাটা ঘুরে আসে। একদিন এই শিশুদের মত জরিও অপেক্ষায় থেকেছে নতুন বউয়ের আগমনের। গ্রামে কারো বিয়ে হলেই জরির চোখে ঘুম থাকতো না। কারনে অকারনে বিয়ে বাড়িতে ঘুরঘুর করতো। ঔৎসুক চোখে অপেক্ষায় থাকতো কখন আসবে নতুন বউ। শাড়ি গহনার আড়ালে ক্লান্ত-ঘর্মাক্ত মুখটাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হতো। বুকে খেলা করতো চাপা উত্তেজনা। আর ছোট ছোট দীর্ঘশ্বাসকে বাতাসে ভাসিয়ে সেও স্বপ্ন দেখতো এমন একটা দিনের। জানতে ইচ্ছে করতো আগাগোড়া সাজানো গোছানো মানুষটার বুকের ভেতরে কেমন লাগছে । অথচ জানতো না জীবনের মঞ্চে এ এক আরেক গল্প পাঠের অভিষেক। আজ কাঁচের এধারে দাঁড়িয়ে অনুভূতির কোন রংই সে দেখতে পায়না। সবকিছুকে কেমন ক্লান্ত , বিষন্ন লাগে। কেউ একজন এগিয়ে এসে কোলে তুলে নেয়।
-আরে নয়া ভাবী যে দেহি এহেবারেই শুটকি । তালোই সাব মনে লয় ঠিকমত খাইবার দেয় নাই। আশেপাশের লোকজন হেসে ওঠে। জরির বুকটা বির্বণ হয়ে যায়। এ কেমনতর অপবাদ।
বৃদ্ধামত এক নারী এগিয়ে আসে। পাশ থেকে কেউ একজন বলে ওঠে, তোমার শাশুড়ি। কদমবুসি করো। জরি মাথা নামিয়ে কদমবুসি করে। বৃদ্ধা মিষ্টি মুখ করায়।
-আরে আরে টেকা কই , টেকা। শাশুড়িরে কদমবুসি করার টেকা দিবা না ? খালি হাতে কি কদমবুসি হয়। না বউয়ের বাপ-মা দেহি কিছুই শেখায় নাই। কোন এক আত্নীয়া বলে ওঠে।
-থাক, থাক অহন ঐসব বাদ দেও। জলিলের মা তুমি বউরে কোলের উপর বসাও। সহানুভূতির সুরে কে যেন বলে ওঠে। জরি তাকাতে সাহস পায়না। পাছে কোন ভুল হয়ে যায়। অথচ মুখটাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হয়। একটা মাদুরের উপর বসে জরির শাশুড়ি জরিকে হাঁটুর উপর বসায়। তারপর একটা পানের ভেতর একটা মিষ্টি পুরে জরিকে খেতে বলে। জরি বুঝতে পারে না কি করবে। কথামত পানটাকে মুখের ভেতর পুরে চিবানোর চেষ্টা করে। বিকৃত এক স্বাদ জরির গলা বেয়ে বুকের কাছে হঠাৎ আটকে যায়। জরি উগড়ে দেয় সবকিছু। আর তখনই আশেপাশ থেকে গুন্জন আসে , বউয়ের ধৈর্য্য দেহি এহেবারেই নাই। ও জলিলের মা কি মাইয়া ঘরে আনলা। আমগো জলিলের তো এহেবারে সাড়ে সর্বনাশ। জরির কানদুটো ঝাঁ ঝাঁ করে ওঠে।

বিয়েবাড়ির সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে জরিকে ঘুমাতে দেয়া হয় এক বিশাল ঘরে। যত রাজ্যের জ্ঞাতি দাদী নানী চাচী মুরুব্বী মহিলাদের বিশ্রামস্থল। ক্রমাগত পান চিবানোর শব্দ, বাতের ব্যথায় গোঙরানি, নাক ডাকার ফোঁসফোঁস শব্দ জরির রাতের ঘুম কেড়ে নেয়। সেই মানুষটাকে কোথাও দেখতে পায় না যার সাথে তার সারাটা জীবন তিন কবুলের বন্ধনে বাধাঁ পড়ে গেছে। নির্ঘুম চোখে জরি এপাশ ওপাশ করে। অথচ এই রাতটাকে নিয়ে সে কত স্বপ্নই না দেখেছিল। মঞ্চের উপরের দৃশ্যটাই সে সবসময় দেখেছে। পর্দার আড়ালের পৃথিবী তার অচেনা।

বৌভাত শেষে পড়ন্ত বিকেলে গরুর গাড়িতে দুলতে দুলতে জরি বাপের বাড়ির পথে রওয়ানা দেয়। সামনে দিকে মুখ করে তার স্বামী বসা। এপাশে ঘোমটার আড়ালে জরি মেঠো পথ ধরে চেনা গাছগুলোকে খুঁজতে থাকে। কাল রাতের আঁধারে কিছুই দেখতে পায় নি। বিকেলের শেষ আলোয় দূরের ধানক্ষেতটাকে মনে হয় বিশাল এক সবুজ শাড়ি। তারই পাশঘেঁষে সাদা আলের রেখাকে মনে হয় চওড়া পাড়। ইচ্ছে করে সেই বিশাল শাড়িটায় শরীরটাকে জড়িয়ে দিগন্তের শেষে হারিয়ে যায়।
-আরে ঐযে অরা সব আইয়া পরছে। মায়ের গলার স্বর শুনে জরি সম্বিৎ ফিরে পায়। দৌড়ে মায়ের কাছে যায়।
-মাগো।
- ধুর পাগলি। এইতো আমি। মা বুকে জড়িয়ে নেয়। মাত্র একরাত, একদিন । তাতেই মনে হচ্ছে কত যুগ পরে জরি ফিরে এসেছে।

বাতাসে ভ্যাপসা গরম। টিনের চালে ঘাম বাষ্প হযে উড়ে গিয়ে শুকিয়ে যায়। সে বাষ্পে মেঘ তৈরী হয় না। শুধু ঘরের ভেতর জেগে থাকা দুটি শরীরে বৃষ্টি বৃষ্টি খেলা করে । ঢেউ তোলে, ভেঙ্গে যায়, গুঁড়িয়ে দেয়। আজ জরির বাসর রাত। বিবাহিত জীবনের বহু কাঙ্খিত রাত। ঢেউ তুলে বাঁধ ভেঙ্গে একসময় সব খেলা শেষ হয়। পাশের মানুষটি ক্লান্ত হয়ে ঘুমের রাজ্যে পা বাড়ায়। অন্ধকারে আরেকটা বুকে তখন লাল-নীল-ছাই তুষের আগুন জ্বলে। মনে হয় অন্ধকারের ভেতর থেকে লাল-নীল হাসির প্রতিধ্বনি তার ঘরের চালে টুংটাং করে বাজছে। দাঁতে দাঁত চেপে রফিক বিছানায় ছটফট করতে থাকে। টিনের চালে হাসির প্রতিধ্বনি প্রবল থেকে আরো প্রবল হয়। লাল শাড়ীর আচঁল, পদ্ম ডাটার মত নরম শরীর হাতছানি দেয়। রফিক ছুটে বাইরে বেরিয়ে আসে।

মুয়াজ্জিনের ঘুম ভাঙ্গতে এখনো বাকি । জরি বিছানা ছেড়ে নেমে যায়। মনে হয় শরীরের ভাঁজে ভাঁজে কে যেন ভালবাসার করাত চালিয়েছে। নিজের শরীরটাকে অচেনা মনে হয়। ক্লান্ত লাগে। ইচ্ছে করে পদ্মপাতার মত পুকুরে একটু ভেসে থাকতে। একটু একটু দুলতে দুলতে জরি পুকুর ঘাঁটে যায়। ভালবাসার আদরগুলোর সুগন্ধ পুকুরের পানিতে আলতো আলতো করে ছড়াতে থাকে। পদ্মডাটাগুলোর দিকে তাকিয়ে নিজের মনেই হেসে ওঠে । একটু আঙ্গুল ছুঁয়ে দেয়। আনমনে বলে ওঠে , অমন বেহায়ার মত চাইয়া থাহিস না, আমার শরম করে না বুঝি ? পদ্মডাটারা দুলে উঠে নিজেদের বেহায়ত্ব প্রমাণ করে । কিংবা কে জানে তারাও জরির গায়ে ভালবাসার পরশ দিতে না পেরে ঈর্ষান্বিত হয়।

-জরি । এই জরি । গলার আওয়াজ শুনে জরি চমকে ওঠে। বুকের ভেতর টা কেঁপে ওঠে। দেহের সবটুকু শক্তি দিয়ে পদ্মডাটাগুলোকে চেপে ধরে। কে ডাকে তাকে ?কিছু বুঝে ওঠার আগেই শক্ত দুটো হাত জরিকে পুকুরের নিচের তলার দিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। জরি পদ্মডাটাগুলোকে আরো প্রবল ভাবে চেপে ধরে ওপরে ওঠার চেষ্টা করে। পারে না কিছুতেই। পদ্মডাটাগুলো আরো জড়িয়ে যায়। পুকুরের পানিতে ঝপঝপ শব্দ হয়। মায়ের ঘুম ভেঙ্গে যায় । কোন এক মিষ্টি রাতের কথা মনে করে মা আবার ঘুমিয়ে পড়ে ।

দিনের আলো ছুঁয়েছে ভোরের আকাশ। সকালের প্রথম সূর্য সহানুভূতির চাদর বিছিয়ে একে একে ছুঁয়ে যায় ঘাস, মাছ, পুকুরঘাট । শীতল পানি একটু একটু করে উষ্ণ হতে থাকে। ঠান্ডা পানিতে ভেসে থাকা উষ্ণ দেহটা আস্তে আস্তে শীতল হতে থাকে। সেই সাথে শীতলতা ভর করে ভালবাসার ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে । রফিক সম্বিৎ ফিরে পায়। জরির দেহটার দিকে অপলক চেয়ে থাকে। কি করেছে সে । ভালভাবে বোঝার চেষ্টা করে । বুঝতে পারে না কিছুই । শুধু পদ্মপাতারা জরির স্থবির শরীরটাকে নিবিড়, আরো নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে .....................


২২মে , ২০০৯

আজাকারের লাগি

অনেকদিন পর গতপরশু সচলায়তনে লিখলাম । জানিনা কেমন হলো । কিছু একটা করার দায়বদ্ধতা থেকে লিখা । লিংক :

http://www.sachalayatan.com/guest_writer/24434#new

আজাকারের লাগি


লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২০০৯-০৫-১৯ ০৩:০২)
ক্যাটেগরী: | | | |

(উৎসর্গ : ভালবাসার রক্ত ঢেলে যারা গড়ছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ )
- স্যার মনে হয় ওর হাতের আঙ্গুলগুলান বেশি লম্বা। একটু কাইট্যা দিলেই সব সাইজ হইয়া যাইবো। তহন আর কিছু লেখবার পারবোনা। হালা বইলে শিক্ষিত, দ্যাহেন তো স্যার , সামান্য একখান কথা কইতে পারেনা আবার বইলে ভাষার জন্য যুদ্ধ করছে। হাম তিনবার প্যারাইমারী ফেইল দিয়াও ওর চেয়ে ভাল কইতে পারি। পাকিস্তান জিন্দাবাদ, পাকিস্তান জিন্দাবাদ।

মাঝরাতে দেয়ালের গাঁথুনিতে, সিলিংয়ের কোণায় বাড়ি খেয়ে কথাগুলো ঠুকঠাক করতে থাকে । মস্তবড় এই দালানের একটুকরো ইট আমি আড়ি পেতে থাকি আরো কিছু শোনা যায় কিনা। প্রায় প্রতিরাতেই কিছু না কিছু ঘটছে। দিনগুলোও বাদ পড়ে নেই । ফাগুনের এই শেষ বিদায়ের বেলায় আমরা ঘরের প্রতিটি কাঠ, আসবাব, ইট, সিমেন্ট, সুরকি চুপিচুপি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি । কখনো ঔৎস্যুক চোখে , কানের ফুটোগুলোকে একটু বড় করে একাত্তর দেখি।

ওপাশে চেয়ারে বসে থাকা মানুষটার পেশীগুলো তখন ফুঁলে উঠেছে। কিছু না করতে পারার ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে শরীরের কোষে কোষে। যদি একবার হাতের মুঠোয় পেতো। একটা দীর্ঘশ্বাস লুটোপুটি খায় শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, বাম নিলয় থেকে ডান নিলয়ে, কলিজায়।পরক্ষণেই ঝলকে উঠে পেশীগুলো শান্ত হয়ে আসে। হাত দুটো বাঁধা। চুলগুলোকে কে যেন মুঠোর মধ্যে প্রবল আক্রোশে চেপে ধরে। আড়চোখে তাকিয়ে দেখে মাতৃভূমির বিশ্বাসঘাতক সন্তানের মুখ । শরীফ সর্দার। একদিন কবরের মাটিও যাকে আলিঙ্গন করতে অস্বীকার করবে।

-আপ কুছ লেঙ্গে কেয়া? ঠান্ডা অর কফি? সিগরেট পিয়েঙ্গে আপ? ও হাম তো ভুল হি গ্যায়া, আপ মুসলমান হে। আরে হাম তো ভাই স্রেফ মু বোলি মুসলমান হ্যায়। থোরা সা জাম , থোরা নাম অর থোরা সা ............মুখটা’কে অশ্লীলভাবে বিকৃত করে মেজর কিছু একটা অসভ্য ইঙ্গিত করে।

- মি: রাইটার , শুনাহে আপ রোমান্টিক কাহানী লিখতাহে বহত খুউব। ক্যান ইউ ইমাজিন দ্যাট হাম আপকা আম্মি কে সাথ সুহাগ রাত মানানে গেয়ি অর আধি রাত কো .........হা হা হা । এক পশলা কুৎসিত হাসি সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। চেয়ারে বসে থাকা মানুষটা’র চোখদুটো রর্ক্তাত্ত হয়ে ওঠে যেন চোখ দিয়েই ধূলিস্মাৎ করে দেবে সামনে দাঁড়ানো মানুষরুপী জানোয়ারটিকে।
- আরে , আপতো বহত গুছ্ছেমে হে। আরে ভাই , হাম বুরা ক্যা বোলা? আপকো মন্জুর নেহি তো হাম নাহি যায়েঙ্গে আপকা ঘর আপকা আম্মিকে সাথ সুহাগরাত মানানে। লেকিন ইসকে লিয়ে আপকো তো কুচ দেনে পড়েগা হামকো। সমঝিয়ে সাম স্মল গিফট। কেয়া আপকো হামারি দোস্তী মন্জুর হ্যায়? সামনের চোখ দুটো নির্বাক। জানোয়ারটা কি বলতে চায়।

-নো নো আপ টেনশন মাতলো। হাম কুচ মেহেঙ্গা গিফট নাহি মাঙ্গতা, আপ স্রেফ ইয়ে কাহিয়ে আপকা আউর সাথি কাহা হে । হাম আপকো ছোড় দেঙ্গে।

একদলা রর্ক্তাত্ত থুথুর শিলাবৃষ্টি চেয়ারের দিক থেকে ছুটে আসে। মেজরের মুখে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে লাল-সাদা থুথুর বৃষ্টি।
-শালা হারামকে আওলাদ। কাট দো উসকে হাত কো।

-হ স্যার, হামভি ইয়ে বলতে চাই। উসকা হাত কাইট্যা দ্যান, তারপর দেহি কোন হাত দিয়া শালা বন্দুক ধরে, কলম দিয়া রাইট করে। চেয়ারে বসে থাকা মানুষটার হাতদুটোকে সুপারীর মত ঝাঁতার বাহুডোরে আবদ্ধ করে দেয় শরীফ সর্দার । তারপর টুক করে একটা শব্দ, শূন্য থেকে কয়েকটা আঙ্গুল পাকা করমচার মত টুপ করে মাটিতে খসে পড়ে।

-দেখলি তো আমি কি করবার পারি। শরীফ ফুঁসে ওঠে ।

-একদিন এই হাত দিয়া তুই আমার কলাট চাইপ্যা ধরছিলি মনে নাই? দুষটা কার বেশি ছিল ক, আমি না হয় তোর সুন্দরী বউটার দিকে চাইছিলাম, তুই ক্যান অমন সুন্দর একটা মাইয়া বিয়া করছিলি? ক? চুপ কইরা থাহস ক্যা? অহন তো তর বউ, ঘর সব ভ্যানিশ।

-পানি, পানি। একটু পানি। গলাটা শুকিয়ে আসছে। একটু পানি............চেয়ারের উপরে থাকা মানুষটা চেঁচিয়ে ওঠে ।

-শরীফ সাহাব, আপকা পাস কুছ হ্যা কেয়া , উসকো পিলাইয়ে না। আফটার অল ইয়ে আপকা মুল্লুকটা লেড়কা হে। মেজর সাহেবের গলায় দরদ উপচে পড়ে।

-হ স্যার, জরুর হ্যায়। হামারা তল পেট কুচ ভরা ভরা লাগতা। স্যার হাম আভি আতিহে। পা চাটা কুকুরের মত কুঁইকুঁই করতে করতে শরীফ ব্যস্ত হয়ে পড়ে মেজরের হুকুম তামিল করতে।

-আরে শরীফ সাহাব, আপ উধার কাহা যাতিহে, এহি আনজাম করো না। যরা হামভি দেখে।
শরীফ তার তলপেট খালি করে সবটুকু শয়তানীর নির্যাস চেয়ারের উপর বসে থাকা মানুষটার তৃষ্ণার্ত ঠোঁটদুটোর দিকে ছড়িয়ে দেয়। ক্লান্ত দেহটা ঘৃণায় কুকঁড়ে ওঠে।

-আল্লাহ তোদের কক্ষনো ক্ষমা করবে না শয়তান। একদিন এই বাংলাদেশে তোরা কুকুরের মত মরে থাকবি।রাগে , ঘৃণায় , ক্ষোভে চেয়ারটা দুলে ওঠে।

-আমি শয়তান? শরীফ খেঁকিয়ে ওঠে। দেহাইতাছি কেডা কুকুরের মত মইরা থাহে। মেজর সাব, ইয়ে আপকো শয়তান বোলা। এইডারে বেহেস্তে পাঠানোর বন্দোবস্ত করদি জি য়ে স্যার। দেরী করলে কিন্তুক ব্যাটা আমগোরেই বেহেস্তে পাঠাইয়া দিবো।

-নাহি, ইয়ে ছোটামোটা কাম তুমহি করো। হামারা তবিয়ত আচ্ছি নেহি হে। হামকো থোরাসা চেন্জ জরুরত হ্যায়। নয়া মাল কো আচ্ছি সে পিনা হ্যায়। ক্যায়সি খুবসুরত। হ্যায়, নিন্দ উড় গ্যায়ী।

চল, বেজন্মার পূত, আল্লাহর কাছে যাইয়া পরাণ ভইরা আমগো গাইল পার। কোরবাণীর ছুরি টা বাতাসে লাফিয়ে ওঠে ।আল্লাহু আকবর.............রক্তের স্রোত ঘরটাকে ভাসিয়ে দেয়। চেয়ারের উপর বসে থাকা বন্দী দেহটা একসময় দেহের খাঁচা ছেড়ে অনন্তলোকে পাড়ি জমায়।

অমাবস্যা
১৯মে ২০০৯


কবিতা



যদি নির্বাসন দাও
সূনীল গঙ্গোপাধ্যায়


যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো!
বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ
নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ
প্রান্তরে দিগন্ত নিনির্মেষ-
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো।

ধানক্ষেতে চাপ চাপ রক্ত
এইখানে ঝরেছিল মানুষের ঘাম
এখনো স্নানের আগে কেউ কেউ করে থাকে নদীকে প্রণাম
এখনো নদীর বুকে
মোচার খোলায় ঘোরে

লুঠেরা, ফেরারী!
শহরে বন্দরে এত অগ্নি বৃষ্টি
বৃষ্টিতে চিক্কণ তবু এক একটি অপরূপ ভোর
বাজারে ক্রুরতা, গ্রামে রণহিংসা
বাতাবি লেবুর গাছে জোনাকির ঝিকমিক খেলা
বিশাল প্রাসাদে বসে কাপুরুষতার মেলা
বুলেট ও বিস্ফোরণ
শঠ তঞ্চকের এত ছদ্মবেশ
রাত্রির শিশিরে কাঁপে ঘাস ফুল-
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো।

কুয়াশার মধ্যে এক শিশু যায় ভোরের ইস্কুলে
নিথর দিঘির পাড়ে বসে আছে বক
আমি কি ভুলেছি সব
স্মৃতি, তুমি এত প্রতারক?
আমি কি দেখিনি কোনো মন্থর বিকেলে
শিমুল তুলোর ওড়াউড়ি?
মোষের ঘাড়ের মত পরিশ্রমী মানুষের পাশে
শিউলি ফুলের মত বালিকার হাসি
নিইনি কি খেজুর রসের ঘ্রাণ
শুনিনি কি দুপুরে চিলের
তীক্ষ স্বর?
বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ…
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো।

জুলাই ১৯৭১ : গঙ্গা থেকে বুড়িগঙ্গা



মন ভালো নেই
সূনীল গঙ্গোপাধ্যায়


মন ভালো নেই
মন ভালো নেই
মন ভালো নেই
কেউ তা বোঝে না
সকলি গোপন
মুখে ছায়া নেই
চোখ খোলা তবু
চোখ বুজে আছি
কে তা দেখেনি
প্রতিদিন কাটে
দিন কেটে যায়
আশায় আশায় আশায় আশায়

এখন আমার
ওষ্ঠে লাগে না
কোনো প্রিয় স্বাদ
এমনকি নারী
এমনকি নারী
এমনকি নারী
এমন কি সুরা এমন কি ভাষা

মন ভালো নেই
মন ভালো নেই
মন ভালো নেই
বিকেল বেলায়
একলা একলা
পথে ঘুরে ঘুরে
একলা একলা পথে ঘুরে ঘুরে একলা একলা পথে ঘুরে ঘুরে

কিছুই খুঁজি না
কোথাও যাই না
কাউকে চাইনি
কিছুই খুঁজি না কোথাও যাই না
আমিও মানুষ
আমার কী আছে
অথবা কী ছিল
আমার কী আছে অথবা কী ছিল
ফুলের ভিতরে
বীজের ভিতরে
ঘুণের ভিতরে
যেমন আগুন আগুন আগুন আগুন আগুন

মন ভালো নেই
মন ভালো নেই
মন ভালো নেই
তবু দিন কাটে
দিন কেটে যায়
আশায় আশায়
আশায় আশায় আশায় আশায়

কোনোদিন দেখিব না তারে আমি
জীবনানন্দ দাস


কোনোদিন দেখিব না তারে আমি: হেমন্তে পাকিবে ধান, আষাঢ়ের রাতে
কালো মেঘ নিঙড়ায়ে সবুজ বাঁশের বন গেয়ে যাবে উচ্ছ্বাসের গান
সারারাত, — তবু আমি সাপচরা অন্ধ পথে — বেনুবনে তাহার সন্ধান
পাবো নাকে: পুকুরের পাড়ে সে যে আসিবে না কোনোদিন হাঁসিনীর সাথে,
সে কোনো জ্যোৎস্নায় আর আসিবে না — আসিবে না কখনো প্রভাতে,
যখন দুপুরে রোদে অপরাজিতার মুখ হয়ে থাকে ম্লান,
যখন মেঘের রঙে পথহারা দাঁড়কাক পেয়ে গেছে ঘরের সন্ধান,
ধূসর সন্ধ্যায় সেই আসিবে না সে এখানে; — এইখানে ধুন্দুল লতাতে

জোনাকি আসিবে শুধু: ঝিঁঝিঁ শুধু; সারারাত কথা কবে ঘাসে আর ঘাসে
বাদুড় উড়িবে শুধু পাখনা ভিজায়ে নিয়ে শান্ত হয়ে রাতের বাতাসে;
প্রতিটি নক্ষত্র তার স’ান খুঁজে জেগে রবে প্রতিটির পাশে
নীরব ধূসর কণা লেগে রবে তুচ্ছ অনূকণাটির শ্বাসে
অন্ধকারে — তুমি, সখি চলে গেলে দূরে তবু; — হৃদয়ের গভীর বিশ্বাসে
অশ্বত্থের শাখা ঐ দুলিতেছে; আলো আসে, ভোর হয়ে আসে।


স্বভাব
জীবনানন্দ দাস


যদিও আমার চোখে ঢের নদী ছিলো একদিন
পুনরায় আমাদের দেশে ভোর হ’লে,
তবুও একটি নদী দেখা যেতো শুধু তারপর;
কেবল একটি নারী কুয়াশা ফুরোলে
নদীর রেখার পার লক্ষ্য ক’রে চলে;
সূর্যের সমস্ত গোল সোনার ভিতরে
মানুষের শরীরের স্থিরতর মর্যাদার মতো
তার সেই মূর্তি এসে পড়ে।
সূর্যের সম্পূর্ণ বড় বিভোর পরিধি
যেন তার নিজের জিনিস।
এতদিন পরে সেইসব ফিরে পেতে
সময়ের কাছে যদি করি সুপারিশ
তা’হলে সে স্মৃতি দেবে সহিষ্ণু আলোয়
দু-একটি হেমন্তের রাত্রির প্রথম প্রহরে;
যদিও লক্ষ লোক পৃথিবীতে আজ
আচ্ছন্ন মাছির মত মরে -
তবুও একটি নারী ‘ভোরের নদীর
জলের ভিতরে জল চিরদিন সূর্যের আলোয় গড়াবে’
এ রকম দু-চারটে ভয়াবহ স্বাভাবিক কথা
ভেবে শেষ হ’য়ে গেছে একদিন সাধারণভাবে।

প্রিয় কবিতা ; হেলাল হাফিজ

ভূমিহীন কৃষকের গান

দুই ইঞ্চি জায়গা হবে?
বহুদিন চাষাবাদ করিনা সুখের।

মাত্র ইঞ্চি দুই জমি চাই
এর বেশী কখনো চাবো না,
যুক্তিসঙ্গত এই জৈবনিক দাবি খুব বিজ্ঞানসম্মত
তবু ওটুকু পাবো না
এমন কী অপরাধ কখন করেছি!

ততোটা উর্বর আর সুমসৃণ না হলেও ক্ষতি নেই
ক্ষোভ নেই লাবন্যের পুষ্টিহীনতায়,
যাবতীয় সার ও সোহাগ দিয়ে
একনিষ্ঠ পরিচর্যা দিয়ে
যোগ্য করে নেবো তাকে কর্মিষ্ঠ কৃষকের মত।

একদিন দিন চলে যাবে মৌসুম ফুরাবে,
জরা আর খরায় পীড়িত খাঁ খাঁ
অকর্ষিত ওলো জমি
কেঁদে-কেটে কৃষক পাবে না।

১২.১১.৮১


হৃদয়ের ঋণ

আমার জীবন ভালোবাসাহীন গেলে
কলঙ্ক হবে কলঙ্ক হবে তোর,
খুব সামান্য হৃদয়ের ঋণ পেলে
বেদনাকে নিয়ে সচ্ছলতার ঘর

বাঁধবো নিমেষে। শর্তবিহীন হাত
গচ্ছিত রেখে লাজুক দু’হাতে আমি
কাটাবো উজাড় যুগলবন্দী হাত
অযুত স্বপ্নে। শুনেছি জীবন দামী,

একবার আসে, তাকে ভালোবেসে যদি
অমার্জনীয় অপরাধ হয় হোক,
ইতিহাস দেবে অমরতা নিরবধি
আয় মেয়ে গড়ি চারু আনন্দলোক।

দেখবো দেখাবো পরস্পরকে খুলে
যতো সুখ আর দুঃখের সব দাগ,
আয় না পাষাণী একবার পথ ভুলে
পরীক্ষা হোক কার কতো অনুরাগ।

২২.৬.৮৩


ব্যবধান

অতো বেশ নিকটে এসো না, তুমি পুড়ে যাবে,
কিছুটা আড়াল কিছু ব্যবধান থাকা খুব ভালো।
বিদ্যুত সুপারিবাহী দু’টি তার
বিজ্ঞানসম্মত ভাবে যতোটুকু দূরে থাকে
তুমি ঠিক ততোখানি নিরাপদ কাছাকাছি থেকো,
সমূহ বিপদ হবে এর বেশী নিকটে এসো না।

মানুষ গিয়েছে ভূলে কী কী তার মৌল উপাদান।
তাদের ভেতরে আজ বৃক্ষের মতন সেই সহনশীলতা নেই,
ধ্রুপদী স্নিগ্ধতা নেই, নদীর মৌনতা নিয়ে মুগ্ধ মানুষ
কল্যাণের দিকে আর প্রবাহিত হয় না এখন।

আজকাল অধঃপতনের দিকে সুপারসনিক গতি মানুষের
সঙ্গত সীমানা ছেড়ে অদ্ভুত নগরে যেন হিজরতের প্রতিযোগিতা।

তবু তুমি কাছে যেতে চাও? কার কাছে যাবে?
পশু-পাখিদের কিছু নিতে তুমুল উল্লাসে যেন
বসবাস করে আজ কুলীন মানুষ।

১০.২.৮২


মানবানল

আগুন আর কতোটুকু পোড়ে ?
সীমাবদ্ধ ক্ষয় তার সীমিত বিনাশ,
মানুষের মতো আর অতো নয় আগুনের সোনালি সন্ত্রাস।

আগুন পোড়ালে তবু কিছু রাখে
কিছু থাকে,
হোক না তা শ্যামল রঙ ছাই,
মানুষে পোড়ালে আর কিছুই রাখে না
কিচ্ছু থাকে না,
খাঁ খাঁ বিরান, আমার কিছু নাই।

৭.২.৮১


অচল প্রেমের পদ্য - ০১

আছি।
বড্ড জানান দিতে ইচ্ছে করে, - আছি,
মনে ও মগজে
গুন্‌ গুন্‌ করে
প্রণয়ের মৌমাছি।


তুমি ডাক দিলে

একবার ডাক দিয়ে দেখো আমি কতোটা কাঙাল,
কতো হুলুস্থূল অনটন আজম্ন ভেতরে আমার।

তুমি ডাক দিলে
নষ্ঠ কষ্ঠ সব নিমিষেই ঝেড়ে মুছে
শব্দের অধিক দ্রুত গতিতে পৌছুবো
পরিণত প্রণয়ের উৎসমূল ছোঁব
পথে এতোটুকু দেরিও করবো না।
তুমি ডাক দিলে
সীমাহীন খাঁ খাঁ নিয়ে মরোদ্যান হবো,
তুমি রাজি হলে
যুগল আহলাদে এক মনোরম আশ্রম বানাবো।

একবার আমন্রণ পেলে
সব কিছু ফেলে
তোমার উদ্দেশে দেবো উজাড় উড়াল,
অভয়ারণ্য হবে কথা দিলে
লোকালয়ে থাকবো না আর
আমরণ পাখি হয়ে যাবো, -খাবো মৌনতা তোমার


ইদানিং জীবন যাপন


আমার কষ্টেরা বেশ ভালোই আছেন,
প্রাত্যহিক সব কাজ ঠিক-ঠাক করে চলেছেন
খাচ্ছেন-দাচ্ছেন, অফিসে যাচ্ছেন,
প্রেসক্লাবে আড্ডাও দিচ্ছেন।

মাঝে মাঝে কষ্টেরা আমার
সারাটা বিকেল বসে দেখেন মৌসুমী খেলা,
গোল স্টেডিয়াম যেন হয়ে যায় নিজেই কবিতা।

আজকাল আমার কষ্টেরা বেশ ভালোই থাকেন,
অঙ্কুরোদ্‌গম প্রিয় এলোমেলো যুবকের
অতৃপ্ত মানুষের শুশ্রূষা করেন। বিরোধী দলের ভুল
মিছিলের শোভা দেখে হাসেন তুমুল,
ক্লান্তিতে গভীর রাতে ঘরহীন ঘরেও ফেরেন,
নির্জন নগরে তারা কতিপয় নাগরিক যেন
কতো কথোপকথনে কাটান বাকিটা রাত,
অবশেষে কিশোরীর বুকের মতন সাদা ভোরবেলা
অধিক ক্লান্তিতে সব ঘুমিয়ে পড়েন।

আমার কষ্টেরা বেশ ভালোই আছেন, মোটামুটি সুখেই আছেন।
প্রিয় দেশবাসী;
আপনারা কেমন আছেন?

২.১০.৮০


ফেরীঅলা

কষ্ট নেবে কষ্ট
হরেক রকম কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট !

লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট
পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট,
আলোর মাঝে কালোর কষ্ট
‘মালটি-কালার’ কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট ।

ঘরের কষ্ট পরেরর কষ্ট পাখি এবং পাতার কষ্ট
দাড়ির কষ্ট
চোখের বুকের নখের কষ্ট,
একটি মানুষ খুব নীরবে নষ্ট হবার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট ।

প্রেমের কষ্ট ঘৃণার কষ্ট নদী এবং নারীর কষ্ট
অনাদর ও অবহেলার তুমুল কষ্ট,
ভুল রমণী ভালোবাসার
ভুল নেতাদের জনসভার
হাইড্রোজনে দুইটি জোকার নষ্ট হবার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট ।

দিনের কষ্ট রাতের কষ্ট
পথের এবং পায়ের কষ্ট
অসাধারণ করুণ চারু কষ্ট ফেরীঅলার কষ্ট
কষ্ট নেবে কষ্ট ।

আর কে দেবে আমি ছাড়া
আসল শোভন কষ্ট,
কার পুড়েছে জন্ম থেকে কপাল এমন
আমার মত ক’জনের আর
সব হয়েছে নষ্ট,
আর কে দেবে আমার মতো হৃষ্টপুষ্ট কষ্ট ।


অমিমাংসিত সন্ধি

তোমাকে শুধু তোমাকে চাই, পাবো?
পাই বা না পাই এক জীবনে তোমার কাছেই যাবো।

ইচ্ছে হলে দেখতে দিও, দেখো
হাত বাড়িয়ে হাত চেয়েছি রাখতে দিও, রেখো

অপূণতায় নষ্টে-কষ্টে গেলো
এতোটা কাল, আজকে যদি মাতাল জোয়ার এলো
এসো দু’জন প্লাবিত হই প্রেমে
নিরাভরণ সখ্য হবে যুগল-স্নানে নেমে।

থাকবো ব্যাকুল শর্তবিহীন নত
পরস্পরের বুকের কাছে মুগ্ধ অভিভূত।

১০.৩.৮২

Me

Me

About this blog

Hello

This is Fahmida. You may imagine me as a five feet white ball. Completed MBA in Management . ভাললাগে গ্রাফিক্সের টুকিটাকি। শখ ছিল ফটোগ্রাফার হবো কিংবা সাংবাদিক। হইনি কিছুই। পেশায় ব্যাংকার। জন্ম উত্তর বঙ্গে। বসবাস দক্ষিণে। মাঝে মাঝে এক আধটু প্যাঁচাই। যদিও আমার লেখালেখির হাতেখড়ি আপ্র (http://forum.amaderprojukti.com/memberlist.php?mode=viewprofile&u=1094) থেকে তারপরও মাঝে মাঝে প্রথম আলো ব্লগেও মাঝেমাঝে ঢুঁ মারি। নিক আঁধার http://prothom-aloblog.com/users/base/adhar/p1 । আজকাল সচলদের অতিথি হতে ভাল লাগে। নিক অমাবস্যা। ইদানীং টিউরোটিয়াল বিডি'তে লেখার চেষ্টা করছি। গান শোনা, কবিতা পড়তে ভালবাসি। ভালবাসি ব্লাক কফি আর সিলেটের চা-পাতা । এক কথায় Im busy for nothing :)


লাইসেন্স:Licence
by-nc-nd (Creative Commons)

My Blog List